মো. রাশিদুল ইসলাম

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

র‍্যাগিং পুরোপুরি বন্ধ হোক

বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তো বটেই, এর বাইরেও র‍্যাগিং একটি পরিচিত শব্দ। এটি নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে চলছে।তাদের পরিবারের জন্যও বিষয়টি আতঙ্কের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‍্যাগিং নামের নির্যাতন যেন কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না।দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই র‍্যাগিংয়ের চর্চা সবচেয়ে বেশি।

আনন্দ আর ভয়ের একটা অদ্ভুত মিশ্রণ ও জীবনের নতুন একটি অধ্যায় শুরুর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেই ওরা জানান দেয় তারা নতুন, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।কিন্তু এই স্বপ্নভরা চোখগুলো যেন হঠাৎ কেঁপে ওঠে। কারণ এই প্রথম বর্ষেই অনেকেই শিকার হয় র‍্যাগিং নামের এক মহা যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতার। অনেকে একটুখানি থাকার জায়গার জন্য এলাকার বা ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই কিংবা পরিচিত কোনো ছাত্রনেতার মাধ্যমে হলের গনরুমে উঠে। সেখানেই অনেকের জীবনে আঘাত হানে র‍্যাগিং নামের নিপীড়নের অভিজ্ঞতা।

'জুনিয়রদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া','জুনিয়র-সিনিয়র সম্পর্ক উন্নয়ন','মজা করা' বা 'জুনিয়রদের আদব-কায়দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম শেখানো'র নামে র‍্যাগিং চলে। গালিগালাজ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন,এমনকি তাদের পিতা-মাতা ও নিজ জেলা নিয়েও নানাভাবে হয়রানি করা হয় এই প্রক্রিয়ায়।

সিনিয়র আপুকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিতে বাধ্য করা,শীতের রাতে খালি গায়ে ১ মাইল হেঁটে আসা, আপত্তিকর বিষয়ে অভিনয় করে দেখানো, মা-বাবা ও পরিবারের অন্যদের জড়িয়ে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার, প্রকাশ্যে নগ্ন করা, একটা নিদিষ্ট সময়ের পর রুমে আসা, কান ধরে ওঠবস, পেস্ট খেতে বাধ্য করা, বুকডন, ম্যাচের কাঠি দিয়ে রুম বা মাঠের মাপ নেওয়া, কোনো আদেশ না মানলে গায়ে হাত তোলা, কথার মারপ্যাঁচে বিব্রত করা ছাড়াও নানাভাবে র‍্যাগিং চলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে।

জীবন গড়ার একই উদ্দেশ্য নিয়ে ক্যাম্পাসে যাওয়া এক শিক্ষার্থীর হাতে অন্য শিক্ষার্থীর নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। স্বপ্নের ক্যাম্পাসে এসে সিনিয়রদের এমন আচরণ মেনে নিতে পারে না অনেকেই, পারার কথাও নয়। তাই অনেকে বাধ্য হয়, হল বা ক্যাম্পাস ছাড়তে। অনেকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এই ক্ষত থেকে সহজে বের হতে পারে না।

ধারণা করা হয়েছিল, ছাত্রলীগের কিছু শিক্ষার্থীর নির্যাতনে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যুর ঘটনার পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেয়া পদক্ষেপের ফলে র‍্যাগিংসহ সব ধরনের শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধ হবে এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত হবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। তা এখনও থেমে থেমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‍্যাগিং-নির্যাতনের খবর থেকে তা আঁচ করা যায়। র‍্যাগিংয়ের নামে অত্যাচার কমবেশি সব বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রচলিত আছে। র‍্যাগিংয়ের শাস্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই। এমনকি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন র‍্যাগিংয়ের বিচার করতে পারে না বিভিন্ন সংগঠনের চাপে বা লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির কারণে।

সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে একটি অ্যান্টি র‍্যাগিং কমিটি গঠন করার নিয়ম করা হয়েছে,যার প্রধান হিসেবে ছাত্র উপদেষ্টা সদস্য সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও হল প্রভোষ্টদের সদস্য রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। র‍্যাগিং বিষয়ে হাইকোর্টের এ নির্দেশনা প্রশংসার দাবিদার। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষের হাতে থাকা পিতামাতার আমানত তথা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার অবহেলাও কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না।

সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে নজরদারি বাড়ানো। অন্যথায় নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষাঙ্গন স্বপ্নই থেকে যাবে। সবার দায়িত্বপূর্ণ আচরণ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্কের মধ্য দিয়েই দূর হবে র‍্যগ দেয়ার মতো ভয়াবহ বিষয়। ভালোবেসে কাছে টেনে নেওয়ার যে সম্পর্ক, সেটাই সারা জীবনের অর্জন।বিশ্ববিদ্যালয় জীবন এ জন্যই অনন্য।

লেখক : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
র‌্যাগিং,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়,র‌্যাগিং বন্ধ,নবীন শিক্ষার্থী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close