ঢাবি প্রতিনিধি

  ০৬ জুলাই, ২০১৮

বিএসিবি বার্ষিক সাধারণ সভা

সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নে ৪ দফা দাবি ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টস (বিএসিবি) এ মেম্বার ডিরেক্টরি প্রকাশনা ও বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বায়োকেমিস্টদের কর্ম পরিধি ও পেশাগত সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নে ৪ দফা দাবি ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়।

শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবায় ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টদের ভূমিকা’ শীর্ষক মূল বক্তব্যে এ দাবি ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। দাবি ও প্রস্তাবনাগুলো হলো: ১. দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের স্বার্থে যুগোপযোগী স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বায়োকেমিস্টদের কর্ম পরিধি ও পেশাগত সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা, ২. মেডিকেল ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে বায়োকেমিস্ট বা ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট পদ বাধ্যতামূলক করা, ৩. বায়োকেমিক্যাল, ইমিউনোলজিক্যাল ও মলিকুলার টেস্ট রিপোর্টে স্বাক্ষরের অধিকার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা এবং ৪. স্বাস্থ্যনীতি নির্ধারনী যে কোনো পর্যায়ে গঠিত কমিটিতে বিএসিবির ন্যূনতম একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।

মূল বক্তব্যে হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, মেডিক্যাল বায়োকেমিস্টগণ এমবিবিএস কোর্সে এক বছর (৪০০ নম্বর) ও পরবর্তীতে এমফিল কোর্সে একবছর (২০০ নম্বর) প্রাণরসায়ন অধ্যয়ন করে থাকেন এবং থিসিসের প্রয়োজনে এক বছর ল্যাবরেটরীতে গবেষণামূলক কাজ করে থাকেন। অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বায়োকেমিস্টগণ চার বছরের স্নাতক (সম্মান) কোর্সে (২৪০০-২৮০০ নম্বর) ও একবছরের স্নাতকোত্তর কোর্সে (৮০০-৯০০ নম্বর) বিস্তৃতভাবে প্রাণরসায়ন অধ্যয়ন করেন এবং ল্যাবরেটরীতে ব্যবহারিক অনুশীলন করে থাকেন। দক্ষতার বিচারে তাই বায়োকেমিস্টগণ অবশ্যই এগিয়ে।

তিনি বলেন, ল্যাবরেটরীসমূহে রিপোর্ট স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যনীতিতে সুনির্দিষ্টভাবে রিপোর্ট স্বাক্ষরকারী বিষয়ক কোনো নীতিমালা নেই। ফলে বায়োকেমিস্টগণকে পেশাগতভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়াসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে বায়োকেমিস্টগণ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরীসমূহে প্রতিষ্ঠিত এবং তাদের স্পেশালিটি ও ল্যাবরেটরী পরীক্ষার রিপোর্টে স্বাক্ষরের অধিকার রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বায়োকেমিস্ট বা ল্যাবরেটরী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ ল্যাবরেটরীতে খন্ডকালীন সময় কাজ করেন, ফলে পরীক্ষার মান যথাযথভাবে যাচাই করার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ থাকেনা। তাই যাচাই ব্যতিরেকে রিপোর্ট স্বাক্ষর করে থাকেন। ফলে তাদের রিপোর্টে নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়না, যা স্বাস্থ্যসেবার জন্য হুমকি স্বরূপ।

তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় মেডিক্যাল বায়োকেমিস্ট চিকিৎসকদের সংখ্যা অপ্রতুল। তাই দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের স্বার্থে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বায়োকেমিস্টদের কর্মপরিধি ও পেশাগত সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিএসিবির সভাপতি অধ্যাপক ড. ইমরান কবিরের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. আনোয়ার হোসেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. এম. ইকবাল আরসালান, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস বাংলাদেশের ব্যুরো প্রধান জুলহাস প্রধান এবং বিএসিবি এর সদস্য অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বক্তব্য রাখেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিএসিবি’র সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দেশে মানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা খুবই জরুরী। এর জন্যে প্রয়োজন সমন্বয়ের। ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট, যিনি সরাসরি একটি রিপোর্ট তৈরী করেন, তিনি সেই রিপোর্টে সই করবেন। অন্যদিকে একজন ডাক্তার তো অবশ্যই সই করবেন। কিন্তু যদি শুধু ডাক্তারই সই করেন আর বায়োকেমিস্টদের সই না থাকে, তাহলে বিষয়টা কেমন দাড়ায়? রিপোর্টে তো দুই জনেরই সই থাকা দরকার। আমরা সেটাই চাই।

সভাপতির বক্তব্যে ইমরান কবির বলেন, মেধার দিক দিয়ে চিন্তা করলে ডাক্তার আর বায়োকেমিস্টদের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। এখন যদি আমরা বিতর্ক করি তাহলে দুইপক্ষেরই যুক্তি আছে। বিতর্ক করে জেতা যায় ঠিকই কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কল্যাণ হয়না। বিতর্কে একপক্ষ জেতে, অন্যপক্ষ হারে। কিন্তু পক্ষ যেখানে দুটোই দরকার, সেখানে বিতর্ক ফলপ্রসু হয়না।

তিনি বলেন, মেডিকেলে নেতৃত্বে ডাক্তাররা থাকবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। অন্যদিকে, চিকিৎসার নতুন সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সম্পর্কে বায়োকেমিস্টদের ধারণা থাকে। তাই ডাক্তার এবং বায়োকেমিস্ট এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করা প্রয়োজন। এখন এটা কিভাবে করা যায়সেটি আমাদের দেখতে হবে। অনুষ্ঠানে দেশে প্রথমবারের মতো বায়োকেমিস্টদের ডিরেক্টরি প্রকাশ করা হয়। অতিথিরা এর মোড়ক উন্মোচন করে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টস (বিএসিবি) বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরীতে কর্মরত বায়োকেমিস্টদের একটি পেশাজীবী সংগঠন। এটি ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত হয়। সংগঠনটির নিবন্ধন নম্বর ঢ-০৯৫৫৬।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএসিবি,সুনির্দিষ্ট নীতিমালা,প্রস্তাবনা,উপস্থাপন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist