প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১০ জুলাই, ২০১৮

ভোটের উত্তাপ ৩ সিটিতে

*সিলেটে বিদ্রোহী ও জামায়াত নিয়ে টেনশনে বিএনপি *শেষ দিনে সরে দাঁড়ালেন ১৮ কাউন্সিলর প্রার্থী

রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরুর আগেই ছড়াচ্ছে উত্তাপ। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে। চলছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার তীব্র সমালোচনাও।

এদিকে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে গতকাল সোমবার তিন সিটিতে ১৮ কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আজ মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দ হবে। এরপর থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা। তবে প্রচার-প্রচারণা শুরুর আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব অভিযোগ তদন্ত করে দেখছে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠেয় এই তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। ভোটারদের মধ্যেও বিরাজ করছে ভিন্ন আমেজ। তবে সিলেটে জোটসঙ্গী জামায়াত ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে বাগে আনতে পারেনি বিএনপি। ফলে সেখানে আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের পাশাপাশি এই নির্বাচনে দৃষ্টি থাকবে বিএনপি আর জামায়াতের লড়াই নিয়ে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাসিক নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী ওয়াসিউর রহমান দোলন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে আটজন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন নির্বাচনী মাঠে পাঁচ মেয়র প্রার্থীসহ মোট ২১৭ জন প্রার্থী লড়াই করবেন।

এদিকে, বিধি লঙ্ঘন করে প্রচার কার্যক্রমে একধাপ এগিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা। বিধি লঙ্ঘন করে প্রথম দফায় প্রচারপত্র ছাপানোর কাজ ইতোমধ্যেই শেষ করেছেন নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপির ধানের শীষ প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এমনকি, বৃষ্টিতে ভিজে প্রচারপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তারা পোস্টার লেমিনেটিং করছেন।

দেখা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নওশের আলীর মালিকানাধীন নিউমার্কেট গৌরহাঙ্গা এলাকার বিকল্প অফসেট প্রেসে ছাপা হচ্ছে নৌকার পোস্টার ও হ্যান্ডবিল। সেখানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের নৌকা প্রতীকের দেড় লাখ পোস্টার, এক লাখ লিফলেট এবং ১৫ লাখ হ্যান্ডবিল ছাপার কাজ এখন প্রায় শেষপর্যায়ে। এ ছাড়া বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ৬০ হাজার পোস্টার, ১০ লাখ লিফলেট ও ৩ লাখ হ্যান্ডবিল ছাপছে নগর ভবনসংলগ্ন গৌরহাঙ্গা গ্রেটাররোড এলাকার প্রভাত প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাকলিকেশন্সে।

নির্বাচনী বিধি মোতাবেক একজন মেয়র প্রার্থী সর্বসাকুল্যে ১৫ লাখ টাকা নির্বাচনী কাজে ব্যয় করতে পারবেন বলে প্রতিদিনের সংবাদকে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটানিঅং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান। আর নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল নগরীর দুইজন প্রেস কর্মচারী ও একজন ডিজিটাল প্রেস মালিক প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, এখন পর্যন্ত মেয়র পদের দুই প্রার্থীর যে অর্ডার আছে তাতে পোস্টার, হ্যান্ডবিল ছাপানো ও লেমেনেটিং এবং ডিজিটাল ব্যানার ও বাইন্ডিং কাজে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। প্রতীক বরাদ্দের আগে মেয়র প্রার্থীদের প্রচারপত্রের পেছনেই এমন ব্যয় হওয়ায় বিধি মোতাবেক তারা কীভাবে নির্বাচন কাজ শেষ করবেন, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী (কাঁঠাল) মো. হাবিবুর রহমান গতকাল প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনারদের কাছে অনেকবার আচরণবিধি অমান্য করার বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, নেবে বলেও মনে হয় না। কারণ নির্বাচন কমিশনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণেই বড় দুই দলের প্রার্থীরা একের পর এক বিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। যে কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন হাবিবুর রহমান।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, প্রচারপত্র ছাপানো হলেও প্রতীক বরাদ্দের আগে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে না।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো কর্মকান্ড বিএনপি প্রার্থী বুলবুল করেননি। বিধি মেনেই প্রচারপত্র ছাপানো ও প্রচারকাজ পরিচালনা করা হবে। আমরা এগুলোর বিষয়ে নয়, চিন্তিত সরকারি দলের প্রার্থীর নিয়োগকৃত ক্যাডার ও প্রশাসনের হাত থেকে কীভাবে ভোট ডাকাতি ঠেকাব, তা নিয়ে।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী আঞ্চলিক সমম্বয়কারী সুব্রত পাল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নির্ধারিত ব্যয়সীমার মধ্যে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালিত হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এ ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হলে কালোটাকার বিস্তার ঘটবে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সব প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। আচরণবিধি ভেঙে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে কমিশন।

বরিশাল প্রতিনিধি জানান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মুজিবুর রহমানের হাতে প্রত্যাহারের আবেদন তুলে দেন খেলাফত মজলিশের মেয়র প্রার্থী এ কে এম মাহবুব আলম। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদে আটজন সরে দাঁড়িয়েছেন। বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান জানান, লিখিত আবেদনে ব্যক্তিগত কারণে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ করেছেন এ কে এম মাহবুব আলম। অন্যদিকে বেলা ১১টা পর্যন্ত একজন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ডের সাতজন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোননপত্র প্রত্যাহার করেছেন।

এদিকে, খেলাফত মজলিশের সঙ্গে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের ঐক্য হলেও ভোটে জয় নিয়ে শঙ্কা আছে তার। তবে জনপ্রিয়তার ঝড় তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাদিক আবদুল্লাহ। জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিশের স্থানীয় নেতারা আলোচনায় বসে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্ধারিত দিনের আগেই বিষয়টি ফয়সালা করে ফেলেন। এরপরই খেলাফত মজলিসের মেয়র প্রার্থী এ কে এম মাহবুবুর রহমান তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। তবে সুষ্ঠু ভোট হবে কি না, এটা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সরোয়ার। যদিও আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন, মাঝপথে সরে দাঁড়াবেন না। গতকাল বরিশাল প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

সরোয়ার বলেন, ‘এখানে প্রধানমন্ত্রীর স্বজন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বীর বাবা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী মর্যাদার ব্যক্তি। তাছাড়া খুলনা ও গাজীপুরে যে নির্বাচন হয়েছে তাতে শঙ্কা থাকাটাই স্বাভাবিক। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কী করে, সেই বিষয়টি নিয়ে আমি শঙ্কিত।’

অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তার কর্মদক্ষতা ও গুণে পুরো নগরবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয় ব্যক্তি। তরুণ এই নেতার জনদরদী সব চিন্তা চেতনার প্রবর্তন ঘটেছে সম্প্রতি বরিশাল ইয়ূথ সোসাইটির নির্মিত ‘আমরাই গড়বো আগামীর বরিশাল’ শিরোনামে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক ফ্যানপেজে প্রকাশিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারির মাধ্যমে। ওই ভিডিও ডকুমেন্টারির শুরুতেই বরিশালের প্রধান সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো চিত্রায়িত করা হয়। ভিডিও ডকুমেন্টারির শেষ দিকে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আগামীর সমৃদ্ধ বরিশাল গড়ে তুলতে নগরবাসীকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান করেছেন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউব ও ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সর্বত্র ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সময়ের সঙ্গে ভিডিওটির ভিউয়ার্স ঝড়ের বেগে বেড়ে চলার পাশাপাশি অসংখ্য দর্শক সেটি উৎসাহের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।

সিলেট প্রতিনিধি জানান, সিটি নির্বাচন উপলক্ষে দুই রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনে নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল হয়ে উঠেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন চারজন কাউন্সিলর প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন। এর আগে গত রোববার আরো দুইজন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এরা হলেন ৮নং ওয়ার্ডের সিরাজ খান, ১৪নং ওয়ার্ডের সিরাজুল ইসলাম শামীম, ২০নং ওয়ার্ডের মিঠু তালুকদার, ২৫নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আফজাল উদ্দিন, ২১নং ওয়ার্ডের এনামুল হক ও ২৬নং ওয়ার্ডের খসরু আহমদ। মেয়র পদে রয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী, ‘স্বতন্ত্র’ হিসেবে জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএনপির বিদ্রোহী বদরুজ্জামান সেলিম, সিপিবি-বাসদের আবু জাফর ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মোয়াজ্জেম হোসেন ও স্বতন্ত্র এহসানুল হক তাহের।

এদিকে, নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে ফের অভিযোগ করেছেন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল দুপুরে সিলেটে নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে সিসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আলিমুজ্জামানের কাছে অভিযোগ করেন বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী।

আলিমুজ্জামান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী মৌখিকভাবে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
৩ সিটি,ভোট,সিটি নির্বাচন,রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist