নিজস্ব প্রতিবেদক
মালিবাগ-রামপুরা সড়ক সংস্কার
৩ বছরের ভোগান্তি কমছে নগরবাসীর
রাজধানীর মালিবাগ-রামপুরা সড়কের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি এবার কমবে। এই ব্যস্ত সড়কটির ভয়াবহ খানাখন্দগুলো প্রায় এক বছর পর সংস্কার করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মগবাজার উড়াল সড়কের কাজ শুরু হওয়ার পর প্রায় তিন বছর ধরে ভাঙা সড়কের তিক্ত অভিজ্ঞতা সহ্য করে আসছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ও ওই পথে চলাচলকারী লোকজন। সড়কটি সংস্কার করা হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাগব হবে বলে মনে করেন যাত্রী ও চালকসহ সংশ্লিষ্টরা।
প্রায় এক বছর পর সড়কটির সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় হাফ ছেড়ে বাঁচলেন রিকশাচালক কেরামত। তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধ মানুষ পেটের টানে রিশকা (রিকশা) চালাই। এই বয়সে এক হাত সমান গাতা (গর্ত) ভাইঙ্গা (ভেঙে) রিশকা টানতে যে কত কষ্ট বুঝাইতি পারমু না। এইবার মনে অয় রাস্তাডা ঠিক অইব।’
সড়কটিতে তিন বছর আগে উড়াল সড়কের জন্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। এ সময়ের মধ্যে বৃষ্টি ও সংস্কারের অভাবে সড়কের এখানে-সেখানে বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টিতে এসব গর্ত গাড়ির চাকার আঘাতে ভেঙে আরো বড় হয়েছে। ফলে এই সড়কে চলাচল বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, মৌচাক থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত অংশ এরই মধ্যে পিচঢালাই করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে রামপুরা টেলিভিশন সেন্টারের সামনে থেকে পূর্ব অংশ ধরে রামপুরা কাঁচাবাজারের কিছুটা আগে পর্যন্ত উভয় পাশ ও বৌবাজার মোড় পর্যন্ত পূর্ব অংশ গতকাল রাত পর্যন্ত পিচঢালাই করে মসৃণ করা হয়েছে। প্রায় তিন ইঞ্চি পুরু করে চলছে ঢালাই কাজ।
জানা যায়, যানজট নিরসনে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ ও রামপুরা এলাকাজুড়ে ২০১৩ সালে শুরু হয় উড়াল সড়কের নির্মাণকাজ। ২০১৫ সালের মধ্যে গোটা উড়াল সড়কের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বারবার নকশা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতায় কাজ এগিয়ে নিতে বিলম্ব করছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ২০১৩ সাল থেকে চলতি সময় পর্যন্ত প্রায় চার বছর উড়াল সড়কের নিচের অংশ সংস্কারের কোনো উদ্যোগ ছিল না। ফলে সংস্কারের অভাবে সড়কটি ভাঙতে ভাঙতে গাড়ি চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
পাশাপাশি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার ধীরগতির খোঁড়াখুঁড়িতে সড়কটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে জনগণের ভোগান্তিতে নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ বলেন, রামপুরার এই সড়কটি আমি দেখেছি। সড়কটিতে আসলেই অনেক ভোগান্তি। এতদিন বৃষ্টি ও একের পর এক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কটির কাজে হাত দিতে পারিনি। তবে এখন বৃষ্টি কমছে। তাই সংস্কার কাজে হাত দিয়েছি। আশা করি আগামী এক মাসের মধ্যে রামপুরা টেলিভিশন সেন্টারের সামনে থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত রাস্তা মসৃণ করে ফেলতে পারব। পাশাপাশি দুই মাসের মধ্যে নতুন রাস্তা ওয়াপদা রোডসহ গলি পথগুলোও সংস্কারের কাজ শেষ করতে পারব। এরই মধ্যে রামপুরা ব্রিজ থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত ৪০ শতাংশের মতো সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে।
অন্যদিকে হাতিরঝিল, বনশ্রী ও রামপুরা-বাড্ডা অংশের যানজট নিরসনে ২০১৬ সালের ২৫ জুন রামপুরা ব্রিজসংলগ্ন বাংলাদেশ টেলিভিশন সেন্টারের সামনের একটি ইউলুপ উদ্বোধন করা হয়। নকশা অনুযায়ী ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই ইউলুপটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের শুরুতে। ফলে ইউলুপ নির্মাণের সময়টাজুড়ে রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন সড়কটি সংস্কারের বাইরে থাকে। ইউলুপ নির্মাণ শেষে সংস্কার শুরু হয় সড়কটির। এরপর সড়কটি পুরো সংস্কার হয়। কিন্তু প্রায় এক বছর আগে ঢাকা ওয়াসা পুনরায় রামপুরার এই মসৃণ সড়কটি খোঁড়াখুঁড়ি করে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে রামপুরা অংশে ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সড়কের মাঝামাঝি অংশ বড় করে খুঁড়েছিল। কাজ শেষে আর সংস্কার করা হয়নি সড়কটি। ফলে মূল সড়ক ভাঙতে ভাঙতে বর্তমানে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। বিকল্প কোনো পথ না থাকায় সড়কটি এড়িয়ে চলারও কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না পরিবহন চালকরা।
পিডিএসও/হেলাল