কুবি প্রতিনিধি

  ২১ অক্টোবর, ২০১৯

কুবি ছাত্রী হলের ১১৩ নম্বর কক্ষ ‘টর্চার সেল’!

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ছাত্রী হলের ১১৩ নম্বর কক্ষ টর্চার সেলের প্রাণকেন্দ্র বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা। ওই কক্ষে রয়েছে শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী আইভি রহমানের রাজত্ব, সেখানে তিনি একাই থাকেন। তার নেতৃত্বেই চলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে, নির্যাতনের সময় ভুক্তভোগীদের আর্তনাদ যেন বাইরে থেকে শোনা না যায়, সে জন্য উচ্চস্বরে গান বাজানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেত্রীর কথামতো না চললে, ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। গত জানুয়ারিতে হলের ডাইনিং ম্যানেজার লিপি আক্তারকে কক্ষে নিয়ে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে মারধর করা হয়েছে। এ সময় আইভি রহমানের সঙ্গে ছিলেন ছাত্রলীগের পদধারী একাধিক নেত্রী, তারা সবাই সিনিয়র শিক্ষার্থী। তবে ছাত্রলীগ থেকে বলা হয়, মারধরের ঘটনা ঘটেনি, কথা কাটাকাটি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রী হলে থাকা দুই ছাত্রী বলেন, হলের খাবার বা কোনো অনিয়ম নিয়ে কথা বললেই শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন করা হয়। নাশকতার সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের পুলিশে দেওয়ার জন্য পুলিশ নিয়ে আসার অভিযোগে মানববন্ধনও করেছেন এই হলের ছাত্রীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মারধরের শিকার এক ছাত্রী বলেন, ছাত্রলীগের কোনো একটি কর্মসূচিতে না গেলেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের অত্যাচারের শিকার হতে হয়। আবার কখনো পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য একটিমাত্র আবাসিক হল হওয়ায় সেখানে সিটের তীব্র সংকট রয়েছে। অথচ আইভি রহমান হলের ১১৩ নম্বর কক্ষটি একাই দখল করে আছেন। শিক্ষার্থীদের কে সিট পাবে আর কে পাবে না— সবই নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।

আইভি রহমান ছাত্রীদের প্রায় শাসিয়ে বলেন, হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে সিট বণ্টনের অধিকার শুধু আমার। আমি আমার হলে আমার ইচ্ছামতো সিট বণ্টন করব। প্রশাসনকে অভিযোগ করবেন, করেন। সাংবাদিকরা লিখবেন তো, লিখে দেন। এমনটাই প্রচার করে বেড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে।

আইভি রহমান অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার কক্ষে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনাকে গুজব বলে অভিহিত করেন। ডাইনিং ম্যানেজারকে মারধরের অভিযোগটিকে আংশিক সত্য বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বড় বোনরা যখন ডাইনিংয়ের টাকার হিসাব ঠিকভাবে দিচ্ছিলেন না, তখন আমরা কথা বলি। বিষয়টি নিয়ে কথা কাটাকাটিও হয়েছিল। কেউ কাউকে মারধর করেনি।’

ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো টর্চার সেল নেই। ছাত্রলীগের কেউ যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ছাত্রী হলে যে মারধরের ঘটনা ঘটেছিল, তা আমরা বসে মীমাংসা করে দিয়েছি।’ ছাত্রলীগ নেত্রীর এক কক্ষে দখল করে থাকা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে, ওই কক্ষে দুজন শিক্ষার্থীই থাকেন।

ছাত্রলীগ নেত্রীর একা এক কক্ষ দখল করে থাকা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের প্রভোস্ট মো. সাদেকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের হলে ছাত্রীদের সিট সংকট অনেক। কেউ যদি একা একটি কক্ষ দখল করে রাখে, তা অবশ্যই অন্যায়। আমরা দুই দিনের মধ্যে মিটিং করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’ ছাত্রীদের ওপর অত্যাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে হল প্রশাসন খুব শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এমন কোনো ঘটনার সত্যতা মিললে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।’

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কুবি,ছাত্রী হল,টর্চার সেল,ছাত্রলীগ নেত্রী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close