গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৪ মার্চ, ২০১৯

অস্বস্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

সংসদের নিরাপত্তায় কড়াকড়ি

*পরিচয় শনাক্তে এনআইডি *অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারে বিধিনিষেধ

জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে দুবাইগামী একটি বিমান ছিনতাই প্রচেষ্টার পর রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে সংসদ সচিবালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।

এদিকে নিরাপত্তা কড়াকড়িতে সংসদ সচিবালয়ের নিজস্ব স্টাফরা ছাড়াও সংসদ ভবন ভ্রমণে আসা সাধারণ দর্শনার্থীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। সংসদ ভবনের অভ্যন্তর ও অধিবেশন কক্ষ (অধিবেশন চলাকালীন) ঘুরে দেখতে ও প্রবেশে পাস ইস্যুর ক্ষেত্রে কিছু শর্ত-শিথিল থাকায় সাধারণ অনেক দর্শনার্থী দৈনন্দিন এখানে আসার সুযোগ পেতেন। কিন্তু বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পর সেখানে নানা বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। ফলে উপসচিবের নিচে নন, এমন কোনো গেজেটেড কর্মকর্তাদের ভবনে প্রবেশের পাস ইস্যু না করতে বলা হয়েছে।

আগে সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা এসব পাস ইস্যু করার সুযোগ পেতেন। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েট ফোন, একটার বেশি ফোন নিয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি, অভ্যন্তরের সব ধরনের ছবি তোলা নিষিদ্ধ এবং দর্শনার্থীদের এখন প্রবেশের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা তার নম্বর সংযোজন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিমান ছিনতাই দুর্ঘটনার আগে এসব শর্ত উন্মুক্ত ছিল।

নিরাপত্তা কর্মীরা বলছেন, কোনো নতুন কোনো শর্তই আরোপ করা হয়নি। আগে প্রবেশের ক্ষেত্রে শর্তগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় ছিল, এখন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থপতি লুই আই কানের নকশা অনুযায়ী জাতীয় সংসদ ভবনের চারপাশে কোনো প্রাচীর বা বেড়া থাকার কথা না থাকলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংসদ ভবনের চারপাশে ২০১৫ সালে তৈরি করা হয় নিরাপত্তা বেষ্টনী। অথচ সংসদ এলাকার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পথচারীরা যেন ভবনটি এক পলক দেখতে পান সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থাপনাটির নকশা করা হয়েছিল।

একসময় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। যেখানে বিকেল হলেই সাধারণ মানুষের পদচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হতো। সেই দক্ষিণ প্লাজা এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। অনুমতিপ্রাপ্ত সাধারণ দর্শণার্থীরাও এখন ওই প্লাজা ব্যবহার কিংবা ঘুরে দেখতে পারেন না। দেশে জঙ্গি-তৎপরতা বেড়ে গেলে বাড়ানো হয় সংসদের নিরাপত্তা।

আগে একজন দর্শনার্থীর পরিচয় শনাক্তে ঠিকানা দিলেই চলত, এখন জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সংযোজন বাধ্যতামূলক। যাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কিছুটা তফাৎ করেছেন সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ সচিবালয়ে দর্শনার্থী পাস ইস্যুতে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ১০ থেকে কমিয়ে ৫টা নির্ধারণ করা হয়। এটা এখনো বহাল রয়েছে। সেখানে তদবিরবাজদের তৎপরতা বন্ধে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ সচিবালয়। এখানে যারা আসেন, তারা তদবির কিংবা বাড়তি সুবিধা নেওয়া জন্য আসেন না। তারা আসেন অনবদ্য এই স্থাপত্যশৈলীকে স্বচক্ষে দেখার জন্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংসদের নিরাপত্তা যেমন দরকার, তবে নিরাপত্তার নামে সংসদে প্রবেশের সুযোগ সীমিত না করা। ১৯৬৪ সালের অবস্থা, আর ২০১৯ সালের বাস্তবতা এক নয়।

জানতে চাইলে সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস কমোডর মোস্তাক আহমেদ বলেন, সংসদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়নি। আগেরই মতোই নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। তবে নিয়মবিধি অনুসরণে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। আগে দর্শনার্থীদের পরিচয় শনাক্তে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সংযোজন বাধ্যতামূলক ছিল না, এখন সেটা সংযোজন করা হয়েছে।

আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অফিসার (নিরাপত্তা) বলেন, সংসদে প্রবেশে ধাতব বস্তু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশে নিধিনিষেধ আরোপ রয়েছে। বসানো আছে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিরেক্টর। এছাড়া এসবির নিজস্ব নিরাপত্তা সরঞ্জামও ব্যবহার হয় সব পর্যায়ের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। আর দর্শনার্থী ছাড়া অন্যদের একটি করে মোবাইল নিয়ে প্রবেশে অনুমতি রয়েছে। তবে আর্মস নিয়ে এসএসএফ ছাড়া অন্য কারো প্রবেশে অনুমতি নেই। এমনকি ছুরি নিয়ে প্রবেশ করা যায় না এখানে। সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এসব করা হয়, যোগ করেন নিরাপত্তার নেতৃত্ব দেওয়া ওই কর্মকর্তা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নিধিনিষেধ,জাতীয় সংসদ,নিরাপত্তা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close