সম্পাদকীয়

  ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯

স্বয়ংসম্পূর্ণতায় বাংলাদেশ

এক পা এক পা করে এগিয়ে চলেছে। স্বয়ংসম্পূর্ণতার দরোজায় কড়া নাড়তে আর বোধহয় তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকতে হবে না। অচিরেই নতুন সূর্যোদ্বয় দেখবে বাংলাদেশের মানুষ। আমিষে এখন আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতার দাবি করতেই পারি। মাছ, মাংস, ডিম এখন আমাদের দরোজায় এসে কড়া নাড়ে। সবজি উৎপাদন আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখায়। ফুলের ব্যবহার করতে শিখেছি। পণ্যটি এখন রফতানির দরোজায় প্রবেশ করেছে। শুধু চাল আমদানি বন্ধের অপেক্ষায় আছি। ঠিক এ রকম একটি মুহূর্তে চা উৎপাদনের সংবাদটি আমাদের মনের কোণে আরো কিছুটা আনন্দ অনুভূতির প্রদীপ জ্বালিয়ে গেল। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ আমাদের জানিয়ে গেল, চা উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন নবম।

চা উৎপাদনে আবার ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ। চা উৎপাদন ইতিহাসে এবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। বছরের শুরুতে অবশ্য চা চাষের ক্ষেত্রে কিছুটা বৈরী আবহাওয়া থাকলেও, তা অতিক্রম করে এ রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার চা-শিল্পের জন্য শুধু নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রশ্নেও একটি সুখবর বটে। লন্ডনভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটি’ প্রকাশিত তথ্য মতে, চা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে নবম। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দশম। গত শতাব্দীর শেষে বাংলা চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১তম। ১৯৮৯ সালে অবস্থান ছিল আরো একধাপ নিচে অর্থাৎ ১২তম।

২০১৬ সালে চা চাষে পুরোপুরি অনুকূল আবহাওয়ার মধ্যে রেকর্ড হয়েছিল। এবার সেই রেকর্ডকে প্রায় স্পর্শ করেছে প্রতিকূলতার মধ্য থেকেও। এখানে না বললেই নয়, চা উৎপাদনের মূল কারিগর হচ্ছেন চা শ্রমিকরা। মিডিয়ার কল্যাণে আমরা প্রায়ই লক্ষ করেছি, এসব কারিগর তাদের ন্যায্য পাওনা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে থাকেন। সর্ব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে আছেন। উৎপাদনের সুখবরের পাশাপাশি এটি আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। আমরা এই বেদনা থেকে মুক্তির প্রত্যাশা করি।

দেশ সবকিছুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক বৈষম্যকে সমান্তরালে আনতে না পারি, তাহলে আমাদের সব সফলতা কালিমালিপ্ত হতে বাধ্য। পৃথিবীব্যাপী এই বৈষম্য যখন বেড়েই চলেছে, তখন তার ছায়া যে আমাদের ওপরেও কিছুটা পড়বে—এটা স্বাভাবিক হলেও বলতে হয়, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাসনের কথা আমরা ভুলিনি। ভোলাটাও সম্ভব নয়। দেশ ও জাতি যত দিন জীবিত থাকবে, তার কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত মহাকাব্যিক এই ভাষণও তত দিন জীবিত থাকবে। তিনি মুক্তির সংগ্রাম বলতে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেছিলেন। এ দেশের মানুষ এখনো সেই অর্থনৈতিক মুক্তির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি। এ দায়িত্ব এখন তদীয় মেয়ের ওপর অর্পিত হয়েছে। আমরা মনে করি, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে তিনি তা বাস্তবায়িত করতে পারবেন। তার কাছে আমজনতার এটাই প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাদেশ,স্বয়ংসম্পূর্ণতা,সম্পাদকীয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close