পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধ
খুলনা
পাইকগাছায় সুপারির বাজার জমজমাট, কমেছে বাগান
খুলনার পাইকগাছার হাট-বাজারে জমে উঠেছে সুপারির বেচাকেনা। উপজেলার উঁচু এলাকার বাড়িগুলোতে একসময়ের সুপারি বাগানের মৃত্যু ও আমসহ অন্য ফলদ চারা রোপন বাড়ায় বাজারে সুপারির সরবরাহ কমে গেছে। এতে চাহিদার তুলনায় হাট-বাজারগুলোতে সুপারি কম থাকায় দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাগান মালিকেরা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২১৫ হেক্টর জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। এখানে গাছের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার ৪০০টি। প্রতি গাছে ৩ থেকে ৪ কাঁধি সুপারির ফলন ধরে। এতে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে ১৫০, আবার কোনো গাছে ৬০০ থেকে ৭০০ সুপারি ধরে।
* উপজেলায় ২১৫ হেক্টর জমিতে সুপারির বাগানে গাছের সংখ্যা ৪০ হাজার
* ‘এক কুড়ি’ সুপারি পাইকারি বাজারে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি
এদিকে লবণাক্ত মাটির এই উপজেলায় উঁচু ও বিলান এবং নিচু ও বিলান জমির পরিমাণ বেশি। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে হরিঢালী, কপিলমুনি, গদাইপুর ও রাড়ুলীতে সুপারি গাছের পরিমাণ বেশি। উৎপাদিত সুপারি বাণিজ্যিক শহর কপিলমুনি, আগড়ঘাটা, গদাইপুর ও বাঁকা বাজারে বেশি বেচাকেনা চলে। চাঁদখালী ইউনিয়ন ও পৌরসভার আংশিক এলাকায় সুপারি গাছ রয়েছে।
উপজেলার উঁচু অঞ্চলখ্যাত এলাকায় সুপারি বাগানহীন কোনো পরিবার ছিল না। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সুপারির চাষ কমে গেছে। তবে অজানা কারণে গাছ মরে যাওয়ায় ফলন কমে গেছে। এছাড়া বর্তমানে সুপারির বাগান কমে যাওয়ায় সেসব এলাকায় বসত বাড়ি গড়ে উঠছে। সেখানে লাগাচ্ছে আম, জামসহ বিভিন্ন ফলদ গাছ।
সুপারি চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময়ে বাজারে সারি সারি বসতো কাদি কাদি কাঁচা সুপারির বাজার। তখন কাঁচা সুপারির মৌসুম চলে গেলেও বিক্রি হতো শুকনা ও ভিজা বা মজানো সুপারি। বর্তমানে সুপারির হাট-বাজারে প্রচুর পরিমাণ সুপারি বিক্রি হচ্ছে। বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন হাট থেকে সুপারি সরবরাহ করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে পাইকারী সুপারি কিনে এলাকার বাইরে মোকামগুলোতে বিক্রি করছে। তাছাড়া স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীরা সুপারি ক্রয় করে গুদামজাত করছে। যা পরে শুকিয়ে বা পানিতে মজিয়ে পরবর্তীতে বিক্রি করবেন।
উপজেলার গদাইপুর বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী জলিল মোল্লা জানান, চলতি বছর সুপারির ফলন খুব ভালো হয়েছে, তবে আগের তুলনায় কম। বাজার মূল্য ভালো হলেও বেচাকেনা কম। তবে কাক্সিক্ষত দাম পেয়ে তিনি খুশি। সুপারি ব্যবসায়ী আকরাম শেখ জানান, অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছর বাজারে প্রচুর পরিমাণ সুপারি উঠেনি। তবে বিগত সময়ের চেয়ে বাজারে বর্তমানে সুপারির মূল্য অনেক বেশি।
সুপারি বিক্রেতারা জানান, স্থানীয় হাট-বাজার থেকে পাইকারী ব্যবসায়িরা সুপারি কিনে বড়দল, সোলাদানা, শান্তাসহ পাশ্ববর্তী হাট-বাজারের আড়তগুলোতে সুপারি বিক্রয় করে। সুপারির হিসেব অঞ্চল ভিত্তিক হিসাবে ভিন্ন। এই এলাকায় ৫৫ গোন্ডায় ‘এক কুড়ি’ ধরা হয়, অর্থাৎ এতে ২২০টি সুপারি থাকে। ‘এক কুড়ি’ সুপারি পাইকারি বাজারে আকার ভেদে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসিম কুমার দাস বলেন, ‘সুপারি এ অঞ্চলের একটি অর্থকারী গুরুত্বপূর্ণ ফসল। তাছাড়া এই এলাকার সুপারির মানও ভালো। তবে লম্বা সুপারি গাছগুলো মরে যাওয়ায়, বা কেঁটে ফেলায় নতুন করে সুপারির বাগান তেমন একটা গড়ে উঠছে না। তাই কৃষি কার্যালয় থেকে নতুন করে সুপারি বাগান তৈরির জন্য বাগান মালিক ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’