নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ফেসবুকে ভাইরাল তথ্য

ব্যক্তিগত ও সামাজিক মর্যাদাবোধ ঝুঁকিতে

ধীরে ধীরে নিরাপত্তা হারাচ্ছে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য। ঝুঁকিতে পড়ছে সামাজিক মর্যাদাবোধ; ব্যক্তির গোপনীয়তা দিন দিন আরো বেশি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এক্ষেত্রে বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। একটু ভাইরাল হওয়ার নেশায় অন্যের গোপনীয়তায় আঘাত হানতে দ্বিধা করছে না অনেকেই। এক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক প্রযুক্তি ও রাষ্ট্রের আইনি কাঠামো সঠিকভাবে গড়ে না উঠাকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।

বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি ব্যক্তির গোপন তথ্য গোপনে ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে যাওয়া এবং অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের ডেটা হাতিয়ে নেওয়া থেকে এমন কিছু খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন। এক গবেষণার ফলাফলের প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে বলে জানাচ্ছে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।

ম্যাসাচুয়েট ইনস্টিটিউশন অব টেকনোলজির গবেষকরা ‘ম্যাচহাবিলিটি’ নিয়ে এক গবেষণায় এমন কিছু পেয়েছেন। তারা সেখানে বেশকিছু ডেটা বিশ্লেষণ করে এমন ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছেন। গত শনিবার সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, বিজ্ঞানী এর জন্য একটি মোবাইল অপারেটর এবং সিঙ্গাপুরের স্থানীয় এ পরিবহন প্রতিষ্ঠানের ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন। ওই প্রতিবেদন বলছে, বেশির ভাগ সময় দেখা যায় ব্যক্তির মোবাইল ডেটা যেকোনো উপায়েই হোক তৃতীয় কোনো পক্ষ হাতিয়ে নেয়। অনেক সময় ব্যক্তির ভৌগোলিক অবস্থানও জেনে যায়।

এমনকি মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের লেনদেন, গণপরিবহনে ব্যবহার করা স্মার্ট কার্ড, সামাজিক মাধ্যমে থাকা অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য মোবাইল অ্যাপের মতো সংবেদনশীল তথ্যও নিয়ে নিচ্ছে। যা ব্যক্তির জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে বলে এমআইটির ওই জরিপ বলছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রতিটি ডেটাই খুব সংবেদনশীল। আমরা চিন্তা করতে শুরু করেছি কীভাবে এত বৃহৎ পরিমাণের ডেটাগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া যায়। আমরা চাই ব্যক্তি তার গোপনীয়তার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকুক।

এমআইটির নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষণাটির সহ-লেখক কার্লো রাট্টি বলেন, আমরা এমন একটি ব্যবস্থা করতে চাই যেখানে এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে পারি। কারণ ব্যক্তির গোপনীয়তার নিরাপত্তা সবার আগে। এমন গবেষণার ফলে জনসচেতনতাও বাড়বে বলে তারা মনে করছেন।

রাজধানীতে ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার ভিডিও এখন ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কারো স্বাভাবিক মৃত্যুর দৃশ্যও ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু ভাবা হচ্ছে এর নেতিবাচক দিকটিও।

অনুমতির তোয়াক্কা না করেই যে যার ইচ্ছা মতো তুলছে অন্যের ছবি আবার করছে ভিডিও। আর তা একের পর এক শেয়ার হচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এতে দিনে দিনে অনিরাপদ হয়ে উঠছে ব্যক্তিগত তথ্য। প্রশ্ন উঠছে, ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তায় রাষ্ট্রের আইনি কাঠামো কতটা পর্যাপ্ত।

কলেজ পড়ুয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, সেটা একটা ভয়ংকর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। রাস্তায় মানুষকে পিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে তাকে সাহায্য না করে ভিডিও করা হচ্ছে, আবার অনেক পরিবার আছে দোষ না করেও শাস্তি মুখোমুখি হচ্ছে। সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার সংরক্ষণে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ বিষয়ে কিছুটা দৃষ্টি দেওয়া হলেও প্রযুক্তিবিদদের মতে, সময় এসেছে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের।

প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জ্বোহা বলেন, ভাইরালের বিয়ষটি এখনো আইনে পূর্ণাঙ্গভাবে সংযোজন করা হয়নি। সহসাই ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপনের মধ্যমে বিষয়গুলো নজরদারিতে আনার কথা জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার সোশ্যাল মিডিয়া এগুলো নজরদারিতে রাখবে। কখন কোনো ইস্যুটা অযথাই মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বা কাউকে বিবৃত করছে সঙ্গে সঙ্গে সেটা ট্র্যাক করা এবং এটার পেছনে কারা আছে তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় ডেটা পলিসি প্রণয়ন করা হচ্ছে বলেও জানান প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রযুক্তি,ঝুঁকি,ভাইরাল,সামাজিক মর্যাদা,গবেষণা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close