গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৮ নভেম্বর, ২০১৭

স্মার্টকার্ড প্রকল্পকে বিশ্বব্যাংকের বিদায়

অনিশ্চয়তার মুখে ১২৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারী

স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) প্রকল্পে থাকছে না বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি এ সিদ্ধান্তের কথা আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিয়া) সংশ্লিষ্টদের স্পষ্ট করে জানিয়েছেন এই দাতা সংস্থা। বিশ্বব্যাংকের এ অবস্থান জানার পর সরকারি অর্থায়নেই প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিশ্বব্যাংক চলমান এ প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার কারণে এখানে কর্মরত প্রায় এক হাজার ২২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। কারণ এসব কর্মরতর পেছনে প্রতি মাসে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হয় স্তরভেদে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা; যার মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন লাখ এবং সর্বনিম্ন সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি নিয়মিত না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের মানবেতন জীবনযাপন করতে হবে; এ কারণে দাতা সংস্থার সিদ্ধান্তের কথা জানাজানি হওয়ার পর অনেকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও এনআইডির ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক না থাকলেও প্রকল্প এবং জনবল টিকিয়ে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তাদের চালিয়ে নিতে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে সরকারের সম্মতি দরকার। কারণ মেয়াদ বাড়লেও সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে না। বরং বিভিন্নভাবে স্মার্টকার্ড প্রকল্পে ৪০১ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক গ্যারান্টির ১২৩ কোটি, ওবার্থর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৪৩ কোটি, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৯৫ কোটি এবং নিজস্ব উদ্যোগে কার্ড মুদ্রণ ও বিতরণের কারণে ৪৬ কোটি টাকা। এখন জরুরিভিত্তিতে প্রকল্পের কাজকে নিয়মিত করতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’

এ ছাড়া প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ২৫০ দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। ওইসব টাকা থেকে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হবে। তবে এখানে কর্মরতদের জীবনযাত্রায় কিছুটা ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে দাতা সংস্থা সরে যাওয়ার কারণে। তাদের বিষয়টি মানবিক কারণে সরকারের বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি, যোগ করেন প্রকল্পের পিডি।

পরিচয় গোপন রেখে স্মার্টকার্ড প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে স্মার্টকার্ড প্রকল্পে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক থাকছে না, তা লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছে। দফায় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি তাদের পলিসির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই আগামী ডিসেম্বরের পর জিওবির অর্থায়নে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

প্রকল্পের কর্মকর্তা জানান, স্মার্টকার্ড মুদ্রুণ-বিতরণের জন্য আইডিয়া প্রকল্পের সঙ্গে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের ওবার্থ টেকনোলজির প্রায় ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি হয়। এর আওতায় দেশের ৯ কোটি ভোটারকে স্মার্টকার্ড দেওয়ার কথা ছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটির স্বেচ্ছাচারিতা ও কাজে গাফিলতির কারণে পুরো বিতরণ কার্যক্রমটি ভেঙে পড়ে। এর আগে তাদের সহযোগিতা করার জন্য কয়েক দফা চুক্তির মেয়াদ বাড়ায় স্মার্টকার্ড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের এ মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি দুর্বলতা নিয়ে নেয়। পরে কর্তৃপক্ষ কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে গত জুলাইয়ে ওবার্থর মেয়াদ হালনাগাদ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। ফ্রান্সের এ প্রতিষ্ঠানটিকে বিদায় জানিয়ে আইডিয়া কর্তৃপক্ষ নিজেদের উদ্যোগে স্মার্টকার্ড মুদ্রুণ ও বিতরণ শুরু করে।

দেশীয় উদ্যোগে স্মার্টকার্ড উৎপাদনে কার্যক্রম হাতে নেওয়ার পর গত ১১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশি মিশনের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভান্ডারে অবস্থিত পারসু (স্মার্টকার্ড উৎপাদন) সেন্টারে পরিদর্শনে যায়। পুরো টিমই বিস্ময় প্রকাশ করে উৎপাদনের গতি দেখে। কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেশীয় উদ্যোগে এমন সাফল্যে নির্বাচন কমিশনের ভূয়সী প্রশংসা করে। পাশাপাশি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও ওবার্থর ব্যর্থতার কারণে প্রকল্প থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার ছক ঠিক করলেও দেশীয় উদ্যোগে উৎপাদনের গতি দেখে চুক্তি নিয়মিত করতে উপায় খুঁজতে থাকে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সংস্থার ঢাকা অফিস প্রকল্পে যুক্ত থাকার আগ্রহ দেখালেও ভারতের চেন্নাইয়ে তাদের আঞ্চলিক (রিজওনাল) অফিস চুক্তি থাকাবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ হালনাগাদ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। সংশ্লিষ্ট ওই অফিস থেকে ঢাকা অফিসকে জানিয়ে দেয়, একটি প্রকল্পে দ্বিতীয়বার মেয়াদ বৃদ্ধি তাদের নীতিবিরোধী। পরে ঢাকা অফিস নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আগামী ডিসেম্বরের পর না থাকার বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে এ প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বৃদ্ধি করেছিল সংস্থাটি।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের মে মাসে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রায় ২০ কোটি ডলারের চুক্তি সই করে সরকার। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) ঋণ এক হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জে পাওয়া এ ঋণ বাংলাদেশকে ৪০ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। এর মধ্যে প্রথম ১০ বছর কোনো সুদ দিতে হবে না। বিশ্বব্যাংকের ঋণসহায়তায় এ প্রকল্পের অধীনে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার কথা ছিল। পরে প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে চলতি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্বব্যাংক,স্মার্টকার্ড,জাতীয় পরিচয়পত্র
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist