তুহিন খান নিহাল

  ২৪ মার্চ, ২০১৮

শাকিব-অপুর সাতকাহন

২০১৭ সালে নিজেদের রেষারেষি কিংবা কাদা ছোড়াছুড়িতে বছরব্যাপী আলোচনায় ছিল শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। তাদের প্রেম, বিয়ে, অতঃপর বিচ্ছেদ, সবকিছুই যেন একটি সিনেমার গল্পের মতো। নানাভাবে সিনেমার পর্দায় উপস্থাপন করার মতো নিজেদের জীবনের গল্পটাও ঠিক একইভাবে সাজিয়ে ফেলেছেন তারা। মিডিয়ায় তাদের বিয়ের খবর প্রকাশ হওয়ার পর গল্পের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র এক বছর। যদিও অপুর দাবি, ২০০৮ সালে বিয়ে হয়েছিল তাদের। কিন্তু এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ কারো কাছেই পাওয়া যায়নি। তবে তারকা বলে কথা, যা রীতিমতো দর্শক বিশ্বাস করেই থাকেন।

এ জুটির প্রথম পরিচয় এফ আই মানিকের ‘কোটি টাকার কাবিন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। সালটা ছিল ২০০৬। আর প্রথম ছবিতেই অপুর বিপরীতে পেয়েছিলেন শাকিব খানকে। ছবিটি দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ফলে এ জুটিকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখান পরিচালক-প্রযোজকরা। সে থেকেই শুরু। দিনে দিনে শাকিব-অপু তাদের অভিনয় দিয়ে গড়ে তোলেন একটি নতুন জুটি। আর এ জুটিকে নিয়ে কাজের আগ্রহ দিনে দিনে বাড়তে থাকে সবার।

তবে অপু বিশ্বাসের দাবি, ২০০৮ সালে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কথা দাও সাথী হবো’ চলচ্চিত্রের শুটিং শেষে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিব। সে বছরের ১৮ এপ্রিল এক প্রযোজকের উপস্থিতিতে বিয়ে হয় তাদের। তবে বিয়েতে কাবিনের বিষয়ে দুজনের মধ্যেই ছিল বেশ বিতর্ক। কারণ, অপু বলেছিলেন বিয়েতে তাদের কাবিন ধার্য হয়েছিল এক কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু শাকিব খান বরাবরই বলে এসেছেন, টাকার অঙ্ক সাত লাখ।

তবে বিয়ের পর টানা আটটি বছর গোপনে সংসার করেছেন শাকিব-অপু। অনেকে বিষয়টি জানলেও সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে কেউই কিছু বলতে পারেননি। সে সময় এ জুটির সম্পর্কের খবর প্রকাশিত হলেও গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন দুজনেই। এর পরই ২০১৬ সালের শুরুতে নিজের অভিনীত বেশ কয়েকটি ছবির শুটিং অসমাপ্ত রেখেই মিডিয়ার আড়ালে চলে যান অপু বিশ্বাস। তবে অপু বিশ্বাসের মিডিয়া থেকে সরে যাওয়ার পেছনে শাকিবের হাত ছিলÑ এমন কথাও উঠে আসে।

তবে এ বিষয়ে শাকিব খান বলেছেন, নিজের প্রয়োজনেই অপু মিডিয়ার বাইরে গেছেন, তবে ফিরবেন চমক নিয়ে। কিন্তু চমক হিসেবে শাকিব কী বোঝাতে চেয়েছিলেন, সেটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। যদিও কেউ কেউ মনে করেছিলেন কাজের ক্ষেত্রে লুক-গেটাপ পরিবর্তন করেই মিডিয়ায় ফিরবেন অপু।

মাঝে অপু বিশ্বাস আড়াল থেকেই কথা বলেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। তবে কেন তিনি আড়ালে তা না বললেও জানিয়েছিলেন, সব বিষয় শেয়ার করবেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। তবে অপু কবে ফিরবেন তা কারোরই জানা ছিল না। এরই মধ্যে চলে নানা রকম ঘটনা। মাঝে শাকিব খানের উপস্থিতিতে একটি ছবি আপলোড করে চিত্রনায়িকা বুবলি। ক্যাপশনে লিখেছেন ফ্যামিলি টাইম। এ কারণে অপু বিশ্বাস ও বুবলি জড়িয়ে পড়েন বাকবিত-ায়। তখন শাকিব-অপু-বুবলির সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে। তখন অপু বলেছিলেন, ‘আমি কে, সেটা বলে দেবে শাকিব!’ কিন্তু এ কথার পরও কোনো মন্তব্য করেননি শাকিব খান। এর ফলে যখন শাকিব-বুবলি-অপুর ঘটনা প্রায় স্তিমিত হওয়ার পথে, তখনই গত বছরের ১০ এপ্রিল অপু বিশ্বাস লাইভে আসেন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে। এত দিন কেন মিডিয়ার বাইরে ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অপু বলেছিলেন, ‘সন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে শাকিবের পরামর্শেই এত দিন আড়ালে ছিলাম। এর সঙ্গে আমাদের দুজনের ক্যারিয়ার জড়িত। কিন্তু আর নিজেকে আড়ালে রাখতে পারছিলাম না। তাই সবাইকে বিষয়টি জানিয়ে দিলাম।’

এদিন নিজের আট মাসের সন্তান আব্রাম খান জয়কে নিয়ে লাইভে আসেন অপু। তখন অপু যা বললেন, তা শুনেই থমকে ওঠেন মিডিয়াপাড়া। শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

তবে নানা সময়ে শাকিব সন্তানের জন্য অর্থ দিয়েছেন বলেও স্বীকার করেন অপু।

এর মঝেধ্যই চলে যায় লম্বা একটি সময়। সময়ের ব্যবধানে বাড়তে থাকে দূরত্বের দেয়াল। সন্তান-স্ত্রীকে মেনে নিলেও দুজনের মাঝখানের দূরত্বটা ঢাকতে পারেননি শাকিব। কিছুদিনের মধ্যেই দুজনের মধ্যে দূরত্বটা স্পষ্ট হতে থাকে। নানা ঘটনা প্রকাশিতও হয় মিডিয়ায়। এর মধ্যে তাদের সন্তান আব্রাম খান জয়ের এক বছর পূর্ণ হয়। আর তখনি তাদের দূরত্বের দেয়াল স্পষ্ট হয়ে যায় ভক্তদের মনে। একমাত্র ছেলের জন্মদিন পালন করেন মা অপু বিশ্বাস। আর জন্মদিনের আমন্ত্রণপত্রে শাকিব খানের ছবি ছাড়াই ছেলের সঙ্গে নিজের একা ছবি ছাপান অপু। আর সে অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন না শাকিব। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, আমার টাকায় অনুষ্ঠান করে আবার কার্ডে আমার নামই নেই। এর কিছুদিন পরই শুরু হয় তাদের বিচ্ছেদের গুঞ্জন। গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই বিচ্ছেদের গুঞ্জন রটে। বিষয়টি নিয়ে শাকিব খান খোলাখুলিভাবে কিছু না বললেও অপু বিশ্বাস বলেন, এসবের মধ্যে শাকিব খানও নাই আমিও নেই। এসব একেবার গুঞ্জন।

এর পরই ব্যক্তিগত অসুস্থতার কারণে ১৭ নভেম্বর কলকাতায় যান অপু বিশ্বাস। তার সঙ্গে ছিলেন না কেউই। ছেলে আব্রাম খান জয়কে রেখে গেছেন বাসায়। তবে ছেলেকে বাসায় একা রেখে গেছেন অপু। এ খবর শুনে রেগে ছেলেকে নিজের কাছে আনতে ছুটে যান শাকিব খান। সেখানে গিয়ে তিনি বাসা তালাবন্ধ পান। এ বিষয়টি নিয়ে দুজনেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন। এর পরই গত বছরের ২২ নভেম্বর অপুর বাসার ঠিকানায় তালাকনামা পাঠিয়ে দেন শাকিব খান। আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজের মাধ্যমে তিনি এই তালাকনামা পাঠান। তবে তালাকের কারণ হিসেবে আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, বিয়ের সময় ধর্মান্তরিত হয়ে অপু বিশ্বাস শাকিব খানকে বিয়ে করেছিলেন। কথা ছিল তিনি মুসলিম রীতিনীতি মেনে চলবেন ও গৃহিণী হয়ে থাকবেন। কিন্তু অপু বিশ্বাস সে কথা রাখেননি।

তালাকনামায় শাকিব অভিযোগ তোলেন, পুত্রসন্তান জয়কে বাড়িতে গৃহকর্মীর সঙ্গে তালাবন্ধ রেখে ‘ছেলেবন্ধুকে নিয়ে’ দেশের বাইরে যান অপু। আইনজীবী বলেন, এসব ঘটনার কারণেই শাকিব খান অপুকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

শাকিব খানের কাছ থেকে তালাকনামা পাওয়ার পর থেকেই এ বিচ্ছেদ ‘মানেন না’ বলে দাবি করে আসছিলেন অপু বিশ্বাস। পরে বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার আগেই মেনে নেওয়ার বক্তব্য দেন গণমাধ্যমে। সে কারণেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পারিবারিক আদালতে ডাকা দ্বিতীয় সালিসেও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। তবে এর পরই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে। সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেমায়েত হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বিচ্ছেদের আবেদনের পর বিষয়টি মিটমাট করার জন্য তিনবার আমরা উভয় পক্ষকে সালিসে ডেকেছিলাম। চূড়ান্ত সালিসে কোনো পক্ষই হাজির হননি। তাই নিয়মমাফিক এ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।

মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিচ্ছেদের নোটিস পাঠানোর ৯০ দিনের মধ্যে মীমাংসা না হলে বিচ্ছেদ কার্যকর হয়। আর এর মধ্যেই এ দুই তারকা দম্পতির বিচ্ছেদ কার্যকর হলো। শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিবাহবিচ্ছেদ ১২ মার্চ কার্যকর হলেও এর আগে থেকেই তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এক ছাদের নিচে তো নয়ই, এমনকি একসঙ্গে কোনো চলচ্চিত্রেও আর কাজ করছেন না। তাদের এ বিচ্ছেদে বিপদে পড়েছেন অনেক প্রযোজক ও পরিচালক। অনেক অর্ধসমাপ্ত ছবিই আর করা সম্ভব হচ্ছে না শাকিব-অপুর এই ছাড়াছাড়ির কারণে। সেসব ছবিতে নায়ক-নায়িকার ভূমিকায় নেওয়া হয়েছিল তাদের। ‘পাংকু জামাই’, ‘লাভ ২০১৪’, ‘মা’, ‘মাই ডার্লিং’ প্রভৃতি ছবির প্রায় ৭০ শতাংশ শুটিং শেষ করেও বাকি কাজ শেষ করা যাচ্ছে না শাকিব ও অপুর কারণে। যেহেতু পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণে তারা একে অপরের সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করে দিয়েছেন, তাই বিশাল অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়তে যাচ্ছেন এসব ছবির প্রযোজকরা। আর এ কারণেই আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তা করছেন অনেকে।

তবে বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার পর গত রোববার ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় বেড়াতে গেছেন অপু। সেখানে শাকিব খানের মুখোমুখি হয়েছেন ছেলে আব্রাম ও অপু। তবে তাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কি নাÑতা জানা যায়নি। এদিন শাকিব জয়দীপ মুখার্জির পরিচালনায় ‘ভাইজান এলো রে’ ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত। সেখানেই বিপরীতে অভিনয় করা শ্রাবন্তীর কোলে দেখা গেছে শাকিব-অপুর ছেলে আব্রাম খান জয়কে। এদিকে অপু বিশ্বাসের কোলে জয়, পাশে আছেন কলকাতার নায়িকা শ্রাবন্তী। এমন একটি ছবি নিজের ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন অপু বিশ্বাস। এ দুটি ছবি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তবে কি দেখা হয়েছিল শাকিব-অপুর? তারা মুখোমুখি হলে একফ্রেমে বন্দি হলেন না কেন? শাকিব-অপুর সংসার ভেঙে যাওয়ার কথা তো সবার জানা। তারা এখন আর স্বামী-স্ত্রী নন। তবে শাকিব আগেই বলেছিলেন ছেলের জন্য যা করার সবই করবেন। অন্যদিকে অপু অভিযোগ করেছিলেন, শাকিব ছেলের খোঁজ নেন না। তবে এবার কলকাতায় গিয়ে ছেলের পাশে শাকিব এবং অন্য একটি ছবিতে শ্রাবন্তী, জয় ও অপুকে দেখে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে।

এতে অনেকেই মনে করছেন জয় হয়তো একদিন তার বাবা-মায়ের মান-অভিমানের অবসান ঘটাবে। আবার এক হবে শাকিব-অপু। পারবেন তো ছোট্ট সেলিব্রিটি বনে যাওয়া আব্রাম খান জয়। আর সেটাই এখন দেখার বিষয়।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শাকিব,অপু,সাতকাহন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist