সম্পাদকীয়

  ০৩ এপ্রিল, ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর সব নির্দেশনা মানা হোক

নির্দেশনা না মানার প্রবণতা যেন অনেকটা ক্ষয়রোগের মতো আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। তারপরও আমরা আমাদের বোধের দরজাকে উন্মুক্ত করতে পারিনি। মরচে পড়া বোধের সঙ্গেই বসবাস করছি অবলীলায়। এটাকে আমরা আমাদের নৈতিক পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। বোধ জাগ্রত থাকলে পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আমরা ঘরে ঘরে কেমিক্যাল কারখানা এবং গোডাউন বানিয়ে পুরো এলাকাকে বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারতাম না।

আট বছরের ব্যবধানে পরপর দুটি একই ধরনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে শতাধিক লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও আমাদের বোধোদয় হয়নি।

পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার আগুনের তাপ কমতে না কমতেই নতুন ঢাকার বহুতল ভবনে আগুন। এ আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান ২৭ জন। এখানেই শেষ নয়। বনানীর বহুতল ভবনের আগুনের দাবদাহে মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের শোকের ছায়া সরতে না সরতেই গুলশান কাঁচাবাজারে আগুন। এখানে কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও সম্পদহানি হয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু কেন?


অগ্নিকাণ্ড রোধে প্রধানমন্ত্রী ১৫ নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশের প্রধান নির্বাহীর নির্দেশনা আইনের সমতুল্য। সুতরাং এ নির্দেশনা মেনে চলার ক্ষেত্রে আমরা কেউই যেন অবহেলা না করি


এ প্রশ্নের জবাবও সম্ভবত কমবেশি সবারই জানা। জবাব একটাই। নির্দেশনা ও আইন না মানার প্রবণতাই আজ আমাদের এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। শুধু অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রেই নয়। পানির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ঢাকা মহানগরের প্রতিটি খাল ও নদী এ আইন বা নির্দেশনা অমান্যকারীদের পেশিশক্তির কবলে পড়ে মহাসংকটের কবলে পড়েছে। কিছু কিছু খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারের কঠিন অবস্থানের কারণে খাল ও নদী উদ্ধারের কর্মসূচি এগিয়ে চলেছে সাবলীল গতিতে। যদিও প্রভাবশালীদের বোধহীন আচরণে মাঝেমধ্যে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ইতিবাচক এই কর্মসূচি। তবে তা সরকারের জিরো টলারেন্সনীতি এবং সাধারণ মানুষের ইতিবাচক ভূমিকার কারণে তাদের অনৈতিক প্রতিরোধ পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।

আমরা কিছু সময়ের ব্যবধানে এ ক্ষেত্রে একটি ভালো ফলাফল পেতে যাচ্ছি বলে আশা করতে পারি। মহাসড়কের ব্যাপক প্রাণহানির প্রশ্নেও একই কথা উচ্চারিত হতে পারে। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক, নীয়মনীতি লঙ্ঘন করে বেপরোয়া গাড়ি চালানো এবং পথচারীদের কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে পথচলাকে এর জন্য দায়ী করা যেতে পারে। একই সঙ্গে সুশৃঙ্খলভাবে এদের পরিচালনার জন্য যারা রয়েছেন, তারা তাদের দায়িত্ব পালন না করে আইন অথবা নির্দেশনা অমান্যকারীদের পাশে থেকে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষে তাদের আরো উৎসাহিত করছেন। তারাও আইন অথবা নির্দেশনা অমান্যকারীদের মতো একই অপরাধে অপরাধী।

আইন অথবা নির্দেশনা অমান্যকারীদের প্রতিহত করার জন্য সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্সনীতি অবলম্বন করে এগিয়ে এসেছে। আর সে কারণেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সরকারকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেছে। তারা এ কাজে সরকারের পাশে আছে ও থাকবে। গত সোমবার অগ্নিকাণ্ড রোধে প্রধানমন্ত্রী ১৫ নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশের প্রধান নির্বাহীর নির্দেশনা আইনের সমতুল্য। সুতরাং এ নির্দেশনা মেনে চলার ক্ষেত্রে আমরা কেউই যেন অবহেলা না করি। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা, যারা এ নির্দেশনাকে বাস্তবায়িত করার কাজে নিয়োজিত আছেন, তারা যেন অনৈতিকতার সঙ্গে জড়িয়ে এই বিশাল কর্মকাণ্ডকে বিপথে পরিচালিত করতে না পারেন, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি থাকতে হবে। আমরা সজাগ থাকব আর সরকারকেও এ ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানাব।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নির্দেশনা,প্রধানমন্ত্রী,সম্পাদকীয়,অগ্নিকাণ্ড
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close