নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩০ মার্চ, ২০২০

৪৮ ঘণ্টায় কেউ আক্রান্ত হননি, মৃত্যুও নেই

টানা দ্বিতীয় দিনের মতো অর্থাৎ ৪৮ ঘণ্টায় বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন কোনো রোগী শনাক্ত হননি বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

গত রোববার দুপুরে অনলাইন ব্রিফিংয়ে কোভিড-১৯ মহামারির সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরার সময় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ কথা জানান। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তাতে কারো মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েনি। আক্রান্তের মোট সংখ্যা আগের মতো ৪৮ জন-ই রয়েছে।

‘আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ১৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে। গত ৯৬ ঘণ্টায় নতুন করে কারো মৃত্যুর তথ্য না আসায় মৃতের সংখ্যা আগের মতো পাঁচজনই রয়েছে।’

ডা. ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরের হটলাইনে কল এসেছে ২ হাজার ৭২৬টি। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ১৭৭ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১০৯ জনের। তবে নতুন করে কারো শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।

এর আগে অনলাইন ব্রিফিংয়ে গত শনিবার আইইডিসিআর পরিচালক জানান, বাংলাদেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন সীমিত আকারে শুরু হলেও তা এখনো বিস্তার লাভ করেনি। তিনি বলেন, একটা বা দুটো জায়গায় সীমিত আকারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে একটি জায়গায় আমরা সংক্রমণের উৎস খুঁজে পেয়েছি, তাই সেই জায়গাটিকে সামাজিক-ভাবে বিচ্ছিন্ন করে নজরদারি কার্যক্রম চালিয়েছি এবং এখনো চালাচ্ছি। করোনা প্রতিরোধে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলেন ডা. ফ্লোরা।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস বিভাগের পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান। এ ছাড়া নিজ বাসভবন থেকে অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

আরও হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশের আরো বেশ কয়েকটি হাসপাতালে এই রোগ পরীক্ষা ও চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন। গতকাল আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ের সময় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা টেস্টিং ফ্যাসিলিটি রাতারাতি বৃদ্ধি করছি। আমরা আগে একটি জায়গা থেকে টেস্ট করতাম। এখন ১১টি জায়গা থেকে টেস্ট করতে সক্ষম হচ্ছি। অলরেডি ছয় থেকে সাতটি জায়গা থেকে শুরু হয়ে গেছে। আর বাকিগুলোও শুরু হয়ে যাবে।’ দেশের সব বড় হাসপাতালে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯ পরীক্ষার বন্দোবস্ত থাকলেও গত চার থেকে পাঁচ দিনে একজন রোগীও সেখানে পরীক্ষা করাতে আসেননি বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। খালি ফ্যাসিলিটি বাড়ালেই তো হবে না। লোকজনেরও আসতে হবে।

ইতোমধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতাল, আইপিএইচ ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইইডিসিআরের ফিল্ড ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আইসিডিডিআর,বি, আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের ৬৪ জেলা ও ১০০টি উপজেলায় সব ধরনের ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, ইপিআই টেকনিশিয়ান, রেডিওগ্রাফারদের পিসিআর টেস্ট করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ল্যাবগুলোকে নিরাপদ রাখার জন্য যারা এটা পরিচালনা করবেন তাদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। তাদের ট্রেনিংয়ের বিষয় রয়েছে। তবে এটা রাতারাতি করে ফেলা সম্ভব নয়। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সব রকমের নিরাপত্তা নিয়ে ল্যাব করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, রংপুর ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পিসিআর মেশিন বসানোর কাজ চলছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দক্ষ কর্মী পাঠানো হয়েছে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে। তারা সেখানে পিসিআর মেশিন বসানোর কার্যক্রম তদারক করছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অন্য বিভাগগুলোতেও পিসিআর টেস্ট অর্থাৎ কোভিড-১৯ টেস্ট শুরু হবে।

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের নমুনা পরীক্ষা ছাড়াও মোট আটজনের পরীক্ষা করা হয়েছে। ঢাকার আইপিএইচ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরার কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল, শেখ রাসেল ইনস্টিটিউট অব ডাইজেস্টিভ ডিজিসেস হাসপাতালগুলোকে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে।

এছাড়াও ঢাকার বাইরে আরো হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখন চার থেকে পাঁচটি হাসপাতাল পুরোদমে কাজ করলেও ঢাকার বাইরে আরো ১০ থেকে ১২টি জায়গা ঠিক করে রাখা হয়েছে, যাদের মৃদু উপসর্গ দেখা দেবে তাদের ওইসব হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ বেড প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। ধরেন যেসব হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ রয়েছে, তাদের মধ্যে তিনটিকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। আইসিইউ বেডের সংকট যদিও রয়েছে তবুও আমাদের আরো কিছু ভেন্টিলেটর আসছে। সেগুলো কিছু সংখ্যক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে যেন আইসোলেশন কর্নার বাড়ানো যায়।

জাহিদ মালেক জানান, এখন বাংলাদেশে প্রায় ২৫০ ভেন্টিলেটর আছে। আরো ৩৫০টি ভেন্টিলেটর বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হচ্ছে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৩ লাখ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) বিতরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম হিসেবে ইতোমধ্যে ২০ থেকে ৩০ লাখ পিপিই বিতরণ করা হয়েছে। এপ্রিলের মধ্যে আরো ৫ লাখ পিপিই আসবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর আগেই জানিয়েছে, উত্তরার কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে অতিরিক্ত ১৬টি ভেন্টিলেটর বসানো হয়েছে। আকিজ গ্রুপের হাসপাতাল নির্মাণে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানাভাবে এগিয়ে আসছে। কেউ পিপিই দিয়ে, কেউ কিট দিয়ে, কেউ জায়গা দিয়ে সহযোগিতা করছে। আমরা খুবই আনন্দিত। আকিজ গ্রুপের ভবন হলে তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাতে এলাকাবাসীর সুবিধা হতো। আমাদের হাসপাতাল রয়েছে। যদি প্রয়োজন না হয়, তবে আমরা সে হাসপাতাল ব্যবহার করব না।

দেশের কোথাও যদি কোনো চিকিৎসক জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে আসা রোগীর চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তবে তিনি ‘অপরাধ করছেন’ বলে মন্তব্য করেন জাহিদ মালেক। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনা,করোনা আক্রান্ত,আইইডিসিআর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close