এস এম মুকুল

  ১৯ মে, ২০১৭

ভালোমন্দ

সমকালের কড়চা

শিশুর কাঁধে বইয়ের বোঝা : প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যাগসহ বই-খাতার ওজন দেহের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি হবে না এই মর্মে দ্বিতীয় দফায় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বই-খাতা ও ব্যাগের ওজন বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। এতে শিশুরা লেখাপড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বই-খাতা ও ব্যাগের ওজন যাতে অধিক না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রদান করে-এমন বিদ্যালয়গুলোয় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, এমএমসির সদস্য, শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পুনরায় বিষয়টি বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

মন্তব্য : আশ্চর্য লাগে এই নিয়ে দুই দফায় বইয়ের বোঝা কমাতে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। হলে কী হবে—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হর্তাকর্তারা এই নির্দেশনাকে আমলে নিলে তো! এই ঢাকা শহরে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এসব নিয়ম মানছে না। কেজি, ওয়ান লেভেলের শিক্ষার্থীদের বোর্ড সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত বইয়ের বাইরে কমপক্ষে ৫-৭টি অতিরিক্ত বই পড়তে দেওয়া হয়। ক্লাস ওয়ান লেভেলের বাচ্চা ইংরেজি গ্রামার শিখবে বিষয়টি খুবই অস্বাভাবিক! শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা এ বিষয়ে কঠোর না হলে শুধু নির্দেশনা জারি করে কোনো লাভ হবে না। এখনই যে কাজটি করতে হবে তা হলো-অভিন্ন শিক্ষা সিলেবাসে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করা। বোর্ড নির্ধারিত সিলেবাসের বাইরে কোনোরূপ বাড়তি সাবজেক্ট বা বই পাঠ্যসূচিতে দেওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা, ছুটি মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হতে হবে। হোমওয়ার্ক ছাড়া বিষয়ভিত্তিক পৃথক বা বাড়তি খাতার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তা না হলে শিশুর ওপর থেকে পরীক্ষা আর বই-খাতা নামের ভূতের বোঝা নামানো যাবে না।

সংসদের আসন কেন বাড়ছে না : ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সীমানা অনুসারে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সাধারণ যে ৩০০ আসন নির্ধারিত হয়েছিল তা আজও অপরিবর্তিত। সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ১৯৭২ সালে ১৫টি করা হয়। এ সংখ্যা এখন ৫০। তবে সংবিধান সংশোধন না করলে চলতি সংসদের মেয়াদ শেষে সংরক্ষিত আসন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। জানা গেছে, ছোট কিছু রাজনৈতিক দল মাঝেমধ্যে সংসদের আসন বাড়ানোর দাবি জানালেও বড় দলগুলোর এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। এই বাস্তবতার মধ্যে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্র্নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। তার আগে আগস্টের মধ্যে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়, সেপ্টেম্বরের মধ্যে খসড়া প্রণয়ন, অক্টোবরের মধ্যে ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক তালিকা অনুমোদন এবং এ সম্পর্কে দাবি/আপত্তি আহ্বান, নভেম্বরের মধ্যে এ-সংক্রান্ত শুনানি গ্রহণ এবং ডিসেম্বরে সীমানা চূড়ান্ত করবে। তার আগে সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দল, সুধীসমাজ ও গণমাধ্যমের মতামত গ্রহণ করতে পারে ইসি।

মন্তব্য : স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার করেছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে। সাড়ে সাত কোটির জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ষোলো কোটিতে পৌঁছায়। ১৯ জেলা থেকে ৬৪ জেলা হয়েছে। চারটি বিভাগ ছিল, আটটি বিভাগ হয়েছে। সিটি করপোরেশন, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, পৌরসভাও অনেক বেড়েছে। ৪৫ বছরে ভোটার সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হলেও কেন আসন বাড়েনি এটা ভাববার বিষয় বটে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ভোটার বৃদ্ধি এবং সংসদীয় এলাকার কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার জন্য সংসদেও আসন সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার নতুনভাবে ভাবতেই পারে। অবশ্য এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংসদের আসন ৩০০ থেকে ৩৫০ বা ৪৫০ করার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ২০০ প্রতিনিধি নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব ছিল একটি রাজনৈতিক সংগঠনের। সময়ের প্রয়োজনীয়তা বিচারে নতুনভাবে সংসদীয় আসনকে সাজালে দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতি আরো ত্বরান্বিত হবে বৈকি!

বিনাধানে বিপ্লব : ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে কৃষকরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ধান উৎপাদন করছেন। পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধানের নতুন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এ অসাধ্য সাধন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। ফলে চাল আমদানিকারক থেকে রফতানিকারক হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। আইএইএ এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহযোগিতায়

বিনাধান-৭-সহ ধানের ১৩টি জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। প্লান্ট মিউটেশন ব্রিডিং নামে বিকিরণনির্ভর এক ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব ধানবীজ উদ্ভাবন করা হয়েছে। নতুন এসব জাতের ফসল দ্রুত ঘরে তোলা যায় এবং হেক্টরপ্রতি ফলনও বেশি হওয়াতে দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের কাছে এ জাতের ধান চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আমনের জনপ্রিয় দুটি জাত বিনাধান-৭ ও বিনাধান-১৬ ঘরে তোলার পর একই জমিতে সহজেই আলু, সরিষা, ডালজাতীয় বা রবিশস্য ফলাতে পারছেন কৃষক।

মন্তব্য : এ কথা সত্য, ধান চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পাশাপাশি আরো নতুন নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। এজন্য দেশের কৃষিবিজ্ঞানী ও গবেষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমকে সাধুবাদ এবং শ্রদ্ধা। আমাদের দেশে প্রতি বছর চাল উৎপাদন ও ভোগ হচ্ছে গড়ে তিন কোটি ৬০ লাখ টনেরও বেশি। বৈশ্বিক চাল উৎপাদন ও ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। অন্যদিকে দেশের কৃষকদের জন্য বড় সমস্যা সেচের অভাব, খরা, জমির লবণাক্ততা, অকালবন্যা ও উর্বরা শক্তি হ্রাস ইত্যাদি। আবার আবাদি জমির হ্রাস ও উর্বরা শক্তি হারিয়ে চাষের অনুপযোগী হওয়াটাও অন্যতম সমস্যা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই নতুন উদ্ভাবিত জাতের ফসলগুলো আবাদের মাধ্যমে কৃষকরা খাদ্যচাহিদা পূরণ করেও উদ্বৃৃত্ত পর্যায়ে উৎপাদনকে এগিয়ে রাখছেন। প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে ও খাপ খাইয়ে দেশের খাদ্য চাহিদাকে অনন্য মাত্রায় আসীন করার জন্য বাংলার কৃষকদের জানাই লাল সালাম। বিনা-৭-এর মতো নতুন জাত দেশের হাওরাঞ্চলের জন্য উদ্ভাবন করতে পারলে যা ৮৫-৯৫ দিনের মধ্যে উচ্চফলন সম্ভব হবে তাহলে ধান উৎপাদনে আরেক বিপ্লব ঘটবে বাংলাদেশে।

ইনকামিং কলে সরকারের ক্ষতি : বিদেশ থেকে আনা কলের রেট সরকার দেড় সেন্ট (এক টাকা ২০ পয়সা) নির্ধারণ করে দিলেও অপারেটররা আনছে দুই সেন্ট (এক টাকা ৬০ পয়সা) করে। কিন্তু অতিরিক্ত যে টাকা আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো আয় করছে তার রাজস্বও পাচ্ছে না সরকার। এভাবে বিদেশ থেকে আসা বৈধ কলের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে কমছে সরকারের রাজস্ব আয়। কিন্তু যারা বিদেশ থেকে এই কল আনছেন তাদের আয় কমছে না। জানা গেছে, গত দেড় বছরে সরকার অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে বা আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে বিদেশ থেকে কল আনলেও বেশি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের দেওয়া এক হিসেবে এই চিত্র ফুটে উঠেছে।

মন্তব্য : চোখের সামনে দিনের পর দিন এমন অনিয়ম চলে কী করে? নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশ থেকে আসা প্রতি এক মিনিট কল থেকে যে আয় হয়, তার ৪০ শতাংশ সরকার, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ আইসিএক্স (ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ), ২২ দশমিক ৫ শতাংশ মোবাইল ফোন অপারেটর আর বাকি ২০ শতাংশ আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো পেয়ে থাকে। প্রতি মিনিটে ৪০ পয়সা হিসাবে ১৮ মাসে কমপক্ষে দেড় হাজার কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে সরকারের ক্ষতি দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। ভাবতে অবাক লাগে, বিটিআরসি ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা কী করছেন তাহলে? রাষ্ট্রের আইন না মেনে অবৈধ কল এবং রাজস্ব ফাঁকির পেছনে নিশ্চয়ই তাদেরই কারো না কারো যোগসাজশ আছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্নীতির আশ্রয় ছাড়া এমন কাজ সংঘটিত হওয়াটা যেমন অস্বাভাবিক, তেমনি তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে অনিয়ম করাটাও রহস্যজনক। মোটকথা, নিন্ত্রক সংস্থা কোনো অবস্থাতে দায় এড়াতে পারে না। রাজস্ব ফাঁকিজনিত সরকারের এই ক্ষতির কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিচার হলে সব অনিয়ম বন্ধ হবে বলে জনগণের ধারণা।

লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক ও কলাম গবেষক [email protected]

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শিশুর কাঁধে বই
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist