খালিদ হাসান ,জবি

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ব্যস্ত সময় পার করছে পুরান ঢাকার প্রতিমা শিল্পীরা

পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ শেষ হতে না হতেই শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সর্ব বৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। বাঙালী সমাজে সনাতন ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে শারদীয় দূর্গোৎসব সার্বজনীনে পরিনত হয়েছে। মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবী দুর্গার আগমন ঘটেছে মর্তলোকে। পূজা শুরু হবে আশ্বিন মাসের ৯ তারিখ তবে পঞ্জিকা অনুযায়ী ২৫ সেপ্টেম্বর। মহাপঞ্চমী তিথিতে দেবীর বোধনের মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসব।

এ উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাকাসহ সারাদেশের মৃৎ শিল্পীরা। পড়েছে প্রতিমা তৈরির ধুম। প্রতিবারের ন্যায় এবারও পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে পরম যত্নে অস্থায়ী পূজা মন্ডপে সাজানো হচ্ছে। বিশেষ করে শাঁখারী বাজার, লক্ষ্মী বাজার, শ্যামবাজার, তাতি বাজার, কলতা বাজার, মুরগিটোলা, ডালপট্টির মত ছোট বড় সব মহল্লায় পূজা ম-প বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। গলিতে কয়েক মিটার পর পর এসব পূজা ম-প স্থাপনের কাজ চলছে। পূজা ম-বের জন্য তৈরী হচ্ছে প্রতিমা। ফলে প্রতিমা তৈরির কারিগরদের বেড়েছে ব্যস্ততা। অনেক কারিগর রাত দিন কাজ করছেন। তাদের দম ফেলার সময় নেই। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করেও সঠিক পারিশ্রমিক না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করেন প্রতিমা কারিগররা।বিগত বছরের চেয়ে এবার প্রতিমা তৈরীর খরচ দেড় থেকে দিগুণ বেড়েছে। পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রতিমা তৈরীর ম-প ঘুরে দেখা যায়, পূজা আরম্ভের দিন অতি সন্নিকটে হওয়ায় প্রতিমা পূজা মন্ডপে তোলার উপযোগী করে তুলতে দিনরাত কাজ করছেন মৃত শিল্পীররা। বৃষ্টি থাকায় গ্যাসের ছোট চুলার তাপ দিয়ে প্রতিমা শুকানো হচ্ছে।যেসব প্রতিমা শুকানো হয়েছে সেসবে চলছে রং দেবার কাজ।রং দেওয়া শেষ হওয়া প্রতিমাগুলাতে চলছে শাড়ী পড়ানের কাজ।

শরৎদাসগুপ্ত লেনে প্রতিমা তৈরী করছেন রবীন্দ্রনাথ দাশ। তিনি পাল না হয়েও গত চল্লিশ বছর এ এলাকায় প্রতিমা তৈরী করছেন। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিবারের ন্যায় এবার তিন জন কর্মচারী ছয় সেট প্রতিমা তৈরী করছি। রোদ কম হওয়া গ্যাসের হ্যান্ড চুলাই প্রতিমা শুকাতে হচ্ছে।প্রতিসেট প্রতিমা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় অর্ডার পেয়েছি।পূজার শেষ সময় এসে গেছে। বলতে গেলে রাত দিনই কাজ করছি।কাজ প্রায় শেষ। অধিকাংশ প্রতিমায় রং দিচ্ছি।’ ডালপট্টির মোড়ে শ্রী শ্রী মদনমোহন গৌর নিতাই বিগ্রহ মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের গেট দিয়ে সাজানো হচ্ছে। মন্দিরের ভিতরে চলছে দেবীর প্রতিমা তৈরীর কাজ।মৃৎ শিল্পী সুজন পাল বলেন, ‘মাত্র চার দিনে সাত সেটট প্রতিমার রং লাগানোর পাশাপাশি কাপড় পড়াতে হবে। বিভিন্ন রংয়ের কাপড় থেকে বেছে নির্দিষ্ট রংয়ের কাপড় পড়িয়ে ট্রায়েল দিতে হবে। কোন কোন প্রতিমায় চার পাঁচ বার করে কাপড় বদলাতে হচ্ছে ।’ পুরান ঢাকায় যেসব সংগঠনের উদ্যোগে পূজার আয়োজন করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিদ্বন্দ্বি, সংঘ মিত্র, শ্রী শ্রী রাধা মাধব জিউ দেব মন্দির, নব কল্লোল, তাঁতীবাজার পূজা কমিটি, শ্রী শ্রী শিব মন্দির, উদীয়মান সূর্য সংঘ, পানিটোলা পঞ্চায়েত, নবদুর্গা, নববাণী, দুর্গাবাড়ী, ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন ও গোয়ালনগর পঞ্চায়েত কমিটি। রামকৃষ্ণ মঠের দায়িত্বরত স্বামী অমল মহারাজ বলেন, ‘এবার আমরা গতবারের চেয়েও বেশি টাকা ব্যয় করে প্রতিমা তৈরী করছি যাতে ভক্তরা এসে দেখে প্রশান্তি পায়।’

এবার পূজায় পুরান ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারো কঠোর নিরাপত্তার জন্য আমাদের আইজিপি মহোদয় ও আমাদের কমিশনার মহোদয় পূজা উৎযাপন পরিষদের সাথে পৃথক বৈঠক করেছেন।সেখানে মন্দির পরিচালনা পর্ষদকে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে কি করণীয় তা বলে দেওয়া হয়েছে। আমার লালবাগ বিভাগে ৫৮টি পূজা ম-প রয়েছে।তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে।পূজা ম-পে যাতে কোন রকমের অপ্রতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্য আমরা প্রত্যেকটি পূজা ম-পে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও ম-প পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ে কাজ করব। । এছাড়া ম-পে পর্যাপ্ত সেচ্চাসেবক, লাইটিং , জেনারেটও ভিন্ন ভিন্ন প্রবেশ দ্বার, বের হওয়ার গেট থাকবে।’ উল্লেখ্য, এবার ২৫ তারিখ পঞ্চমী থেকে শুরু হয়ে ২৯ তারিখ মহানবমী এবং ৩০ তারিখ মহা বিজয়ার দশমীর মাধ্যমে পূজা শেষ হবে।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রতিমা শিল্পী,ব্যস্ত সময়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist