সম্পাদকীয়
বাংলা এখন বিশ্বময়
জয় করার মাধ্যমকে মোটা দাগে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। এক. আগ্রাসন, দুই. ভালোবাসা। পৃথিবীর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জয় করতে গিয়ে মানুষ ব্যবহার করেছে তার আগ্রাসী শক্তিকে। ভালোবাসারও ব্যবহার হয়েছে, তবে তা অত্যন্ত সন্তর্পণে। এখানে একটি কথা না বললেই নয় যে, আগ্রাসন কখনো স্থায়ী হতে পারেনি। ভালোবাসার জয় পেয়েছে স্থায়িত্ব। কালোতীর্ণ হয়েছে সেই জয়। আমাদের বাংলা ভাষা বিশ্বকে জয় করেছে। জয় করেছে কোনো অর্থ বা পেশিশক্তির ওপর নির্ভর করে নয়। ভালোবাসার পসরা সাজিয়ে। সে কারণেই আজ ১৯০ দেশে একযোগে পালিত হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি। ৩০টি দেশের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষাকে পড়ানো হচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ৩২ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলছে। মাতৃভাষার বিবেচনায় বিশ্বে বাংলার স্থান চতুর্থ।
ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে সিয়েরা লিয়ন বাংলাকে সে দেশের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছে। ভারতের ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক ভাষা বাংলা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা যে বাংলা তা আর নতুন করে বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের রাষ্ট্রভাষা বিশ্বদরবারে আজ বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আর ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের এই ভাষাকে আজ তার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে অসাধারণ এক ভূমিকা পালন করেছে। একইসঙ্গে আমাদের সাহিত্যের ভূমিকাকেও স্বীকার করতে হয়। আমাদের রবীন্দ্রনাথ, আমাদের জীবনানন্দ আর আমাদের লালন আজ বিশ্বসাহিত্যের অংশে পরিণত হয়েছে। তবে আমরা বোধহয় এখনো আমাদের বোধকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারিনি। করপোরেট পুঁজির আগ্রাসী তাণ্ডবের কাছে ইতোমধ্যেই আমরা আংশিক পরাজিত হয়েছি। যার বহিঃপ্রকাশ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে। বিষয়টি একটি দেশ ও জাতির জন্য কখনোই শুভ হতে পারে না।
আমরা কখনো বলি না যে, অন্য ভাষাকে আমরা পরিত্যাগ করব। বিশ্বাস করি, যত বেশি ভাষার ওপরে আমাদের দখল থাকবে, সবদিক থেকেই আমরা তত বেশি সমৃদ্ধ হব। তবে নিজ ভাষাকে অবহেলা করে নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, নিজ ভাষার প্রতি যতটা যত্নবান হওয়া দরকার, জাতি হিসেবে আমরা ততটা হতে পারিনি। আমরা মুখে অনেক কথা বললেও কাজে তার ধারেকাছেও যেতে পারিনি। পারিনি আমাদের উদাসীনতার কারণে। পারিনি দেশপ্রেমের অভাবে। এই বোধ থেকে বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত সম্ভবত আমাদের মুক্তি নেই। আমরা সেই মুক্তির প্রত্যাশায় থাকলাম।
পিডিএসও/হেলাল