গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৬ জুলাই, ২০১৮

ইসির ভাবনায় ইভিএম

প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন মাঠ কর্মকর্তারা

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ইতিবাচক ভাবনায় আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ‘ইভিএম’। সাংবিধানিক এই সংস্থাটির লক্ষ্য আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর প্রয়োগ ঘটান। আর সেই পথ তৈরিতে কমিশনের মাঠ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গত ১৪ জুলাইয়ের পর আজ সোমবার দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে। এভাবে ধারাবাহিকভাবে সব কর্মকর্তা এই প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হবেন; যারা এর সফল প্রয়োগ ঘটাতে নেতৃত্ব দেবেন নির্বাচনে।

নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ইভিএমের সূদুরপ্রসারী চিন্তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটি এমন একটা প্রযুক্তি যার সম্যক ধারণা পেলে ঘোর বিরোধীকারীদেরও মত বদলে যেতে পারে। নির্বাচনে প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ সব অপবাদের দুর্নাম ঘোচাবে, যোগ করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা এই নির্বাচন কমিশনার। প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও কমিশনের যুগ্ম সচিব মোস্তফা ফারুক বলেন, ইভিএম বিষয়ে কমিশনের মাঠ কর্মকর্তাদের ধারণা দিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে একটা ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। আজ সোমবার দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে। পর্যায়ক্রমে সব কর্মকর্তাকে এই প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে সারা দেশের নির্বাচনে যান্ত্রিক এই যন্ত্রের ব্যবহারের ক্ষেত্র বাড়ানো হবে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার হবে কিনা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা নির্দিষ্ট কোনো নির্বাচনের কথা বলছি না; দেশজুড়ে নানা পর্যায়ে যেসব নির্বাচন হয় সেখানে ব্যবহার করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চলছে ইভিএম নিয়ে তর্ক-বির্তক। ত্রুটিপূর্ণ না ত্রুটিমুক্ত এ বিতর্কের শেষ নেই। কারণ প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান বুয়েটের ইভিএমও ছিল ঝামেলাপূর্ণ। ফলে এই প্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে রয়ে গেছে নানা সংশয়-সন্দেহ।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্বে আসে খান মো নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন। প্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করার আগে নিজেরা এটা নিয়ে গবেষণা করেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ইতিবাচক ধারণা পেয়ে যায় যান্ত্রিক এই যন্ত্রের। নতুন ভাবনা নিয়ে সামনের দিতে পা বাড়াতে থাকে এই কমিশন। রংপুর সিটিতে প্রথম প্রয়োগ ঘটায়; তবে সফলতার হার ছিল খুবই কম। পরে ত্রুটি কাটিয়ে নির্ভেজাল ইভিএম উদ্ভাবনে নজর দেয়। এতে যুক্ত করা হয় বিএমটিএফকে। মডিফাই ইভিএমে খুলনা সিটিতে ব্যবহারে কমিশনের ভাষ্য মতে, ইতিবাচক ফল আসে। এরপর গত ২৬ জুন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ইভিএমে নির্বাচন হয়। আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটির পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমে নির্বাচন করছে ইসি।

এই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে ইতিবাচক ভাবনার সঙ্গে আত্মবিশ্বাসী কমিশন সরকার পরিবর্তনের নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ব্যবহারের সংকল্প আঁটে। স্থির লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নেয়। যার বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো হচ্ছে, কমিশনের সব নির্বাচন কর্মকর্তাদের এ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইভিএমের ব্যবহারবিধি, যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়ে তার সমাধান এবং তাৎক্ষণিক বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে তা শেখানো হচ্ছে।

কমিশনের এই বৃহৎ পরিসরের চিন্তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ সচিবালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা বলেন, খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ব্যবহার হওয়া ইভিএমও ত্রুটিমুক্ত নয়। কারণ এই প্রযুক্তিতে ভোট দিতে ভোটারের সঙ্গে একজন সহকারী থাকতে হয়েছে। সীমিত পরিসরের এই নির্বাচনের পরিস্থিতি যখন এই; সংসদ নির্বাচনের মতো স্পর্শকাতর নির্বাচনে ব্যবহার হলে কতটুকু সফলতা আসবে কমিশনের জন্য তা এখন থেকে ভাবতে হবে। অন্যথায়, নির্বাচন প্রক্রিয়াটি ভন্ডুল হওয়ার শঙ্কা থেকে যাবে। কারণ সাবেক এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন থেকে বিদায়ী কমিশন এবং বর্তমান কমিশন পর্যন্ত ইভিএমের সফল ব্যবহার হয়নি। তবে নতুন কমিশন এটা মানতে নারাজ। তারা বলেন, ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে এরই মধ্যে যে ভুল ধারণা ছিল নতুন উদ্ভাবিত ইভিএমে ধারণা বদলে যাবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইসি,ইভিএম
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist