ঢাবি প্রতিনিধি
‘নবম ওয়েজবোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকদের গ্রেডভুক্ত করার দাবি’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আসিফ ত্বাসীন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান নয়ন শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলে নবম ওয়েজ বোর্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক’ ও দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি/সংবাদদাতা’ পদ দু’টি গ্রেডভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। সমিতির দপ্তর সম্পাদক রায়হানুল কবির আবির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজবোর্ড গঠনের মাধ্যমে সরকার সাংবাদিকদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ করতে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ঘোষণা অনুযায়ী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গত ২৯ জানুয়ারী বিচারপতি মো. নিয়ামুল হককে চেয়ারম্যান করে নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করেছে। এজন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তথ্যমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বিবৃতিতে বলা হয়, অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা " বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক " ও " বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার/প্রতিবেদক/প্রতিনিধি/সংবাদদাতা" হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ ও দমনপীড়নের বিরুদ্ধে এদেশের ছাত্র-জনতাকে উজ্জীবিত করতে তারা ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জাগরণের পেছনেও ছিলো তাদের অনবদ্য ভূমিকা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করা শহীদ সাংবাদিক চিশতী শাহ হেলালুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরবর্তীতে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনসহ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকের ভূমিকা ছিলো অনন্য। জাতির যেকোনো ক্রান্তিকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকেরা শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের লেখনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর ফলে বিভিন্ন সময় তারা হুমকি-ধমকি এমনকি শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হয়েছেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, দেশের গণমাধ্যমগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক/প্রতিনিধিদের কাজের মূল্যায়ন সে অনুযায়ী করেনি। দায়িত্বের ক্ষেত্রে একজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদককে দিয়ে নিজস্ব প্রতিবেদকের সমান বা তারও বেশি কাজ করানো হয়। অথচ বেতনের ক্ষেত্রে কখনোই তাঁদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়না।
এছড়া সেখানে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আটটি ওয়েজ বোর্ড হলেও কোনোটিতে " বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক " ও " বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার/প্রতিবেদক/প্রতিনিধি/সংবাদদাতা " শ্রেণিতে গ্রেডভুক্ত হয়নি। ওয়েজ বোর্ডে এ সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা না থাকায় যুগের পর যুগ তাঁরা অবহেলিত হয়ে আসছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকদের নিয়োগ প্রদানকালে "প্রতিনিধি " হিসেবে খন্ডকালীন এবং অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। কাগজে-কলমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি বলা হলেও তাদেরকে নিজস্ব প্রতিবেদকের মতোই ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে তাঁদের কাজের এই সময়কে " কাজের অভিজ্ঞতা" হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়না। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকদের সপ্তাহের সাত দিনই অফিস করতে হয়, কোনো সাপ্তাহিক ছুটি থাকেনা। অন্যদিকে বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে তাদেরকে অফিসের ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করতে হয়। সেখানে গণমাধ্যমভেদে বড় ধরণের বৈষম্য লক্ষণীয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ দেশের উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়ন, তরুণ ও মেধাবী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতায় উৎসাহিতকরণ, বেতন বৈষম্য দূরীকরণ এবং জাতীয় ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকের অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করে নবম ওয়েজ বোর্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের " বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক " ও দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি/সংবাদদাতা‘ পদ দুটি যথাক্রমে ৮ম ওয়েজ বোর্ডের গ্রেড-৩ ও গ্রেড-৪ এর সমমর্যাদায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী ও ওয়েজ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ দায়িত্ব অনুযায়ী কাজের মূল্যায়ন পেতে তরুণ সাংবাদিকদের এ দাবি আদায়ে সকল অগ্রজদের সহযোগীতা কামনা করেন।
পিডিএসও/রানা