মোঃ গোলাম দস্তগীর

  ১৫ জুলাই, ২০২০

আইটি ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার হালচাল

শিক্ষা-সংস্কৃতি মানব সভ্যতার এক বিশেষ বাহন। নিয়ম-মাফিক শিক্ষাদানের প্রথা তথা স্বাক্ষরীকরণ, গত দেড়-দুশো বছরের সমাজে পরিবাহিত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন। এমনকি কিছু কিছু দেশে এই উন্নয়নের ধারা শুরু হয়েছে বিগত পঞ্চাশ বছরে। এক সময় কিশোর কিশোরীরা বিদ্যালয় থেকে নানা দক্ষতা অর্জন করতো যেমন পৌরোহিত্য, শাসকত্ব, বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতা প্রভৃতি।

শিক্ষা হল শেখার একটি পদ্ধতি বা জ্ঞান অর্জন, দক্ষতা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং অভ্যাসের একটি প্রক্রিয়া। শিক্ষাগত পদ্ধতিগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল গল্প বলা, আলোচনা, শিক্ষণ, প্রশিক্ষণ এবং পরিচালিত গবেষণা । শিক্ষা প্রায়ই শিক্ষকের নির্দেশনার অধীনেই ঘটে থাকে, তবে শিক্ষার্থীরা চাইলে নিজেরাও নিজেদেরকে শিক্ষিত করতে পারে। শিক্ষা আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে পারে। শিক্ষাদান পদ্ধতিকে বলা হয়ে থাকে pedagogy।

শিক্ষাকে প্রাথমিকভাবে প্রি স্কুল বা কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তারপর কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষানবিশ হিসাবে ভাগ করা যায় । শিক্ষার অধিকার বিশ্বব্যাপী এবং কিছু সরকার কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে: জাতিসংঘের ১৯৬৬ সালের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির ১৩ ধারায় শিক্ষাকে সার্বজনীন অধিকার হিসেবে স্বীকার করেছে।

তাই সকলেরই শিক্ষা গ্রহণের অধিকার রয়েছে। আর এর ধারাবাহিকতায় অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশও পিছিয়ে নেই। চলছে সর্বমহলেই শিক্ষার বিস্তার ও প্রগতিশীল দেশ ও জাতি গড়ার চেষ্টা। কিন্তু পথিমধ্যে করোনার ছোবল!

এ যে শুধু আমাদের দেশে তা নয় বরং করোনার ছোবলে পড়েছে পুরো বিশ্ব। তাই দেশীয়, বৈশ্বিক সকল প্রকার যোগাযোগ, বাণিজ্য ও পড়াশোনার উপর চেপে বসে এক মহাবিপর্যয়!

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, যোগাযোগ,শিক্ষা এমন কি খাদ্য সরবরাহ পর্যন্ত যথাযথ ভাবে করা যাচ্ছেনা ফলে বিশাল এক অনিশ্চয়তার বেড়াজালে আটকে গেছে মানবজাতি।

এর জাতাকলে শিক্ষার্থীরা পরেছে এক মহাবিপাকে। তাই এর ঘাটতি পূরণে ক্রমশই নির্ভর করতে হচ্ছে আমাদের Virtual জগতে। ফলে শিক্ষা ব্যাবস্থার ধারাবাহিকতা ঠিক রাখতে অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও সীমিতাকারে অনলাইন ভিত্তিক পাঠশালা তৈরী হয়েছে ও প্রাক-প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক লেভেল পর্যন্ত সংসদ টিভিতে ক্লাস নেওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।তবে এর ক্রমান্বয়ে টিভিতে দেওয়া হচ্ছে না কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়মুখী উচ্চ শিক্ষার পাঠদান।

ফলে ব্যহত হচ্ছে তাদের পাঠাভ্যাস,তাই পড়াশোনার ধারা অব্যাহত রাখতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সরকারি অনুমোদন নিয়ে জুম অ্যাপস সহ বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে সমীতাকারে তাদের পাঠ ও পঠন চালু করেছে।

আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলুতে এমনটি চালু করতে তেমন শুনা যায়নি!

তবে এর দ্বারা এই না যে অন্তত ২/৩ টা বিশ্ববাদ্যালয়েও চালু করেনি।তবে তা খুব সীমিত।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও অনলাইনে ক্লাস নেবার সিদ্ধান্ত দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।

অনলাইনে পাঠ পঠনের সকল ব্যবস্থা যেন ঠিকভাবে নেওয়া হয় জানিয়েছেন তিনি। এতে যেসকল কলেজগুলু অনলাইন ভিত্তিক পাঠদানে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন আছে সেসবেও যেন অতি দ্রুত তা কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য কলেজের মত পাঠদান করতে পারে সে নির্দেশও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে।

এই করোনাকালে সিলেবাস শেষ করা ও যথাসময়ে পরীক্ষা নেবার জন্য অনলাইন পাঠদানে সময় পুষিয়ে নেওয়াটা বেশ যুক্তিযুক্তই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে এর পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সময়ে যদি মাধ্যমিক লেভেলদের মত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়মুখী শিক্ষার্থীদের টেলিভিশনে কেন্দ্রীয় পাঠদানের ব্যাবস্থা করা হত ও এই ভিডিও রেকর্ড করে ইউটিউবে কেনো নির্দিষ্ট চ্যানেলে ছেড়ে দেয়া হত তবে বেশ ভাল হত। ফলে এতে করে যাদের এমবি/ওয়াইফাই/স্মার্টফোন নেই তাদের জন্য কল্যাণ হত ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে যারা ক্লাসটি মিস করেছে অথবা যারা ব্যস্ত সময় পার করার দরুন কেন্দ্রীয় পাঠে যুক্ত হতে পারেনি তারা পরে সুযোগ মত ভিডিওগুলু দেখে নিতে পারবে ।

এভাবে টিভিতে পাঠদান ও পঠন পদ্ধতি যে একেবারেই নতুন পদ্ধতি তাও কিন্তু নয়!

যেমন, টেলিভিশনকে শিক্ষামূলক মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের বিষয়টি সর্বপ্রথম ১৯৩২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইওডব্লিউএ এর টেস্ট ইউনিভার্সিটির একটি বিশ্ব মেলায় পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে প্রকাশিত হয়েছিল।

পরে ২য় বিশ্বযুদ্ধের কারণে টেলিভিশনের ভূমিকা মন্থর হয়ে যায়।

পরবর্তিতে আবার শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে টিভির গুরুত্ব উপলব্ধি করে 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল যোগাযোগ কমিশন' ১৯৫২ সালে অলাভজনক ও অবাণিজ্যিক ভিত্তিতে শিক্ষামূলক সম্প্রচারের জন্য ২৪২টি ফ্রিকোয়েন্সি সংরক্ষণ করেছিল।

দূরবর্তী শিক্ষণ-শিক্ষা পদ্ধতির অগ্রদূত ধরা হয় দ্য ইউকে ওপেন ইউনিভার্সিটি কর্তৃক টেলিভিশনের শিক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য।

পরে ১৯৬০ এর দশকে শিক্ষামূলক টেলিভিশনের স্টেশনগুলুর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল।

মোটকথা হচ্ছে বর্তমান এই করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন সহ টিভিতেও ক্লাসের ব্যবস্থাটি সর্বদিক বিবেচনায় যথাযোগ্য, যদিও তা শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের বিকল্প হবেনা। তবুও এ দুঃসময়ে চালিয়ে যেতে হবে এ প্রক্রিয়া। কারণ কথায় আছে, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল, এটিও ঠিক তেমনি। তবে আল্লাহ চাহেতু আমরা অচিরেই সেই আগের মত শ্রেণী পাঠে ফিরতে পারব।

তবে এ প্রক্রিয়া পরিচালনে শিক্ষকদের জড়িপে কিছু ব্যর্থতাও লক্ষ্য করা যায়। দেখা গেছে ৪০-৫০% শিক্ষার্থী এতে অনুপুস্থিত। আর এর কারণ হিসেবে উনারা নির্ণয় করেছে বেশ কয়েকটি দিক যা নিম্নরুপ।

অনেকের এমবি/ওয়াইফাই যথাসময়ে নেই/আর্থিক সমস্যার কারণে অথবা অনেকে মফস্বলে থাকায় নেট অতিরিক্ত স্লো। অনেকের আবার স্মার্টফোন বা এন্ড্রয়েট ফোনই নাই আবার অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকও আছেন যিনারা নেট/আইটি জগত সম্পর্কে তেমন ধারণাই রাখেনা ফলে অপ্রস্তুতির জন্যও ব্যহত হচ্ছে।

আর অনেক পরিবারে টিভি নেই/থাকলেও মফস্বল এলাকা বলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের দরুন ক্লাস করতে পারেনা। আবার অনেকে কাজে ব্যস্ত থাকার দরুন যথাসময়ে টিভিতে ক্লাস করতে পারছেনা!

তো এসব থেকে উত্তরণের পন্থা 'শিক্ষা মন্ত্রণালয়' অথবা সরকার গ্রহণ করলে সবি কাটিয়ে উঠা সম্ভব। যেমন, সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ক্লাসের জন্য যথাসময়ে ফ্রি এমবিতে সব ওপেন করে দিতে হবে। যাদের এন্ড্রয়েট ফোন নেই প্রয়োজনে তাদের ফোন দিয়ে হলেও সহযোগিতা করতে হবে ও আইটিতে সকলকে কিছু প্রশিক্ষণও দেওয়াতে পারে যেন করোনা মোকাবিলা সহ পরবর্তিতে এমন কোনো সমস্যায় পৃথিবী ভোগলে এটা কাজ দিবে ও আইটিতে দক্ষ হয়ে স্বাক্ষরতার হারও বাড়বে আন্তর্জাতিকভাবে এবং টিভির ক্লাসের সময় বাধ্যতামূলকভাবে সব স্থানে বিদ্যুৎ লাইন যেন সচল রাখেন।ফলেই আসবে সফলতা।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আইটি,শিক্ষা ব্যবস্থা,হালচাল
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close