বদরুল আলম মজুমদার

  ০২ ডিসেম্বর, ২০১৮

শরিকদের ৬০টির বেশি আসন দেবে না বিএনপি

বিএনপির নেতৃত্বধীন ২৩ দলীয় জোট এবং ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর নেতাদের সর্বোচ্চ ৬০টির মতো আসন ছাড় দিতে চায় বিএনপি। কিন্তু জোটভুক্ত দলগুলোর দাবি আরো অনেক বেশি আসন। জোটের প্রধান শরিক জামায়াতকে এরই মধ্যে ২৫টির মতো আসনে ছাড় দিয়েছে। কিন্তু দলটি আরো অন্তত দুটি আসন চাচ্ছে বিএনপির কাছে। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের তিনটি দলকে সর্বোচ্চ ১৬-১৮টি আসন ছাড়ার আলোচনা চললেও দলগুলোর দাবি বিএনপির কাছে অবাস্তব ঠেকছে। এ অবস্থায় শরিকদের চাওয়া মিঠাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম দলের নেতারা। সংশ্লিষ্ট দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চেয়ে আসন বণ্টন নিয়ে সংকট বেশি নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের চারটি নিবন্ধিত শরিক গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও জেএসডিকে সর্বোচ্চ ১৮টি আসন ছাড়তে রাজি বিএনপি। তাদের প্রত্যেকটি দলের জন্য তিন থেকে চারটি আসন খালিও রেখেছে বিএনপি। কিন্তু এই চার দলের দাবি আরো অনেক বেশি। গণফোরাম, জাসদ, নাগরিক ঐক্য ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সব মিলিয়ে ৫০টির মতো আসন দাবি করছে। বিএনপি নেতারা তাদের এমন দাবিকে সামর্থ্যরে অনেক বেশি বলে মনে করছেন। জয়ী হওয়ার মতো ১০ থেকে ১২ জনের বেশি প্রার্থী নেই। তারপরও ১৬টি আসন ছাড়তে রাজি বিএনপি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ২৫টি আসন ছাড় পাওয়া জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, রংপুর-৫ আসনে তাদের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র রিটানিং কর্মকর্তা রিসিভ না করায় আসন সংখ্যা একটি কমেছে। সেটি পুষিয়ে আনতে নিতে আরো দুটি আসনে শক্ত অবস্থান নিয়েছে জামায়াত।

এ প্রসঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর এ বিষয়ে তারা কেন্দ্রীয়ভাবে বৈঠক করে পরে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা ও দর-কষাকষি করবেন। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা আরো কিছু আসন চাইব। এরই মধ্যে রংপুর-৫ আসনের জন্য জামায়াতের প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানীর মনোনয়নপত্র স্থানীয় নির্বাচন কমিশন জমা না নেওয়ায় একটি আসন কমে গেছে বলেও জানান তিনি।

এ ছাড়া এলডিপি ১৫টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও দলটি নেতারা অন্তত ১০টি আসনে নির্বাচন করার কথা বিএনপিকে বলেছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এলডিপিকে এখন পর্যন্ত ৪টি আসনের সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার এলডিপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের ১০টি আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। এলডিপির ওই দাবির সত্যতা বিএনপি নিশ্চিত করেনি।

দলীয় সূত্র জানায়, গণফোরামকে সর্বোচ্চ আটটি আসন দিতে চায় বিএনপি। কিন্তু দলটি ৫৭ আসনে ৬১ জন প্রার্থী দিয়েছে। ২০০৮ সালে ৪৫ আসনে প্রার্থী দিয়ে ৬২ হাজার ভোট পাওয়া গণফোরামকে ছয় থেকে আটটির বেশি আসন ছাড়তে রাজি নয় বিএনপি। সেবার দলটির একটি বাদে সব আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, তাদের প্রত্যাশা ৩০ থেকে ৪০টি আসনে জোটের মনোনয়ন। কয়টি পাবেন তা নির্ধারিত হবে আলোচনায়।

আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাসদকে সর্বোচ্চ ৩টি আসনে ছাড় দিতে চায় বিএনপি। কিন্তু ৫০ আসনে ৫১ জন প্রার্থী দিয়েছে দলটি। ৩০ আসন পেতে দরকষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪৫ আসনে প্রার্থী দিয়ে সাকুল্যে ৩৭ হাজার ভোট পাওয়া জেএসডি। সেই নির্বাচনে একটি বাদে বাকি সব আসনে জামানত হারিয়েছিল দলটি।

কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকেও ৩টির বেশি আসন দিতে চায় না বিএনপি। দলটি ২০ আসন চেয়ে ৩১ আসনে ৩৭ জন প্রার্থী দিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সর্বসাকুল্যে ১ লাখ ২ হাজার ভোট পেয়েছিল সারা দেশে। জামানত হারিয়েছিল সব আসনে।

বিএনপি জোটের জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম দুটি আসন পেতে পারে। দলটি ১৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসকেও ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে যশোর-৫ আসনটি; যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত বিএনপি জানায়নি। বিজেপি পেতে পারে একটি আসন। বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থকে ভোলা-১ আসনটি নিশ্চিত ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দলটির পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জ-৭ আসনে শাহজাহান সিরাজ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে ফায়জুল হকের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপি এ ব্যাপারে ছাড় দেবে না বলে জানিয়েছে। অবশ্য ভোলার পাশাপাশি ঢাকা-১৭ আসনটিও পার্থের জন্য বিজেপি চাচ্ছে। তবে আসনটি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) মুহাম্মদ ইবরাহিমকে চট্টগ্রাম-৫ এবং লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে পিরোজপুর-২ আসনে মনোনয়ন মোটামুটি নিশ্চিত করা হয়েছে।

এদিকে আসন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই ৪৯ আসনে প্রার্থী দেওয়া মুসলিম লীগ ও খেলাফত মজলিসের। ২০ দলীয় জোটের এই শরিকরা ক্ষুব্ধ। নেতাদের দাবি, তারা প্রলোভন উপেক্ষা করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করেছেন। মামলা, হামলা সহ্য করে তারা সাত বছর ধরে বিএনপির জোটে আছেন। কিন্তু বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট শরিকদের যতটা গুরুত্ব দিচ্ছে তাদের ততটাই অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। খেলাফত মজলিশের একজন নেতা বলেছেন, আসন না পেলে সিলেট বিভাগের কয়েকটি আসনে তাদের প্রার্থী থাকবে। প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের দল জাগপাকে একটি আসন ছেড়ে দেওয়ার আলোচনা চলছে বিএনপিতে। জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রথমে ১৬টি আসন দাবি করলেও পরে পাঁচটির জন্য বিএনপির কাছ থেকে চিঠি নিয়ে মনোনয়নপত্র নিয়ে জমা দেয়। তবে জানা যায়, পাঁচটিতে মনোনয়ন দলটিকে শেষ পর্যন্ত দেওয়া হবে না। কারণ দলটির প্রবীণ নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার মনোনয়ন চাচ্ছেন পিরোজপুর-১ আসন থেকে, যেখানে এরই মধ্যে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদীর মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া চাঁদপুর-৩ আসন থেকে দলটির নেতা এস এম এম আলমের মনোনয়ন চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই আসনে বিএনপির শক্তিশালী নেতা শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। এর বাইরে ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরীর জন্য গাইবান্ধা-৩, আহসান হাবিব লিঙ্কনের জন্য কুষ্টিয়া-২ এবং আলহাজ মো. সেলিম মাস্টারের জন্য বাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসন দাবি করছে দলটি। কিন্তু কোনো একটি আসন এখনো নিশ্চিত হয়নি। খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে ১৭টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হলেও এখনো একটি আসনেও মনোনয়ন নিশ্চিত করেনি বিএনপি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,শরিক,আসন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close