মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দৃশ্যমান হওয়ার পথে পদ্মা সেতুর ১ কিলোমিটার

ষষ্ঠ স্প্যান প্রস্তুত

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ। এরই মধ্যে জাজিরা প্রান্তে সেতুর পৌনে ১ কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। সেতুর ১১টি খুঁটির মধ্যে চারটির নকশাও চূড়ান্ত হয়েছে। এখন অপেক্ষা ষষ্ঠ স্প্যান বসানোর। গতকাল রোববার সকালে মোংলা বন্দর থেকে জাহাজের মাধ্যমে স্প্যানটি মাওয়ায় আনা হয়েছে। স্প্যানটি আনলোডের কাজ চলছে।

পদ্মা সেতুর প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর মডিউল থ্রি এ’র ১৩ ও ১৪ নম্বর খুঁটির ওপর স্প্যানটি স্থাপনের জন্য এসেছে। দুই দিন আগে এটি চীন থেকে মোংলায় আসে। এরপর জাহাজের মাধ্যমে মাওয়ায় নিয়ে আসা হয়। স্টিলের এসব কাঠামো ফিটিং করে স্প্যান তৈরি করা হয়।

এ কাঠামোর ওপর দিয়ে চলবে গাড়ি ও যানবাহন। ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। প্রথমে স্টিলের কাঠামোগুলো চীনে তৈরি করা হয়েছে। এরপর মোংলা বন্দর থেকে জাহাজে করে সেগুলো মাওয়ার নির্মাণ মাঠে আনা হয়। পদ্মা সেতুর একটি খুঁটি থেকে আরেকটির দূরত্ব হচ্ছে ১৫০ মিটার। সেতুর ১২টি খুঁটি বসানো শেষ হয়েছে।

এদিকে, দুই পাড়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) কাজেও এখন বিশেষ গতি। এই সংযোগ সেতুর ৩৬৫টি পাইলই বসে গেছে। এই পাইলের ওপর হচ্ছে ক্যাপ। ক্যাপের ওপরে বসছে খুঁটি। দিন রাত এই কাজ চলছে। খুব সহজেই সেতুর অবয়ব প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। সেখানে হ্যামার ছাড়াও ভারি ভারি নানা রকমের যন্ত্রপাতির ব্যবহারে ছন্দে ছন্দে শব্দ ভেসে আসছে। প্রবল স্রোত আর ঢেউ তালে তালে প্রকৃতির সঙ্গে মিলে মিশে একাকার এই কর্মযজ্ঞের ছন্দ।

এই তৈরির হরেক রকম কাজে দেশি বিদেশিরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজে থেকে অনেক বাঙালি প্রকৌশলী-কর্মকর্তা এবং নানা পর্যায়ের কর্মীরা বিশেষ সক্ষমতা অর্জন করছেন।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এই পদ্মা সেতুর অভিজ্ঞতার থেকে বাঙালিরা আরো বড় কিছু করতে পারবে। নির্মাণ প্রযুক্তির শীর্ষ পর্যায়ের সব কিছুই এখানে অ্যাপ্লাই হচ্ছে। বিশেষায়িত ওয়ার্কসপে এখন সমানে তৈরি হচ্ছে রেলওয়ে বক্স স্লাব এবং রোডওয়ে বক্স স্লাব।

সেতুর প্রকৌশলীরা জানান, স্প্যানের নিচের তলায় রেলের জন্য রেলওয়ে বক্স স্লাব এবং ওপরের চলায় যানবাহনের জন্য রোডওয়ে বক্স স্লাব স্থাপন করা হবে। ৩ হাজার ৫০টি করে স্লাব বসাতে হবে। এ পর্যন্ত রেলওয়ে বক্স স্লাব নির্মাণ হয়েছে ৫৮০টি এবং রোডওয়ে বক্স স্লাব হয়েছে ৩৩টি। বৈচিত্র্যে ভরা পদ্মায় এই সেতু তৈরি করতে এসে চীনাসহ বিদেশি প্রকৌশলীকর্মীরাও অর্জন করেছেন অনেক রকমে অভিজ্ঞতা।

উল্লেখ্য, সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর পাঁচটি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে ১ কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সেতুর কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যানটি। এর প্রায় চার মাস পর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। এর মাত্র দেড় মাস পর ১১ মার্চ শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়।

দুই মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। আর পঞ্চম স্প্যানটি বসে এক মাস ১৬ দিনের মাথায়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পদ্মা সেতু,স্প্যান পিলার,পদ্মা সেতুর স্প্যান
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close