reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ আগস্ট, ২০১৮

কারাগারে খালেদা জিয়ার ৬ মাস

কারাগারে ছয় মাস অতিবাহিত করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে দিন যাপন করছেন তিনি।

রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন। ওইদিন থেকেই পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন তিনি। মুক্তির দাবিতে তার দল নিয়মতান্ত্রিকভাবে নানা আন্দোলন করে আসছে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৩৬টি মামলার মধ্যে তিনটি মামলার এখনো জামিন হয়নি। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তার জামিন না হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা।

খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন যাচ্ছে। তবে তার অনুপস্থিতিতেও জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দলটির ঐক্যে কোনো ফাটল না ধরলেও তার মুক্তি আন্দোলন ততটা ত্বরান্বিত করতে পারেননি দল ও জোটের নেতাকর্মীরা। নিয়মিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিলেও সরকারের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি তারা।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দাবি, নির্জন কারাগারে ভালো নেই খালেদা জিয়া। নানা রোগে-শোকে ভুগছেন তিনি। ঈদুল ফিতর কারাগারে কেটেছে আর কিছুদিন পরেই ঈদুল আজহা। এর মধ্যে বাকি মামলায় জামিন না পেলে কারাগারেই ঈদ করতে হবে বিএনপির চেয়ারপারসনকে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি, আগামী নির্বাচনসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নেতাদের পাশাপাশি জোট নেতারাও জোট প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঈদুল আজহার আগে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি প্রয়োজনে ঈদের পর কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনাও কথাও উঠে এসেছে জোটের বৈঠকে।

বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া তাদের দল ও জোট অনেকটাই অভিভাবকহীন। প্রিয় মানুষকে দূরে রেখে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। তবে নেতাকর্মীরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী দিনে সংঘবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন এবং নির্বাচনে অংশ নেবেন।

বিএনপির চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে তার গুলশান-২ এর রাজনৈতিক কার্যালয় অবশ্য চলছে স্বাভাবিকভাবেই। নিচতলায় নিয়মিত অফিস করছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কনফারেন্স রুমেও প্রায় নিয়মিত বৈঠক, সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে। এমনকি দলীয় কাজে কার্যালয়ে আসা নেতাকর্মীরা এই কক্ষে বসেই বিশ্রাম নেন বা সাক্ষাৎদাতার জন্যও অপেক্ষা করেন। দ্বিতীয় তলায় বৈঠক কক্ষে জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠকগুলো হয়। যদিও সিঁড়ি বেয়ে ওঠে বামপাশের কক্ষটি তালাবদ্ধ রয়েছে। এই কক্ষেই অফিস করতেন খালেদা জিয়া।

চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘ম্যাডাম গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এই কক্ষটি খোলা হয়নি। দলীয় প্রধানের অনুপস্থিতিতে কার্যালয়ের পুরনো উচ্ছাসটি আ‌গের ম‌তো নেই।’

আশাবাদ ব্যক্ত করে শায়রুল কবির খান আরও বলেন, ‘দ্রুতই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। আবার রাজনৈতিকভাবে ব্যস্ত হবেন তিনি। কার্যালয় হবে মুখরিত।’

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে গুলশান-২ এ ৭৯ নাম্বার রোডে বাসভবন ‘ফিরোজা’ নীরব, সুনসান। তার নিরাপত্তারক্ষী সিএসএফের কর্মীরা ছাড়া বাড়িটিতে আর কারও আনাগোনা নেই। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো উপস্থিতিও নেই।

দলের পক্ষ থেকে বার বার খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসহ তার নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানানো হলেও কর্ণপাত করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও আদালত।

সর্বশেষ খালেদা জিয়া অসুস্থ হওয়ায় গত ৭ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে দলের পক্ষ থেকে নিজ খরচে বেসরকারি স্পেশালাইজড ইউনাইটেড হাসপাতালে তার চিকিৎসা করা‌নোর দা‌বি মানা হয়‌নি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। অথচ কারাকর্তৃপক্ষ ও সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন একের পর এক দিন পিছিয়ে নামঞ্জুর করাচ্ছে।

আগামী নির্বাচন ফের একতরফা করতে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলায় দেশের জনপ্রিয় নেত্রীকে (খালেদা জিয়া) একটি ভিত্তিহীন মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। কারাগারে তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও সুচিকিৎসা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না।’

এদিকে খালেদা জিয়ার মামলার সর্বশেষ অবস্থা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া সংবাদমাধ্যমকে জানান, ৩৬টি মামলার মধ্যে ৩৩টিতে জামিনে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কুমিল্লা, নড়াইল ও ঢাকার তিনটি মামলার জামিন বাকি আছে।

খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, বেগম খালেদা জিয়ার আরও আগেই কারামুক্তির কথা ছিল। কারণ, গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে জামিন দিলেও সরকার খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘ করেন, যাতে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সেই জন্য এমন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কারাগারে সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা পড়েন খালেদা জিয়া। ইবাদত-বন্দেগি ও বই পড়ে তার বেশিরভাগ সময় কাটছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিংবা নির্ভরযোগ্য অভিভাবক মানুষটিকে ছাড়া প‌রিবার যেভাবে চলে, বিএনপিও তেমন আছে, চলছে। কারণ তিনিই আমাদের পরিবারের প্রধান। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা ও নেতাকর্মীদের স্নেহ, ভালোবাসা ও সবকিছু মিলিয়ে তিনি অবিস্মরণীয় মানুষ।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জোট প্রধান খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতির প্রভাব পড়েছে ২০ দলীয় জোটেও। নানা ধরনের শঙ্কা, ভাঙনের সঙ্কট ঘুরে বেড়িয়েছে। এরপর ঐক্যে ফাটল ধরেনি। তবে এখনো জোটের ব্যানারে কোনো কর্মসূচি পালন করা হয়নি। বিএনপির ব্যানারেই জোট নেতারা যে যার মতো শরীক হয়েছেন।

তবে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে আরও গতি বাড়ানো প্রয়োজন। সর্বশেষ ৩ ও ৪ আগস্ট ঢাকায় অনুষ্ঠিত তৃণমূলের সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনায় ছিল। আগামীতে আরও কার্যকর কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাবের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর বিএনপিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির বাইরে অন্য উদ্দেশ্য না রাখার পরামর্শও এসেছে। এক্ষেত্রে লন্ডনে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশের অপেক্ষা করছেন দলীয় নীতিনির্ধারকরা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া এ নিয়ে পাঁচবার কারাবন্দি হয়েছেন। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেবার পর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর গ্রেফতার হন। এরপর ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেফতার হন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে দুর্নীতির অভিযোগে পুত্রসহ গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। সর্বশেষ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জেলে গেছেন তিনি।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কারাগার,খালেদা জিয়া,৬ মাস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close