রাজীবুল হাসান, শ্রীপুর (গাজীপুর)

  ০৮ মার্চ, ২০১৭

স্বপ্ন পূরণ হলো দুস্থ ফাতেমার

ফাতেমা আক্তার। স্বামী-সন্তান নিয়ে অর্ধহারে-অনাহারে কাটতো দিন। বলতে গেলে এক খণ্ড জমি আর তাল পাতার একটা ঘর ছাড়া কিছুই ছিল না। অভাবের আগুনে ঝলসানো সংসারে তিন সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে চলছিল দিন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে জমানো আট হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের ডিম থেকে ক্যাম্বেল বাচ্চা ফোটানোর কাজ। সেই যে শুরু তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি পরিশ্রমী ফাতেমাকে।

সব কষ্টের দিন এখন কেবলই স্মৃতি। অভাব-কষ্টকেই সততা আর পরিশ্রম দিয়ে হার মানিয়েছেন এই সাহসী সংগ্রামী নারী। তার ভাগ্য বদলের গল্প এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদের কাছে এখন ফাতেমা আক্তার সততা আর পরিশ্রমের উদাহরণ। শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের লাকচতল এলাকার সাহাব উদ্দীনের স্ত্রী ফাতেমা। নিরিবিলি পল্লীতে সেই অভাবের দিনের কষ্টে অর্জিত ৮ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে গড়ে তুলেন তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের ডিম থেকে ক্যাম্বেল বাচ্চা ফুঁটানোর মিনি হ্যাচারি। আজ সেই ৮ হাজার টাকার স্বল্প পুঁজি পরিশ্রমের বলে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ টাকার মুলধনে। ফাতেমার সংসারে এখন সুখ। এক সন্তান সরকারি চাকরিজীবী অন্য সন্তান আইনজীবী। সেই তাল পাতার ছাউনির ঘর এখন দালান। সম্পত্তিও হয়েছে কয়েক বিঘা। এখন সুখের সংসারে দুঃখ, অর্থনৈতিক দৈন্যদশা কেবলই স্মৃতি।


সেই তাল পাতার ছাউনির ঘর এখন দালান। সম্পত্তিও হয়েছে কয়েক বিঘা এখন সুখের সংসারে দুঃখ, অর্থনৈতিক দৈন্যদশা কেবলই স্মৃতি


পরিশ্রমী ফাতেমা আক্তার বলেন, ২০০৯ সালের দিকে অনেক কষ্টে অর্জিত ৮ হাজার টাকার পূঁজিতে তুষ পদ্ধতিতে হ্যারিকেনের তাপের মাধ্যমে হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর মিনি হ্যাচারি তৈরি করি। পাশের বরমী বাজার থেকে মাত্র ৩’শ ডিম নিয়ে খাকী ক্যাম্বেল হাঁসের বাচ্চা ফোটানো শুরু করেন। এখন প্রতি সপ্তাহে ২০ হাজার ক্যাম্বেল হাঁসের বাচ্চা ফোটানো হয় এ মিনি হ্যাচারিতে। আগামীতে দুই লাখ হাঁসের বাচ্চা ফোটানোর প্রক্রিয়া করছেন। যদি ব্যাংক ঋণ সুবিধা পান তাহলে এ ব্যবসা আরো প্রসারিত করতে পারবেন।

তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, তাকে সহজ শর্তে যদি ব্যাংক ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এখানে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে। আশপাশের অনেক বেকার তরুণ-তরুণীদের কাজের ব্যবস্থা করা যাবে। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে সিজন শুরু হয়ে আগামী ৮-৯ মাস বাচ্চা ফোটানো ও বিক্রি চলবে।

জানা যায়, বাড়ি থেকেই পাইকাররা হাঁসের বাচ্চা কিনে নিয়ে যায়। প্রতিটি হাঁসা (পুরুষ) বাচ্চা ২০ টাকা আর হাঁসি (নারী) ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১০-১১ টাকায় ডিম কিনে আনা হয়। পাইকাররা ভ্যানে করে বাড়ি বাড়ি ও বাজারে গিয়ে বাচ্চা বিক্রি করে।

আইনজীবী ছেলে মনঞ্জুরুল হক প্রধান জানান, মায়ের সাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই আমাদের ভাগ্যের বদল হয়েছে। তিনি জীবনের সততা আর পরিশ্রম দিয়ে আজকের এ দিনে এসেছেন। আমরা মাকে নিয়ে গর্ব করি। মায়ের সততা আর পরিশ্রমকে শ্রদ্ধা করি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নারী,শ্রীপুর উপজেলা,কর্মসংস্থান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist