সড়কে মৃত্যুর কাফেলা
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘর থেকে কেউ বাইরে গেলে স্বজনদের বুক কেঁপে উঠত! অজানা শঙ্কায় ভারী হয়ে উঠত মন। চারপাশে ইবলিস উপাসকরা হন্তারকের ভূমিকায় ওতপেতে বসে থাকত। সে সময় কত শত লাখ জনকে জীবন দিতে হয়েছে। কষ্ট হয়েছে সত্য। চাপা কষ্ট বুকে নিয়ে বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতার কেটেছে মানুষ। আক্ষেপ অথবা আফসোস করেনি কেউ। কিন্তু এখন? এখন তো বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতার কাটতে হয় না। স্রোতের অনুকূলেই আমাদের বসবাস। তবু কেন অজানা শঙ্কায় ভরে উঠবে মন! ঘরের বাইরে গেলে কেন কেঁপে উঠবে স্বজনের বুক। আক্ষেপ অথবা আফসোসের কাফেলা কেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে? আহাজারিতে কেন ভারী হয়ে উঠবে আমাদের জনপদ! এ প্রশ্নের যেন কোনো জবাব নেই। কী এক অদ্ভুত দেশে বসবাস হে সেলুকাস!
গত শনিবার এই পাললিক ভূমির সড়ক-মহাসড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৫২ জন। আহতের সংখ্যা দেড় শতাধিক। সড়ক দুর্ঘটনা যেন আজ এক মহামারির নাম। একদিনে সড়কে এত মৃত্যুর ঘটনা স্মরণকালে কখনো ঘটেনি। দেশের সড়কগুলো যেন আজ এক-একটি মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কম আলোচনা, পর্যালোচনা এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু কোনো কল্পনাই এই দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরতে পারেনি। পারেনি গতিরোধ করতে। কিন্তু কেন? এ প্রশ্ন আজ ১৬ কোটি মানুষের। কেননা, প্রত্যেকের কাউকে না কাউকে কোনো না কোনো কাজে বাইরে যেতে হচ্ছে। ঘরে যারা থাকছেন তাদের মাথায় তখন একটি চিন্তাই কেবল ঘুরপাক খায়, ‘ঘরে ফিরবে তো খোকা’ ‘অথবা স্বজন’? একটি শঙ্কা তখন চাবুক হাতে ঘরের সদস্যদের তাড়িয়ে ফেরে। নিঃসহায় মানুষের বুকের মধ্যে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। এখানেও সেই একই প্রশ্ন। এ রক্তক্ষরণের শেষ কোথায়?
এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। তবে সচেতন মানুষের মাঝে অনেকেই মনে করেন, জবাবদিহিতা না থাকলে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়। সম্ভবত এখানে সড়ক দুর্ঘটনা তার প্রতিপাদ্য তুলে বলছে, গণতন্ত্রের অস্তিত্বকে যারা এভাবে বিপন্ন করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তারা কেবল সমাজের শত্রু নন—জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু। আমরা মনে করি, এদের হাত থেকে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রকে রক্ষা করার দায়িত্ব সবার। তবে সমাজ থেকে যত দিন না ঘুণপোকা উচ্ছেদ করা যাবে, তত দিন আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে। অপেক্ষার পালা কত দীর্ঘ হবে তা আমাদের জানা নেই। জানি না, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরাবে কে!
পিডিএসও/হেলাল