শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক
তন্ময় আলমগীরের কবিতা
অদৃশ্য দ্বীপাবলি
মৃত নদীটাতে নেমে কী পাও তুমি? কিছুই পাও না
এদিকে ওদিকে ডিঙার আঁকাবাঁকা রেখাপাত
আকাশের গায়ে কেমন অদ্ভুত দৃশ্যাংকেত দেখে লালনীল মাঝি
নিঃশ্বাসের পাশ ঘেঁষে তৃষিত মধ্যারণ্যের মতন
ছুঁঁয়ে ছুঁয়ে যায় অদৃশ্য দ্বীপাবলি।ঘুমভাঙা স্টেশনে শুন্যহাতে শেষ হয় যাত্রা
নিঠুর জনারণ্যে বুকের চারপাশের দীর্ঘশ্বাস
উপুর করে ঢেলে দিতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে
মরে যাওয়ার আরো খানিকটা সময় অপচয় করে দিলো
মধ্যস্থবিহীন মধ্যরাতের অচেনা কিছু মানুষ।ডিঙায় কিছু পাবে না, স্টেশনেও না
এইমাত্র স্রোতস্বিনী নদীর বুকে
ডুবিয়ে দিয়ে এলে ঝিকিমিকি সুর্য, ভেঙে ভাসালে বৈঠা।
অজুহাত
তোমার কবিতায় তুলে ধরো আমার বিষণ্ন মুখ
মগজে কিলবলিত যতসব ভাবনার অনুবাদ
যেভাবে ধারণ করে কলমের অমীমাংসিত নিভ
তোমার নিজস্ব কাব্যে নিমগ্ন পাঠকেরা
যেভাবে আপন করে নেয় দেশ
প্রেম
নদী
পাহাড়
আর নির্জনতা
তেমনি সকল গূঢ়ার্থ ছাপিয়ে আবিষ্কারের নেশায়
তোমার করতলে আরেকবার ধ্বনিত হোক আমার চোখ
আমার কর্ম
আমার পাপ
আমার জীবন
কাব্যের রিনিঝিনি ছন্দে বাজুক আমার বুকের ভেতরে
দর্শনে, আরাধনায় শুষে নিক জোঁকের মতো
পথে পথে ছড়ানো রক্ত, রক্তের জমাট সমুদ্র।
তোমার কবিতা পড়ে যদি ভুলে যাই বাঁচার সুখ
এই-ই আমার প্রাপ্তি
মৃত্যুর পিঞ্জরে বেঁচে থাকার অজুহাত।ব্যাকডেটেড
আমারে না ছাইড়ো বাতাস, ও বাতাস
ধূলোর ওপর শরীর আমার রয়
নদীর ঢেউয়ে গাত্র ধোয়া সুবাস
আমার গেরাম, আকাশ আমায় মাথায় তোলে লয়
আমি উর্ধ্বে সকল ক্ষয়-ক্ষতি সংশয়।কারণ, আমি ব্যাকডেটেড এক লোক।
বিস্মৃত
হে উত্তরাধিকার! তোমার ধূলোমাখা মুদ্রণযোগ্য পিঠে
আমি লিখে রাখলাম ভিটের প্রতি গিঁটে গিঁটে
এই নিরহঙ্কার অহঙ্কার এক—
আমাকে নূয়ায়, নিজেও নূই সে হলো বিবেক।
এও জানি
মানুষ আর মুদ্রণ যোগ্য নয়, বিস্মৃত প্রাণী।রেড সিগন্যাল
তোমার গেটের দারোয়ানটা না ভীষণ মিশুক মানুষ
সেদিন চা না খাইয়ে ছাড়লোই না আমাকে
আর রাজ্যের গপ্পো, মুখ যেন মধুমাখা মৌছাক
তারায় তারায় খচিত ঠিক ওই আকাশের শোভার মতো
হাজার বছর ধরে ঝিমঝিম চোখে
কী নির্মমভাবেই না বহন করছে পথরোধ দহন!চোখের ভাষা, চুলের আবেদন, পাশ ঘেঁষে দ্রুত
হেঁটে যাওয়া তোমার শরীরের উষ্ণ ঘ্রাণ, আঙুল ছোঁয়ার স্বাদ
ওই বুড়ো দারোয়ানটা আমাকে কী না জানিয়েছে বলো!
কোমরের ভাঁজে গুঁজে দেওয়া জীবন-নোঙর
ঘুঙুর কি তুলেনি আওয়াজ বেঁচে থাকার আরো কিছু উপলক্ষ?হ্যাঁ বেঁচেছি। মরেছিও বটে!
এ তল্লাটে তল্লাটে খবর রটেছে, জীবনের অর্ঘঢালা
তপস্যা মঞ্জুরি, ধ্যান, জ্ঞান সবই কেন্দ্রমুখী তোমাকে ঘিরে
কী দারুণভাবেই না তা অনুধাবন করেছে সজ্জিত গেটের দারোয়ানটি।তাই তো সেদিন, না গল্প না আপ্যায়ন
কাশফুলের মতো স্নিগ্ধ হেসে কী সহজেই না দেখিয়ে দিলো
আয়ু খোয়া হলুদ মানুষের মতো জ্বলতে থাকা
তোমার দরজার ঠিক ওপরের রেড সিগন্যাল—নো এন্ট্রি!পিডিএসও/হেলাল