মাজহারুল ইসলাম মিশু, সংবাদকর্মী

  ১৮ আগস্ট, ২০১৮

একদিন তার সনে

মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে লেখক

মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০০১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মাত্র ১৭ বছর বয়সে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরির মধ্য দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে কোটি কোটি দর্শককে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো।একটি সময় ছিলো, যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে মোহাম্মদ আশরাফুল মানেই নতুন কিছু। জয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকতো দেশের কোটি কোটি ক্রিকেট সমর্থক। তাদের মধ্যে আমিও একজন ভক্ত। এমনও সময় এসেছে, কাল পরীক্ষা, কিন্তু আগেরদিন বাংলাদেশের খেলা। আর বাংলাদেশের খেলা মানেই মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাটিং নৈপুণ্য। লেখাপড়া ভুলে গিয়ে তার খেলা দেখেছি। আশরাফুলের ব্যাটে চার/ছয় মানেই উল্লাস আর গলা ছেড়ে চিৎকার। কিন্তু আমার মতো লক্ষ কোটি আশরাফুল ভক্তদের কাঁদিয়ে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ পাতানো এবং স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে বিপিএল এন্টি করাপশন ট্রাইব্যুনাল প্রিয় এই খেলোয়ারকে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে।

কিন্তু সেদিন সবার সাথে আমিও এ রায়ের বিরোদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলাম। সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ওই সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর করে। আশরাফুলের কোটি কোটি ভক্তদের মনে সেদিন প্রশ্ন ছিলো আশরাফুল কি একাই অপরাধ করেছে? সে উত্তর আজো অজানা।

যাক সে কথা, এ বছরের ২৫ মে, দিনটি ছিলো শুক্রবার। ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের ধারা বাজার জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে কর্মস্থল হালুয়াঘাট প্রেস ক্লাবের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। শুক্রবার সমস্ত দোকান বন্ধ থাকে। সেদিন কোনও কাজও ছিলোনা আমার। তবুও কেন যেন ঘরে মন টিকছিলো না। প্রেস ক্লাবে যাওয়ার রাস্তার ঠিক ১৫০ গজ সামনে জিরো পয়েন্ট। শুক্রবার বন্ধের দিন, কিন্তু ওখানে মানুষের এতো ভিড় কেন? প্রথম ভেবেছিলাম থাক যাবো না। পড়ে আবার কৌতুহল নিয়ে ব্যাপারটা দেখার জন্য সামনে গেলাম। সামনে যেতেই দেখলাম একটা নতুন ফ্যাশন শো রুম উদ্বোধন হয়েছে, মানুষের এই ভিড় সেখানেই। বাইরে থেকে ভিড়ের মূল কারণটা বুঝা যাচ্ছিল না । আগ্রহ নিয়ে ভেতরে গিয়েই চোখ কপালে উঠলো। আমার ভালো লাগা ক্রিকেটার, ভালোবাসার ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল বসে আছেন। কি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞাস করলাম, তিনিও হাসি মুখে উত্তর দিলেন। নতুন ফ্যাশন শো রুমের উদ্বোধন করতে এসেছেন গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সবুজে ঘেরা হালুয়াঘাটে। তার ভক্তদের সাথে ফটো সেশনে তিনি খুব ব্যস্ত সময় পার করছিলেন । কথা বলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আস্তে আস্তে ভিড় কমতে শুরু করেছে। ততক্ষণে আসরের আযান শুরু হয়েছে। ফ্যাশন শো এর মালিকের মাধ্যমে আশরাফুল এর সাথে কথা বলার সুযোগ চাওয়া হলো। সাংবাদিক কথা বলবে শুনে প্রচণ্ড আগ্রহে বললো- হে অবশ্যই কথা বলবো। অনুমতি পাওয়ার পর প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার হালুয়াঘাট প্রতিনিধি পরিচয় দিতেই ভালো মন্দ জিজ্ঞাস করলেন আশরাফুল। উনার পাশে বসে প্রথমেই জানতে চাইলাম ক্রিকেটে আপনার তো আর কয়েকদিন পরেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। ক্রিকেটে কি আবারো ফিরতে চান?

দেরি না করে এক কথায় উত্তর দিলেন- ক্রিকেটে আমি অবশ্যই ফিরতে চাই। আগ্রহ এবং কথা বলেই বুঝা গেলো ক্রিকেটে ফিরতে কতটা মরিয়া তিনি। এখন কি নিয়ে ব্যস্ত জানতে চাইলে বলেন, বর্তমানে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে সময় পার করছি। ফিটনেসের প্রতি সবসময় নজর। আপনি নিশ্চয় লক্ষ করবেন আমার শরীরের ওজন আগের চেয়ে অনেক কমিয়েছি। অন্যরকম অজানা একটা প্রশ্ন করে বসলাম, আপনি কি স্পট ফিক্সিংয়ের সাথে একাই জড়িত ছিলেন ? মুখের এক কোনে মৃদু হেসে বললেন- আপনাদের এলাকা খুবই সুন্দর। আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি আবার আসবো। বুঝলাম এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে চাইছেন না। আমিও আর কিছু বলিনি। এবার উঠতে হবে। আমিও বললাম ঠিক আছে আবার আসবেন আমাদের হালুয়াঘাটে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছোট ভাইকে বললাম আশরাফুল ভাইয়ের সাথে একটা ছবি তুলে দাও। দু’জনে একসাথে বসে ছবি উঠালাম। যাকে টেলিভিশন কিংবা খেলার মাঠে ছাড়া দেখায় যায় না। তার সাথে বসে তার কিছু কথা, ছবি তোলা সত্যিই আনন্দের ব্যাপার। আশরাফুল বাংলাদেশের ক্রিকেটের একটি উজ্জল নক্ষত্র। আগষ্ট মাসে তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হলো। আমার মতো কোটি কোটি সমর্থক তাকে আবার মাঠে দেখতে চাই। ক্রিকেটকে আরো অনেক কিছু দেবার আছে এই ক্রিকেটারের। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আবারো আশরাফুলকে খেলার সুযোগ করে দিবেন।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
একদিন,তার সনে
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close