সম্পাদকীয়

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

কবে হবে বোধোদয়

আমরা কবে মানুষ হব! এ প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো একটি প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়। আর সে প্রশ্নটি হলো, তবে কি আমরা মানুষ হতে পারিনি? অনেকের মতে, মানুষ হওয়াটা অন্যতম কঠিন কাজের একটি। আমরা প্রতিদিন অনেক কঠিন কাজের সমাধান করে থাকি। কিন্তু নিজের ঘরে আলো জ্বালাতে পারিনি।

মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়েও নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। পারিনি বলেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেখলাম। আমাদের সমাজব্যবস্থার অপব্যবস্থার জাঁতাকলে পড়ে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি আগুনে পুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ জন। আহতের সংখ্যা ৭২।

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, চুড়িহাট্টার এ দুর্ঘটনা তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ঘটনাটি এবারই যে প্রথম ঘটল তা নয়। এর আগেও পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকার মানুষের ওপর এ রকম দুর্ভাগ্য নেমে আসে। সে সময় ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। ঘটনা সমগ্র বাংলাদেশকে নাড়া দেয়। নাড়া দেয় সরকারি প্রশাসনকেও।

সে সময় এ রকম দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে ১৭টি সুপারিশ আসে সরকারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। এরই মধ্যে আট-আটটি বছর অতিক্রান্ত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ১৭টির মধ্যে একটি সুপারিশ কার্যকর হলে নিমতলী থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না কখনোই। আগুনে পুড়ে মরতে হতো না তরতাজা মানুষগুলোকে।

সরকারি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সে কার্যক্রম ফাইল চালাচালির মধ্যেই আটকে থাকে আটটি বছর। পরের ঘটনার আর্তনাদ এখনো বাতাসে ভাসছে। পোড়া গন্ধ এখনো চুড়িহাট্টার দরজায় দরজায় গুমরে গুমরে আছড়ে পড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আবার গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। কমিটির সদস্য সংখা ১২। কমিটির সদস্য সংখ্যা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। মাথাব্যথা অন্যত্র।

আমরা মনে করি, ১২ সদস্যের কমিটি তাদের প্রতিবেদন যেদিন খুশি জমা দিতে পারেন। তবে, সর্বাগ্রে গত তদন্ত কমিটির সুপারিশে উঠে আসা প্রথম এবং প্রধান সুপারিশকে প্রাধান্য দিয়ে এ মুহূর্ত থেকে পুরান ঢাকার সব ধরনের ছোট-বড় কেমিক্যাল গুদাম বা গোডাউন উচ্ছেদের কাজ শুরু করতে হবে। তা না হলে তদন্ত নামের হিমায়িত ঘরের মধ্যে প্রতিবেদনকে ঘুমিয়ে থাকতে হবে আরো আটটি বছর।

আমরা মনে করি, নিমতলীর ঘটনা থেকে আমরা কোনো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারিনি। অথবা বলা যায়, শিক্ষা নেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের ছিল না। প্রকৃত অর্থেই যদি আমরা নিজেদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারতাম, তাহলে অপেক্ষার পাল্লা এত ভারী হতো না। প্রকৃত অর্থেই আমরা যেন নিজেদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছি। এই বোধের পাল্লাকে ভারী করার সময় এসেছে।

বিশেষ করে প্রশাসনের বেশ কিছু সদস্যের বোধের পাল্লায় এ পরিবর্তন আসাটা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। আপন ইচ্ছায় হোক অথবা আইনি সহায়তায় সরকারকে এ পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। অনৈতিক পথ পরিহার করে নৈতিকতার পথে প্রশাসনের এই সদস্যদের ফিরিয়ে আনতে হবে। আর ফিরিয়ে আনাটাই হবে সরকারের চূড়ান্ত সফলতা— আমরা সেই প্রত্যাশায় রইলাম।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চকবাজার ট্র্যাজেডি,আগুন,চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুন,পুরান ঢাকা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close