ফারুকী আপত্তিকর ছবি বানিয়েছেন : শাওনের অভিযোগ
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিতর্কিত চলচ্চিত্র ‘ডুব’কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতার মধ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে মেহের আফরোজ শাওন বলেন, প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে বিতর্কিত করতেই তাকে নিয়ে এই আপত্তিকর ছবি বানিয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তাই মামলা নয়, সেন্সর বোর্ডের ওপরই আপাতত আস্থা রাখছেন তিনি আস্থা রাখছেন বলে দাবি করেন। তবে তিনি জানান, যে আশঙ্কা থেকে ডুব নিয়ে সেন্সর বোর্ডে তিনি আপত্তি জানিয়েছেন, সেই আপত্তির জায়গাগুলোতে কাঁচি চালালে কোনো অভিযোগই থাকবে না তার। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি ‘দখিন হাওয়া’য় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সেন্সর বোর্ড প্রয়োজনে ছবিটি দেখার আমন্ত্রণ জানালে তিনি যাবেন এবং কোথায় অসঙ্গতি, সেটাও দেখিয়ে দিতে পারবেন বলে জানান শাওন। হুমায়ূন আহমেদ সবার বলে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কখনো হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে তাকে কথা বলা দূরের কথা, সাক্ষাৎ করতেও দেখিনি। কোনো গবেষণা ছাড়া নির্মাতার এই প্রয়াস দুঃখজনক। এর আগে, শাওনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় ডুব ছবির অনাপত্তিপত্রে। সে কারণে নির্মাণ শেষে সেন্সর বোর্ডে জমা পড়ার আগেই তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে থমকে যায় চলচ্চিত্রটির মুক্তি প্রক্রিয়া।
লিখিত বক্তব্যে এ অভিনেত্রী বলেন, গত বছরের শেষ দিকে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘আনন্দবাজার’র কাছ থেকে প্রথম ডুব ছবিটির পটভূমি সম্পর্কে জানতে পারি। আমাকে জানানো হয়, ছবিটি হুমায়ূন আহমেদের জীবনী ঘিরে এবং হুমায়ূন পরিবারের কিছু সদস্যের চরিত্রও ছবিটিতে উঠে এসেছে, যার মধ্যে আমিও আছি। খবরটি আমাকে বিস্মিত করে। তার পরপরই বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জানতে পারি যে, আলোচ্য ছবিটি কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জীবনের কিছু স্পর্শকাতর ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে।
ছবির মূল চরিত্রের অভিনয়শিল্পী ইরফান খান শুটিংয়ের আগে হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর ভিডিও দেখেছিলেন এবং সেগুলো দেখেই হুমায়ূন আহমেদের কথাবার্তা বলার ধরন- এসব নিয়ে হোমওয়ার্ক করেছিলেন। ছবির আরেক অভিনয়শিল্পী পর্ণ মিত্র তার ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন যে, তার অভিনীত চরিত্রের নাম মেহের আফরোজ শাওন। যদিও কিছুক্ষণ পর তা সম্পাদনা করে বাদ দেন তিনি।
শাওন বলেন, দেশি কোনো গণমাধ্যমকে না জানিয়ে নির্মাতার এই লুকোচুরি থেকে সঙ্গত কারণেই আমি আশঙ্কা বোধ করি। কেননা ছবিটির পরিচালক তার কোনো মন্তব্যেই ছবিটির সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের জীবনীর সম্পৃক্ততার কথা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের জীবনের কিছু বিতর্কিত অংশ, যার সত্যতা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে, মূলত তেমন প্রবল আশঙ্কা থেকেই আমার এই অবস্থান।
হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের তথা বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি লেখক। তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার মানে কি এই যে, তাকে নিয়ে একটি মনগড়া কাহিনীচিত্র বানিয়ে ফেলা যাবে? এমন প্রশ্ন তুলে শাওন বলেন, হুমায়ূন আহমেদ নাম বদলে চরিত্রের অন্য যে নামই দেওয়া হোক, সেই চরিত্র যদি হয় বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় লেখকের, যিনি চলচ্চিত্র নির্মাণও করেন, সংসার জীবনে যার দু’টি অধ্যায় আছে এবং ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েই যার জীবনাবসান হয়েছে, সেটি কার জীবন, এটি বুঝতে কোনো দর্শকের গবেষণা করার প্রয়োজন পড়ে না। সত্য গল্পের সঙ্গে কিছু বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এবং তাকে নিয়ে ট্যাবলয়েড পত্রিকার কিছু চটকদার গুজব জুড়ে দিয়ে যদি কোনো ছবি বানানো হয় সেটা কি নৈতিক? এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।
ডুব ছবির দৃশ্যে ইরফান খান ও নুসরাত ইমরোজ তৃষাঅনেক পাঠক-দর্শক আছেন যারা হুমায়ূন আহমেদ পড়া শুরু করেছেন মাত্র। তারা ছবিটি দেখে ভুল তথ্য পাবেন এবং এই বিভ্রান্তিকর তথ্যে ভরা কাহিনীচিত্রটি পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদের জীবনী হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উপস্থাপিত হবে উল্লেখ করে শাওন বলেন, হুমায়ূন এবং আমার দু’টি ছোট সন্তান আছে। তাদেরও ভবিষ্যৎ আছে। বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের মধ্যে তারা কেন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে! এসব বিবেচনায় হুমায়ূন আহমেদের জীবন নিয়ে নির্মিত সিনেমার ব্যপারে আমার আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ আছে।
শাওন জানান, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আমি সেন্সর বোর্ডে চিঠি দেই। চিঠিতে অনুরোধ করা হয়, আমি যে আশঙ্কাগুলো করছি, ছবিটি দেখার সময় সে বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে যেন তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এ ছবিতে যদি কোনো আপত্তিকর বিষয় থাকে, সেগুলো যেন যথাযথভাবে পরিবর্তন এবং পরিশোধন করে মুক্তি দেওয়া হয়। তাহলে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। ডুব- এর ব্যাপারে নিজের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি নিজেও একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। কোনো নির্মাতা বা তার নির্মাণের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। আমি কোনো চলচ্চিত্র নিষিদ্ধের কথাও বলিনি। কিন্তু হুমায়ূনের স্ত্রী হিসেবে এবং তার একজন ভক্ত পাঠক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা কোনো চলচ্চিত্রের পক্ষে আমার অবস্থান থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক।পিডিএসও/মুস্তাফিজ