বদরুল আলম মজুমদার

  ৩০ জানুয়ারি, ২০১৮

সরকারের ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আদালত বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাজা দিতে পারেন। ‘এই মামলায় সাজা হবে খালেদার’—এমন ধারণা সম্পর্কে বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকারের মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে সাজার কথাই বলছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য সাজা দেওয়া হতে পারে বলে বিএনপি নেতাদের দাবি। তাদের মতে, খালেদা জিয়ার এই মামলাসহ দলটির বহু সিনিয়র নেতার মামলাও দ্রুতই সচল করবে সরকার। লন্ডনে থাকা তারেক রহমানকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেও সরকার সক্রিয়। তার নামেও রয়েছে একাধিক মামলা। খালেদার সাজা ও মামলার ঘেরাটোপে ফেলে বিএনপিকে রাজপথে এনে আবারও শায়েস্তা করতে চায় সরকার। এমন মতও দিয়েছেন এই দলটি নেতারা।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে বিএনপি যাতে অংশ নিতে না পারে এজন্যই দলের চেয়ারপরসনকে সাজা দেওয়া হতে পারে। বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে দলীয় দুই শীর্ষ নেতাকে সাজার সব আয়োজন গুছিয়ে এনেছে সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরো একটি পাতানো নির্বাচনের জন্যই সরকার এমন আচরণ করছে। খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে বিএনপিকে ভাঙার কৌশলের কারণে এমনটা হতে পারে। এসবের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে আবারও এক তরফা একটি যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করা।

নেতারা বলছেন, সরকারের এসব কৌশলের বিষয়ে দলটির নেতারা সজাগ রয়েছেন। তাই কোনোভাবেই সরকারের পাতানো খেলায় পা দিতে রাজি নয় বিএনপি। পাল্টা কৌশলের অংশ হিসেবে বিএনপি এরই মধ্যে সিরিজি করণীয় নিয়ে কাজ শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের চূড়ান্ত কর্মকৌশল নির্ধারণে একাধিক বৈঠক করেছেন। তারই অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে তার। এসব বৈঠকে বিএনপি সরকারের উদ্দেশ সম্পর্কে কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগীদের বিস্তারিত অবহিত করতে চায়। বিএনপির ভাষায় দেশকে গণতন্ত্রহীন করে একদলীয় শাসন কায়েমের জন্যই এসব করা হচ্ছে। সরকার ধীরে ধীরে দেশবাসীর ওপর একদলীয় শাসন চাপিয়ে দিতে চায়। আর তাই অবাধ নির্বাচনের সুযোগ রহিত করতেই দেশের নেত্রীকে একটি ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দিতে আয়োজন চূড়ান্ত করেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণের বুঝতে বাকি নেই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দখল ও হরণের নীতি বাস্তবায়ন করতেই মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার নীলনকশা এঁটেছেন শেখ হাসিনা। রিজভী আরো বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) ১/১১ থেকে শিক্ষা নেননি। যদি নিতেন তাহলে তিনি রাজনীতির এই বিপজ্জনক খেলায় মেতে উঠতেন না। আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বেগম জিয়ার মামলা নিয়ে সরকার কোনো হীন পরিকল্পনা করে থাকলে শেখ হাসিনার সরকার নিজেদের পতন থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে না। এদেশের মানুষ মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা বাস্তবায়নকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে অনড়। এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীর মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। দলের বিভিন্ন স্তর থেকে রাজপথে আন্দোলনে নামার দাবিও উঠছে। তবে আন্দোলন শুরু হলে সরকার কঠোরহস্তে তা দমনের চেষ্টা করবে—এমন ভাবনা থেকেই দলীয় হাইকমান্ড আন্দোলনে নামার আগে নানামুখী কৌশল ঠিক করতে কাজ করছে। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা দফায় দফায় বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের মধ্যে বৈঠকও করছেন। এ ছাড়া কেন্দ্র থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের কাছে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা পাঠানো হলেও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন জোরদার করার পরামর্শ উঠে এসেছে। গত শনিবার দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও গতকাল সোমবার রাতে ২০ দলীয় নেতাদের স্বার্থে বৈঠকেও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের কথা হয়। তবে আন্দোলন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা চেয়ারপারসনকে দেওয়া হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনের আগে সরকার বিএনপিকে রাজপথে নামাতে চায়। সরকারের ধারণা হচ্ছে, দলীয় প্রধানকে সাজা দিলে এক ধরনের জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলটির নেতাদের আবারও কারাগারে নিক্ষেপ করে বাধাহীনভাবে নির্বাচনে এগিয়ে যাবে সরকার। নির্বাচনমুখী দাবি আদায়ের আন্দোলনের আগে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা ঠিক হবে কি না, সেসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। তবে জোট ও বিএনপি নেতারা একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, খালেদা ও তারেককে ছাড়া আগামী নির্বাচনে যাবে না দল ও জোট। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দল ও জোট নেতাদের মতামত নিয়ে সরকারের কৌশলের বিপরীতে চূড়ান্ত কৌশল প্রণয়নের জন্য সবার মতামত নিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন বিএনপি প্রধান।

খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে দল ভাঙতে পারে সরকার—এমন চিন্তা মাথায় নিয়ে বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রে সামান্য পরিবর্তন এনেছে। আর এ সংশোধিত গঠনতন্ত্র গত রোববার নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার (সিইসি) কাছে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেয়। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারার ‘ঘ’তে বলা ছিল, ‘সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি’ বিএনপির কোনো পর্যায়ের কমিটির সদস্য কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, তাদের কাছে তথ্য আছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে ভাঙতে সরকারের একটি মহল থেকে চেষ্টা-তৎপরতা চালানো হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পর এই তৎপরতা গতি পেতে পারে। এই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলে ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ ব্যক্তি দলের সদস্যপদের অযোগ্য হবেন বলে যে কথাটি গঠনতন্ত্রে আছে, তা সামনে এনে দলে বিভক্তি তৈরি করতে পারে। এই আশঙ্কার কারণে গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা তুলে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব গতকাল এক আলোচনা সভায় বলেছেন, এক-এগারো সরকার খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রেখেছিল। আটকিয়ে রাখতে পারেনি। আওয়ামী লীগও বারবার চেষ্টা করছে বিএনপিকে ধ্বংস করতে, কিন্তু ধ্বংস করতে পারেনি। বরং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি টিকে আছে, থাকবে। সামনে আরো শক্তিশালী হবে। শত চেষ্টা করেও তাকে (খালেদা জিয়া) পরাজিত করা যাবে না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন,বিএনপি,রাজনীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist