সম্পাদকীয়

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

তাদের এ বোধোদয়কে সাধুবাদ জানাই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। দেশের যুবসমাজকে রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত ছিল অপরিহার্য। শুধু তা-ই নয়, মাদকের বিষাক্ত থাবা যেভাবে সারা দেশকে গ্রাস করছে, তা অত্যন্ত ভয়াবহ। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় কঠোর পদক্ষেপ। আর প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণায় অবিচল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত বছরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে মাদকবিরোধী অভিযান। এ নিয়ে নানাজনের নানামত থাকলেও সাধারণ মানুষ তাকে স্বাগত জানিয়েছে।

ওই অভিযানে সন্দেহভাজন অনেক ইয়াবা পাচারকারী ও ব্যবসায়ী নিহত হয়। তবে শীর্ষ পাচারকারীদের একটি বিশাল অংশ ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু সুখবর হচ্ছে, গত শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে কক্সবাজারের ১০২ জন ইয়াবা কারবারি। তাদের মধ্যে ২৪ জন ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ‘গডফাদার’। তবে এখনো অনেকে গা-ঢাকা দিয়ে আছে। আমাদের প্রত্যাশা, তাদের মধ্যেও শুভবুদ্ধির উদয় হোক। এ ঘৃণ্য পেশা পরিত্যাগ করে ফিরে আসুক সুন্দর স্বাভাবিক জীবনে।

সরকারের দেওয়া ৯ শর্তে আত্মসমর্পণ করেছে কক্সবাজারের সাবেক এমপি বদির তিন ভাইসহ ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী। এ সময় তারা ৩ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ও ৩০টি দেশীয় পিস্তল জমা দেয়। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণকারীদের উদ্দেশে বলা হয়, তাদের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য যা যা করণীয় তা করা হবে; আইনগত সহায়তা দেওয়া হবে। আইনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে যাতে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নিষ্পন্ন করা যায়, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। প্রতি জেলায় এ রকম আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের কথা বললে এখন ইয়াবার কথাই আসে সবার আগে। এটি আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তা রোধ করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত নতুন বছরের শুরুতে তাদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজারের চিহ্নিত মাদক পাচারকারীদের একটি অংশ আত্মসমর্পণের আগ্রহ প্রকাশ করে।

শুধু তা-ই নয়, ইয়াবা কারবারিদের মধ্যেও এ পেশায় থাকা নিয়ে রয়েছে নানা মনোভাব। বিশেষ করে ইয়াবার কারণে সারা দেশের মানুষ টেকনাফসহ কক্সবাজার জেলার মানুষকে ঘৃণার চোখে দেখে। দেশের কোথাও তাদের কেউ হোটেল বা বাসা ভাড়া দিতে চায় না। এমনকি তাদের সন্তানদের পর্যন্ত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি নেয় না। এ লজ্জা থেকে বাঁচতে এবং দেশকে ইয়াবার আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে তাদের এ স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ। আমরা তাদের এ বোধোদয়কে সাধুবাদ জানাই। এ ছাড়া এখনো যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে তারাও যথাসম্ভব এই ইতিবাচক পথে শামিল হবে—এমনটাই প্রত্যাশা করছি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাধুবাদ,বোধোদয়,মাদক,ইয়াবা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close