গাজী শাহনেওয়াজ
গাজীপুর সিটি নির্বাচন
প্রার্থীদের প্রচার শেষ আজ
নিরাপত্তায় সাড়ে ১০ হাজার ফোর্স
আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটিতে ভোট। ভোটের ৩৬ ঘণ্টা আগেই প্রার্থীদের প্রচারণা শেষ হয়; এ হিসেবে আজ রোববার মধ্যরাতে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আগামীকাল সোমবার গাজীপুর রিটার্র্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিতরণ শুরু হবে ভোটের সামগ্রী। এসব সামগ্রী বুঝে নেবেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তরা।
এদিকে, সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে আজ সকাল থেকে মাঠে নেমেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান—র্যাব এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবি। তিন স্তরের নিরাপত্তায় থাকছে সাড়ে ১০ হাজারের মতো বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য। চার দিনের জন্য এসব নিরাপত্তা বাহিনী (ভোটের আগে দুই দিন পরে একদিন) মাঠে থাকবে। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা তল্লাশি। কমিশনের অনুমোদিত স্টিকার ছাড়া মোটরসাইকেল চলাচলেও আরোপ হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আর ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকবে নির্বাচনী এলাকায়। ভোটার ছাড়া বহিরাগতদের এলাকা ছাড়তে আগেই পরিপত্র জারি করেছে কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ইতোমধ্যে নিরাপত্তারক্ষীদের উদ্দেশে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ভোটে গাফিলতি পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সব আলোচনা ছাপিয়ে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। সেই দিক বিবেচনায় বলা যায়, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনে নৌকা-ধানের শীষের লড়াই হবে। আর প্রধান দুই দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে শঙ্কাও কম নয়।
নির্বাচনে প্রস্তুতির বিষয়ে কমিশন সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোববার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামছেন। আশা করছি, কুমিল্লা, রংপুর ও খুলনা সিটির মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হবে। আর ভোটের দিন কমিশন ভোটের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে, যোগ করেন কমিশন সচিব।
আর গাজীপুর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মন্ডল বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। এখনো শাস্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। আশা করছি, বাকি দুইদিন নির্বাচনের পরিবেশ একই থাকবে। তিনি বলেন, নিরাপত্তা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাসহ প্রায় ২০ হাজার নির্বাচন কর্মকর্তা এই নির্বাচনে যুক্ত আছে। তিন স্তরের নিরাপত্তায় থাকবে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ।
প্রচারণা : গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রচারণা আজ রোববার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। সিটি নির্বাচনের আচরণ বিধি অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ শুরুর ৩৬ ঘণ্টা আগে এ প্রচারণা শেষ হয়। তাই সিটির মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সির প্রার্থীরা আজ মধ্যরাতের পর আর কোনো প্রচারণা চালাতে পারবেন না। আগামী ২৬ জুন ভোট; এর আগের দিন নিজস্ব বলয়ে নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রার্থীদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকবে।
১০২৪৪ আইনশৃঙ্খলার সদস্য : সিটি নির্বাচনে সাড়ে ১০ হাজারের মতো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বাইরে এসব সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে কেন্দ্র পাহারায় থাকবে পুলিশ, আনসার ও আর্মড পুলিশ ব্যাটানিয়ানের সমন্বয়ে কয়েক হাজার সদস্য। কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে ৩৪ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ৫৯ পেট্রল এবং পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে বেশ কয়েকটি টিম।
নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ৭৬ জন : প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলে তাৎক্ষণিক জরিমানা ও শাস্তির পাশাপাশি সামারি ট্রায়াল করে দন্ড দেবেন এসব ম্যাজিস্ট্রেট। এর মধ্যে ৫৭ ওয়ার্ডে ৫৭ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১৯ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।
৮৭০৮ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা : এ নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৮ হাজার ৭০৮ জন। এর মধ্যে প্রতি কেন্দ্রে ১ জন প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ৪২৫ জন, প্রতিটি কক্ষে ১ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ২৭৬১ জন এবং প্রতিটি কক্ষে দুইজন পোলিং অফিসার হিসেবে ৫৫২২ জন দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটার শনাক্ত এবং ব্যালট দিয়ে ভোট কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এসব কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক : ভোটের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট কার্যক্রমের গতি-প্রকৃতি, ভোটার, প্রার্থী-কর্মী সমর্থকদের গতিবিধি এবং সর্বোপরি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনসহ সব কিছু সাধারণ পোশাকে পর্যবেক্ষণ করবেন ইসির এই নীরব পর্যবেক্ষকরা। ভোটে অনিয়ম দেখলে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত এবং প্রয়োজনে কমিশনকে ঘটনার তথ্য সম্পর্কে জানাবেন তারা।
ছয় কেন্দ্রে ইভিএম ও সিসি ক্যামেরা : ভোটার সচেতন এবং শিক্ষিত ও শহরকেন্দ্রিক ২৪, ২৬ ও ২৮ নং ওয়ার্ডের ২টি করে কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে। যান্ত্রিক জ্ঞান-সম্পন্ন মানুষ যাতে বুঝে-শুনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য নগরীর ওই দুটি ওয়ার্ডকে বেছে নেওয়া হয়েছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিবেচনায় সিটির কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার সহায়তায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এসব প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য আইটি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হয়েছে।
তিন পদে ৩৪৭ প্রার্থী : গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ৩ পদে ৩৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৭ জন, কাউন্সিলর পদে ২৫৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে মেয়র প্রার্থীরা হলেন—আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের মো. জাহাঙ্গীর আলম, ২০ দলীয় জোট ও বিএনপি মনোনীত হাসান উদ্দিন সরকার, ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ।
ভোট কেন্দ্র, কক্ষ এবং ওয়ার্ডের সংখ্যা : সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড, ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড, ভোটকেন্দ্র ৪২৫টি এবং ভোটকক্ষ ২৭৬১টি।
১১৩৭৭৩৬জন ভোটার : গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন; যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন এবং মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১জন। ভোটার সংখ্যানুপাতে মহিলার চেয়ে পুরুষ ভোটার ২ হাজার ১৩৪ জন বেশি।
সাধারণ ছুটি : ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকবে। ছুটি ঘোষণায় কমিশন থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন। এমনকি পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের ওই দিন ছুটি দিতে শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পিডিএসও/হেলাল