বদরুল আলম মজুমদার

  ০২ নভেম্বর, ২০১৮

হঠাৎ প্রচারণায় নাজমা : কীভাবে দেখছে উত্তরা আ.লীগ

রাজধানীর উত্তরার পরিচিত ফেস্টুন-ব্যানারের ভিড়ে নতুন একটি ফেস্টুন সম্প্রতি নজর কেড়েছে। যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী নাজমা আক্তার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসন থেকে এমপি নির্বাচন করতে চান। এলাকাবাসীর সমর্থন কামনা করে সাটানো ফেস্টুনগুলো গত দুদিন থেকেই সোভা পাচ্ছে উত্তরার প্রধান প্রধান সড়কে। হঠাৎ করে তার এমন আগমনে বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। এতদিন গণমাধ্যমে তার নমিনেশন নেওয়ার বিষয়টি দেখা গেলেও এবার স্বশরীরে মাঠে নামছেন এ যুবনেত্রী। আগামীকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি প্রচারণায় নামছেন। এজন্য সহযোগিতা কামনা করে সবাইকে ফোন দেওয়ার কথাও স্বীকার করেন তিনি।

তবে হঠাৎ করে আগমনের বিষয়টিতে নাজমা আক্তার আপত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে উত্তরায় বসবাস করি। এলাকার রাজনীতিতে প্রকাশ্যে না থাকলেও গতবারও আমি এ আসনে নমিনেশন প্রত্যাশা করেছিলাম। আমাদের নেত্রী সাহারা আপাকে নমিনেশন দেওয়ায় তার পক্ষে কাজ করেছি। এবার তার বয়স হয়েছে, নানা কারণে উত্তরার রাজনীতির ব্যাপক পরিবর্তনও হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা জুনিয়ররা মাঠে নামছি। এখন দল যাকে দেয় তার পক্ষেই কাজ করবো। তবে আমার আগমনের খবরে সাহারা আপা খামোখাই রিএক্ট করছেন। এটা আসলে ঠিক নয়। সব কিছুরই একটা সীমাবদ্ধতা আছে। উনি আছেন বলে আমরা জুনিয়ররা সামনে আসতে পারবো না তাতো হয় না। দীর্ঘ ১৮ বছর থেকে যুব মহিলা লীগের নেতৃত্বে আছি। সংরক্ষিত আসনে এমপিও হয়েছি। এবার জনগনের সরাসরি ভোটে এমপি হতে চাই। এতে এলাকার সকলের সহযোগিতা পাবো বলে আশা করছি।

তবে তার এমন আগমনকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন উত্তরার অপর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। দক্ষিণ খান ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, উনি আসছেন ভালো কথা, দল উনাকে দিলে আমরা উনার পক্ষেই কাজ করবো। আর আমাকে দিলে উনিও আমার পক্ষে কাজ করবেন বলে আমি মনে করি। কারণ, অমরা সবাই নৌকার লোক। প্রার্থী নয় নৌকাই আমাদের ঠিকানা। কে আসলো না আসলো এটা বড় কথা নয়।

তবে উত্তরার যুবলীগের অন্যতম নেতা মামুন সরকার বলেন, জুনিয়র হিসেবে উনি আসছেন ভালো কথা। এখন দল যাকে দেয় তার পক্ষেই থাকবে সবার অবস্থান। উনি আসাতে সাহারা খাতুন চ্যালেঞ্জে পড়েছেন কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটেই না। নমিনেশ সাহারা আপাই পাবেন।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খান মনে করেন, নমিনেশন সবাই চাইতে পারে। এটা তাদের অধিকার। আমরা মনে করি, এ আসনে সাহারা আপা আবারও নমিনেশন পাবেন। এটা শতভাগ নিশ্চিত। তাছাড়া যার কথা বলছেন তিনি এলাকায় ভোট পাবেন কি? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন কাউন্সিলর আফসার। নাজমা আক্তার যদি নমিনেশন পায় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর লোক হিসেবে নৌকার পক্ষেই কাজ করবেন বলে জানান তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সাহারা খাতুনই নমিনেশন পাবেন বলে আশা তাদের। অন্য কোনো প্রার্থী মাঠে আসাতে সাহারার মনোনয়ন কোনোভাবেই চ্যালেঞ্জে নাই। তিনি যোগ করেন, মনে রাখতে হবে সাহারা খাতুন দলের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য এবং দলের ত্যাগী নেতা।

তবে নাজমার আগমনকে স্বাগত জানিয়েছেন দলের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী হাবিব হাসান। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ নেতা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নাজমা আপা এ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান এটা আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। এখন শুনছি ওনার নামে পোস্টার-ফেস্টুন হয়েছে। মাঠে নামছেন বলে জানলাম। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। দলে যে কেউ নমিনেশন চাইতে পারে। নমিনেশন চাইলেই উনি আমর শুত্রু না। উনি আসাতে নিজে অবস্থান কেমন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি উনার কাজ করবে আমি আমার কাজ করবো। মাঠে কাজের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করে চলেছি। ইনশাআল্লাহ দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

তবে নাজমা আক্তারের এমন আগমনের বিষয়ে নাম প্রকাশ করে অনেকেই বক্তব্য দিতে রাজি হচ্ছেন না। তারা মনে করছেন, সাহারা খাতুনকে সামনে রেখে অন্য কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলে বাড়তি ঝামেলা নিতে চান না তারা। তবে উত্তরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা পরিচয় গোপন করে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সাহারা আপার বয়স হয়েছে, এ কারণে অনেকে মনে করছেন তিনি নমিনেশন এবার পাবেন না। তাই মাঠে অনেক প্রার্থী আসছে। তবে একটা বিষয় উল্লেখ করার মতো, অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সবাই সাহারা খাতুনের বিপক্ষেই কাজ করছেন। আবার নমিনেশন প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারটিও সাহারা খাতুনের আয়ত্বের বাইরে চলে গেছে। এ অবস্থায় সবাইকে এক করে কীভাবে সাহারা সামনে এগিয়ে যাবেন—তার উত্তর খুজে পাচ্ছেন না তার পক্ষের লোকজন। তারা প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্টতাকে সাহারার একমাত্র পুজি মনে করছেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নাজমা আক্তার,প্রচারণা,উত্তরা আ.লীগ,ঢাকা-১৮ আসন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close