নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ এপ্রিল, ২০১৯

রাজনীতিতে নতুন মঞ্চ

আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থি নেতারা। ‘জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ স্লোগানের একটি মঞ্চের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের ঘোষণা আসে যা তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রাথমিক পদক্ষেপ।

গতকাল শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে দলটির বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

মঞ্জু বলেন, আমরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করব। আলোচনা, পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে আমরা সংগঠনের নাম, কাঠামো, কর্মপদ্ধতি ঠিক করব। আজ থেকে আমাদের কাজ শুরু হলো। পূর্ণাঙ্গ দল গঠনে পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব কমিটি তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। আপাতত এই উদ্যোগ সমন্বয়কের দায়িত্ব এই নাখান্দাকে দেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন দল নিয়ে সক্রিয় হওয়ার আশাও প্রকাশ করেন মঞ্জু। তিনি বলেন, আমরা যত তাড়াতাড়ি পারি যথা শিগগিরই আসব।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মঞ্জু এক সময় চট্টগ্রাম কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরেরও সভাপতি ছিলেন। গত বছর বহিষ্কৃত হওয়ার আগে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ছিলেন তিনি। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর চাপে পড়া জামায়াত তাদের শীর্ষনেতাদের দণ্ডিত হয়ে ফাঁসিতে ঝোলার পর কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এর মধ্যে একটি অংশ দলে সংস্কারের দাবি তোলে।

কয়েক মাস আগে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রাজ্জাক একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়ে জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা দিলে সংস্কারপন্থিরা আরো জোর পায়। তখনই রাজ্জাকের মতো মত প্রকাশের জন্য দল থেকে বহিষ্কৃত হন মঞ্জু; তারপর তিনি বিকল্প দল গঠনের উদ্যোগ নেন যা শনিবার প্রকাশ্যে আনলেন তিনি। তবে তিনি দাবি করেন নতুন দল গঠনের এই উদ্যোগের সঙ্গে বিদেশে থাকা রাজ্জাকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনের পর জামায়াতের নীতিনির্ধারণী ফোরামে স্থান পাওয়া মঞ্জু বলেছেন, তারা ধর্মভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করবেন না। আমরা কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছি না। আমরা যে রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছি, তা হবে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য।

জামায়াতসহ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজেদের নতুন দলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন তিনি। মঞ্জু বলেন, তাদের এই উদ্যোগের পেছনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো মদদ নেই। বাংলাদেশ এখন ‘অধিকারহীন, অনিরাপদ ও স্বৈরতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

যুদ্ধাপরাধের চলমান বিচার প্রশ্নে মঞ্জু বলেছেন, তারা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে এই বিচার নিষ্পত্তির দাবি জানাচ্ছেন। নির্দিষ্ট ১৯টি বিষয়ে একমত হয়ে তারা সবাই এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন জানিয়ে মঞ্জু বলেন, তারা নির্দিষ্ট আদর্শভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করছেন না, জনগণের আকাঙ্ক্ষাভিত্তিক দল গঠন করবেন। এই রাজনৈতিক দল হবে ইতিবাচক বাংলাদেশ গড়ার নতুন কার্যক্রম।

মঞ্জুর উদ্যোগের সঙ্গে শামিল হওয়ার কথা জানিয়ে তাজুল দাবি করেন, তিনি আগে জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। পেশাগত কারণে তিনি জামায়াত নেতাদের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছিলেন।

বিজয় একাত্তর হোটেলে এই সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জুর পাশে তাজুল ছাড়াও ছিলেন অধ্যাপক আবদুল হক, গোলাম ফারুক, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা নূর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, মাওলানা আবদুল কাদের, নাজমুল হুদা অপু, মো. সালাউদ্দিন, ব্যারিস্টার জোবায়ের আহমেদ ভূইয়া, আবদুল হক প্রমুখ।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী নাজিমউদ্দিন আল আজাদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়র অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীও এই অনুষ্ঠানে ছিলেন।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজনীতি,জামায়াত ইসলামী,সংস্কারপন্থি নেতা,মজিবুর রহমান মঞ্জু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close