নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ এপ্রিল, ২০১৯

ঝরে পড়েছে সোয়া ৪ লাখ

এসএসসি থেকে এইচএসসি

উপবৃত্তিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মাত্র দুই বছরে সোয়া ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। এ বছর তাদের এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পারছে না। দুই বছর আগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাস করেছিল ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন। তাদের মধ্যে গতকাল শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১০ লাখ ১ হাজার ৭১৭ জন। সেই হিসাবে মোট বাদ পড়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার পাঁচজন। এই বাদ পড়াটাকে শিক্ষাবিষয়ক এনজিওর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের কর্ণধার রাশেদা কে চৌধূরী ঝরেপড়া হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শিক্ষার্র্থীদের এই ঝরেপড়া রোধ করতে দেশের শিক্ষাবিষয়ক এনজিওগুলো বিদেশ থেকে আর্থিক অনুদান নিয়ে থাকে।

জানা যায়, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট অংশ নিচ্ছে ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ জন। বাকিরা অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী। তবে সোয়া ৪ লাখ শিক্ষার্থীর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ না নেওয়াকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেছেন মাধ্যমিকের তুলনায় উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমকে ঝরেপড়া বলা ঠিক হবে না। এই স্তরে নানা বাস্তবতা কাজ করে। পরিসংখ্যান মেলালে দেখা যাবে, মাধ্যমিকে ছাত্রী বেশি পাস করেছিল। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে ছাত্র পরীক্ষার্থী বেশি। এর প্রধান কারণ অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। আর যাদের বিয়ে হয়নি কিন্তু পাঠ বিরতি করেছে, তারা নিরাপত্তাসহ নানা সামাজিক কারণে কলেজে ভর্তি হয়নি। অভিভাবকরা এই বয়সের মেয়েকে দূরে পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। আর যে সংখ্যক ছেলে কমেছে, তাদের অনেকেই হয়তো কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে। তাদের একটি অংশ কারিগরি শিক্ষা নিচ্ছে। তাদের হয়তো পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পাওয়া যাবে। আবার কেউ কেউ কলেজের টেস্ট পরীক্ষায় পাস করেনি। তাছাড়া এসএসসিতে যাদের শিক্ষার মান দুর্বল তারা এইচএসসিতে টিকতে না পেরে জীবনে বাঁচার জন্য অন্য পথ বেছে নিয়েছে। অন্যদিকে আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের অভিভাবকরা চিন্তা করেন, এসএসসি পাস করেছে এই যথেষ্ট, সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করার ক্ষমতা যেহেতু নেই, তাই আর লেখাপড়া কী লাভ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ২০১৭ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫২ জন। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ১ হাজার ৭১৭ শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৩৫ জন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর লেখাপড়া ছেড়েছে। অপরদিকে দুই বছর আগে যেহেতু মাধ্যমিক পাস করেছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন এবং এরপর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫২ জন; সেই হিসাবে পাসের পরই হারিয়ে গেছে ৯১ হাজার ৯৭০ জন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে কিছু কারিগরি শিক্ষার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হলেও বাকিরা লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়েছে মাধ্যমিক পাসের পরই।

এবার মোট ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাদরাসার আলিমে ৮৮ হাজার ৪৫১ জন এবং কারিগরিতে এইচএসসি (বিএম) পরীক্ষার্থী ১ লাখ ২৪ হাজার ২৬৪। মাদরাসা বোর্ডে দাখিল পরীক্ষার পর দুই বছর আগে ১ লাখ ২ হাজার ৫৫৫ জন নিবন্ধন করেছে। তাদের মধ্যে ৬৯ হাজার ৪৩ জন নিয়মিত হিসাবে এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আর কারিগরিতে একইভাবে একাদশ শ্রেণিতে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৫ জন নিবন্ধন করে এবার ৯৮ হাজার ৯২৪ জন নিয়মিত হিসেবে অংশ নিচ্ছে। এবার মোট অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ৩ লাখ ৩১ হাজার ২০২ জন। এর মধ্যে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ২৯০ জন। মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী ১৫ হাজার ২৯৬ জন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫০ জন অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬২২ জন, রাজশাহী বোর্ডে ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৫৪, কুমিল্লা বোর্ডে ৯৫ হাজার ২০২, যশোর বোর্ডে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০৯, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৯৯ হাজার ৬৬৪, বরিশাল বোর্ডে ৬৪ হাজার ৯১৯, সিলেট বোর্ডে ৭৬ হাজার ৬৯৮ এবং দিনাজপুর বোর্ডে ১ লাখ ২৪ হাজার ৮৭৯ জন পরীক্ষার্থী।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তরুণ কুমার সরকার এসএসসি থেকে এইচএসসিতে শিক্ষার্থী হ্রাস পাওয়ার এ তথ্য স্বীকার করেছেন। তার মতে, মেয়েদের বিয়ে এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে পরিবারের নানা কাজে জড়িত হওয়ার কারণে প্রতি দুই বছর পরপরই এসএসসি থেকে এইচএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার্থী কম হয়। এটা অস্বাভাবিক কোনো পরিসংখ্যান নয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এসএসসি,এইচএসসি,শিক্ষার্থী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close