সম্পাদকীয়

  ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

ফের রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা

পায়ে পাড়া দিয়ে বিবাদ বাধানোর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। রাখাইনে পুনরায় সেনা অভিযান শুরু হয়েছে। মিয়ানমারে দুই অদিবাসী বৌদ্ধ মাছ ধরতে গিয়ে ফিরে না আসা এবং দুদিন পর তাদের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের অজুহাতে রাখাইনে ফের অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

আর সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করছে বিজিপি ও উগ্রপন্থি রাখাইন জনগোষ্ঠী। এই ঘাতক জনসমষ্টি পাড়ায়-মহল্লায় গিয়ে নিরীহ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এ রকম অবস্থায় সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে যেকোনো সময় সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে টেকনাফ ব্যাটিলিয়ন-২ বিজিবি অধিনায়ক বলেছেন, মিয়ানমার সেনারা শুধু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে তা নয়। তারা সে দেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে, ফলে সেখানে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে তাতে অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার প্রস্তুতি নিতে পারে। সে জন্য সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। এর আগেও মিয়ানমার এ রকম একটি অজুহাত তুলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।

সে সময় তারা বলেছিল, একটি ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে কতিপয় সদস্যকে হত্যা করে। তারা এও অভিযোগ তোলে, রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গারা এই জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য এবং আশ্রয়দাতা। তাদের এ অজুহাত ধোপে টেকেনি। বিশ্বসম্প্রদায় তাদের এ অজুহাতকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, মিয়ানমারে যা ঘটেছে তা একটি পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ। এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা বৈ অন্য কিছু নয়।

মাঝখানে নাফ নদীতে অনেক জল গড়িয়েছে। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। উপরন্তু আবার শুরু হয়েছে রাখাইনে সেনা অভিযান। আতঙ্ক বাড়ছে। বাড়ছেও আশঙ্কা। যেকোনো মুহূর্তে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ধেয়ে আসতে পারে রোহিঙ্গার ঢল। এ ঢল আসাকে কীভাবে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করবে, তা বলা কঠিন হলেও বলা যায় সময়ই বলে দেবে কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়।

আমরা মনে করি, সময়ক্ষেপণ না করে বিষয়টি বিশ্বসম্প্রদায়কে জানানো উচিত। একই সঙ্গে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা উচিত। আমরা আরো মনে করি, মিয়ানমারের এ ধরনের ঔধত্যপূর্ণ অমানবিক আচরণের জন্য মানবতাবাদী পক্ষের দেশসমূহকে অর্থনৈতিক অবরোধের পথে এগিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ প্রশ্নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে মানবতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশিদের যথাযথ ভূমিকা।

পরিশেষে এটুকু বলতে চাই, মিয়ানমার সরকারের বোধোদয় হোক। অন্যথায় নিউটনের তৃতীয় সূত্র মোতাবেক এক দিন যখন প্রতিঘাত শুরু হবে, তখন মানবতাবিরোধীর পাশে দাঁড়ানোর কেউই থাকবে না। অর এটাই হচ্ছে বিশ্বসভ্যতার একমাত্র উপসংহার।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোহিঙ্গা,মিয়ানমার,রোহিঙ্গা পরিবার,রাখাইন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close