সম্পাদকীয়
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কেমন আছেন
পরিচ্ছন্নতায় ঘাটতি নেই। পুরোটাই দোলায়িত হয়েছে। তবে তা শুধু ‘নাম’ গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে। নামটা—‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’। সমস্ত শহর পরিচ্ছন্ন করে বাড়ি ফিরলেও নিজেকে পরিষ্কার রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ যেন অনেকটা মোমবাতির মতো। চারপাশ আলোকিত করলেও নিজের উঠোন নিমজ্জিত থাকে অন্ধকারে। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে রাজধানীর বর্জ্য অপসারণের কাজ করছেন এ কর্মীরা।
তথ্য মতে, গত এক দশকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৮৮৩ জন তালিকাভুক্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী মারা গেছেন করপোরেশনের অবহেলাজনিত কারণে। জীবিকার তাগিদে এই কর্মীদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে হয়। আর এ কাজ করতে গিয়েই তারা ক্যানসার, অ্যাজমা, হৃদরোগ, স্ট্রোক, বক্ষব্যাধিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং প্রতিনিয়তই তা অব্যাহত থাকছে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অবগত থাকলেও পরিস্থিতি উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সহজ এবং পরিচ্ছন্নভাবে করার জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক সরঞ্জামের জোগান দিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এমনকি এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে করপোরেশন স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করার কাজটিও করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা ৭ হাজার ৯৫৯ জন। এর মধ্যে দক্ষিণে ৫ হাজার ২১৭ এবং উত্তরে ২ হাজার ৭৪২ জন। বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে এ কাজে অংশ নেন। তারা যা বেতন পান, তা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির তুলনায় নগণ্য বললে বেশি বলা হবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে এ কাজে সম্পৃক্ত থাকলে ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে নানা রোগের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় একসময়ের সুঠাম দেহটি। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে সেই কাহিনি। এ ব্যাপারে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিচ্ছন্নতার কাজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এর জন্য কোনো ঝুঁকিভাতার প্রচলন নেই। তবে এ নিয়ে চিন্তভাবনা চলছে।
এ চিন্তাভাবনার একটি সফল চিত্র কবে বেরিয়ে আসবে আমরা তা জানি না। তবে আমরা যা জানি, তা হচ্ছে এক নিষ্ঠুর সামাজিক বাস্তবতা। যে বাস্তবতা সুসভ্য বলে চিহ্নিত সমাজকে চোখে আঙুল দিয়ে বলছে, মানুষে-মানুষে এহেন বৈষম্য কারো সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। আমরা এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ঝুঁকিভাতা দেওয়ার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করছি। আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তাদের সুবিবেচনায় নিয়ে ইতিবাচক ভাবনায় এগিয়ে আসবেন।
পিডিএসও/হেলাল