সম্পাদকীয়
অর্থমন্ত্রীর উপদেশনামা
অর্থমন্ত্রী অবসরে যাচ্ছেন—খবরটি মিডিয়ার। তথ্যে কোনো বিভ্রান্তি থাকার সুযোগ নেই। কেননা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই তথ্যদাতা হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, বছরের শেষ মাথায় তিনি অবসরে যাচ্ছেন। অবসরে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি এখানে মুখ্য নয়। মুখ্য হচ্ছে, অবসর গ্রহণের আগে তিনি যা বললেন, সেই শব্দসম্ভারকে নিয়ে।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কমাতে ঋণগ্রহীতার প্রকল্প প্রস্তাবনা ভালোভাবে খতিয়ে দেখে অনুমোদন দেওয়া হলে প্রদেয় ঋণকে ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব। এ ছাড়া আরো একধাপ এগিয়ে এসে তিনি বলেছেন, ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে প্রদেয় ঋণকে আদায়ের মধ্য দিয়ে ঝুঁকিমুক্ত করা যায়।
নিঃসন্দেহে বলা যায়, তার এই পরামর্শ ভালো ও ইতিবাচক। তবে এখানে একটি কথা না বললেই নয়, এই উপদেশনামাটি দশ-দশটি বছরের শেষ সময়ে কেন! পরামর্শটি শুরুতে পেলে দেশ ও জাতি অনেক বেশি উপকৃত হওয়ার সুযোগ পেত। দেশবাসী সেই পাওয়া থেকে বঞ্চিত হলেও খুব একটা হাপিত্যেশ করেনি। বলেছে, কপালে না থাকলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
আমরা ঝুঁকিমুক্ত হতে পারিনি। আমাদের খেলাপি ঋণ বাড়তে বাড়তে এখন এমন একপর্যায়ে চলে গেছে, যাকে আজ কুঋণ বললেও বেশি বলা হবে না। লাখো কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে বসে আছে এ দেশের ১৬ কোটি মানুষ। সাধারণ মানুষের কাঁধে এ বোঝা চাপানোর অর্থ হচ্ছে, যারা ঋণগ্রহীতা বা দাতা তারা দায় নেওয়া থেকে সব সময়ই সুকৌশলে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আর সাধারণ মানুষ হারিয়েছে তাদের আমানত রাখা টাকার এক বিশাল অংশ। এটাই ব্যাংক খাতের সার্বিক চিত্র। লুটেরা পুঁজির এক অনন্য উপমা।
অবসরে যাওয়া নিয়ে তার উচ্চারিত শব্দাবলিও মনে রাখার মতো। তিনি বলেছেন, ‘এত বড় লম্বা কেরিয়ার কারো জন্যই ভালো নয়। একই স্থানে বা আসনে একটানা বহু দিন থাকলে শেষ দিকে নিশ্চয়ই একটা পচন আসে, যা দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে। আমার ভাবনার সঙ্গে আমিও একমত। তাই অবসরের সিদ্ধান্ত।’ অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে আসা এ পরামর্শ দেশের বিশেষ ব্যক্তিদের নতুন করে নিজের সম্পর্কে ভাবার সুযোগ তৈরি করে দেবে। তবে সাধারণ মানুষ এই ভাবনার বাইরে থাকতেই পারে। আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর না রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। তারা বলছেন, অর্থমন্ত্রী যদি নয় বছর আগে আজকের এই ভাবনার কথা ভাবতেন, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ হয়তো আরো কিছুটা ভালো থাকার সুযোগ তৈরিতে সক্ষম হতো।
পিডিএসও/হেলাল