পাঠান সোহাগ

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭

সমৃদ্ধ সামরিক জাদুঘর

বিনা টিকিট, তবুও দর্শনার্থী কম!

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বাল ইতিহাস কিংবা বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর এই পর্যায়ে আসার ধারাবাহিক ইতিহাসকে স্বচক্ষে দেখার অনেক উপকরণ রয়েছে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরে। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের ব্যাজ, পোশাক, অস্ত্র, গোলাবারুদ, কামান, এন্টি এয়ারক্রাফট গান, ট্যাঙ্ক, বিমান এবং যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন যানবাহন। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন সময়ের যুদ্ধাস্ত্র, পোর্ট্রেট ও ছবি। নানা সমরাস্ত্রের সংগ্রহশালা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এ ছাড়া ছোট ও বড়পর্দায় দেখানো হয় বহু দুর্মূল্য ফুটেজ। এত আয়োজনের জাদুঘরে প্রবেশমূল্য ফ্রি। প্রতি বুধবার বন্ধ থাকে। বিনা টিকিটে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও সেখানে দর্শনার্থী কম।

জানা যায়, ১৯৮৭ সালে প্রথম এ জাদুঘরটি মিরপুর সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালে জাদুঘরটি স্থায়ীভাবে বিজয় সরণিতে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের পশ্চিম পাশে এ জাদুঘরের অবস্থান। এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত। এত কিছুর পরও এখন প্রায় দর্শকশূন্য।

সামরিক বাহিনীর নানা গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ছাড়াও রয়েছে শান্তিরক্ষী মিশনে এ বাহিনীর সাফল্যের নানা নিদর্শন। সামরিক জাদুঘরের বিশেষ আকর্ষণ ‘মুজিব কর্নার’। এখানে স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ৩০টি অঙ্কিত আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সামরিক জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়—রাশিয়া, জাপান, পাকিস্তান, মিসর, আরব-ইসরায়েলসহ বিভিন্ন দেশের যুদ্ধে ব্যবহৃত নানারকম যুদ্ধাস্ত্র সেখানে স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া মূল ভবনের দোতলায় রয়েছে আটটি গ্যালারি। প্রথম গ্যালারিতে হাত-কুঠার, তীর, ধনুকসহ পুরোনো যুগের অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। দ্বিতীয় গ্যালারিতে রয়েছে ডিবিবিএল গান, এসবিবিএল গান, বিশেষ সামরিক ব্যক্তিবর্গের ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্র। তৃতীয় গ্যালারিতে এলএমজি, এসএমজিসহ মাঝারি অস্ত্র। চতুর্থ গ্যালারিতে রয়েছে মর্টার, স্প্যালো, এইচএমজিসহ ভারী অস্ত্র। পঞ্চম গ্যালারিতে সর্বসাধারণের প্রদর্শিত হচ্ছে সশস্ত্রবাহিনীর শীত ও গ্রীষ্মকালীন পোশাক-পরিচ্ছদ, র‌্যাঙ্ক, ব্যাজ ও ফিতা। ষষ্ঠ গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল, সেক্টর কমান্ডারদের পোর্ট্রেট, কিছু ব্যবহার্য সামগ্রী। সপ্তম গ্যালারির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিজয় গ্যালারি’। এতে সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যে যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন তাদের পোর্ট্রেট ও সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অষ্টম গ্যালারিতে রয়েছে সাবেক সেনাপ্রধানদের তৈলচিত্র, বীরশ্রেষ্ঠ ও বীরপ্রতীকদের নামের তালিকা।

ভবনের নিচতলায় প্রদর্শিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যবহৃত গাড়ি। এই গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন যুদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করতেন তিনি। পাশাপাশি রয়েছে গোলন্দাজ বাহিনীর ব্যবহৃত কোয়াড বিমান বিধ্বংসী কামান, মর্টার ব্র্যান্ডেট এএম-৫০, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর ব্যবহৃত ৬ পাউন্ডার ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী কামান, রিকয়েললেস রাইফেল। আরও আছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে উদ্ধারকৃত স্টাফ কার মার্সিডিজ বেঞ্জ ও সিলিন্ডার।

বিনা টিকিটে সামরিক জাদুঘরে প্রবেশ সম্পর্কে শামীম আহমেদ নামে এক দর্শনার্থী বলেন—‘এখানকার পরিবেশ ভালো, মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিডি, বই কেনা যায়।’ মিরপুর থেকে আসা আরেক দর্শনার্থী আরিফা বেগম বলেন, ‘আমি যানতামই না এখানে এমন একটি জাদুঘর আছে।’ গোলাপগঞ্জের সিফাত বলেন, ‘বিভিন্ন্ ধরনের ডকুমেন্টারি অনেক আগের তৈরি। এর সাউন্ড সিস্টেম খুব ভালো নয়। এগুলো আরো আধুনিক করা প্রয়োজন।’ একজন মহিলা দর্শনার্থী বলেন, ‘এ জাদুঘরে খাবার পানি ও শৌচাগারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এতে অনেককেই দুর্ভোগে পড়তে হয়।’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শাকিল নামে এক সদস্য বলেন, ‘দর্শনার্থীর প্রবেশের আগে কোনো নিবন্ধন করা হয় না। তাই প্রতিদিন কতজন দর্শনার্থী এসেছেন তার সঠিক হিসাব নেই।’

‘ইতিহাস দর্পণ’ ‘নামে আইটি কর্নারের সহকারী স্টোরকিপার মো. আসাদুল্লা বলেন, ‘মাঠে নতুন করে আধুনিক জাদুঘর নির্মাণকাজ চলছে। এটি নির্মাণ করা হলে সব সুযোগ সুবিধা থাকবে। তবু প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনের মতো দর্শনার্থী পরিদর্শন করেন। গ্রীষ্মকালে কম থাকলেও শীতকালে দর্শনার্থীর ভিড় বেশি থাকে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দর্শনার্থী কম থাকলে বড় স্ক্রিনে প্রদর্শনী বন্ধ থাকে। ব্যক্তিগতভাবে একক কম্পিউটারে তা দেখানো হয়। তবে প্রবেশমূল্য থাকলে হয়তো আকর্ষণ থাকত এবং দর্শনার্থী কিছুটা হলেও বাড়ত।’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist