আব্দুল করিম, আটোয়ারী (পঞ্চগড়)

  ১৩ আগস্ট, ২০২৪

সারজিস আলম বক্তৃতা ও বিতর্কে অনন্য 

হিমালয়ের কোলঘেঁষা পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বামন কুমার গ্রামের এক মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৯৮ সালের ২ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তার অগ্নিঝরা বক্তব্য,ঝাঝালো স্লোগান আর যৌক্তিক কথার জন্য তিনি এখন সারা দেশব্যাপী সুপরিচিত।

বাবা আকতারুজ্জামান সাজু। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। মা বাকেরা বেগম একজন গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সারজিস আলম বড়। ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন সাকিব। তিনি ঢাকা কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত আছেন। দাদা তজিরউদ্দিন সফল ব্যবসায়ী ও আদর্শ কৃষক। তার পরিবার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সঙ্গে যুক্ত। তবে বর্তমানে তার পরিবার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন বলে।

বাবা-মা আত্মীয় স্বজন, শিক্ষক বন্ধুমহল সবার কাছে সে অত্যান্ত প্রিয়। ছোটবেলা থেকেই সে প্রখর মেধাবী ও প্রতিবাদী প্রকৃতির ছিলেন। সারজিসের শিক্ষা জীবনে হাতে খড়ি পড়ে মায়ের হাত দিয়ে। রুহিয়া প্রগতি কিন্ডারগার্টেন থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। পরে আলোয়াখোয়া তফসিলি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন প্লাস পেয়ে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপরে তিনি ঢাকায় চলে আসেন, এখানে বিএফ শাহীন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচ এস সি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিজ্ঞান নিয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

ক্রিকেট ছিল তার পছন্দের খেলা। ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন অব পঞ্চগড় থেকে পেয়েছেন ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট খেতাব। কীর্তি শিক্ষার্থী হিসেবে পেয়েছেন অনেক সম্মামনা স্মারক ও সংবর্ধনা। অমর একুশে হল থেকে ২০২৩ সালে টেবিল টেনিসে ও পেয়েছেন পুরস্কার।

বিতার্কিক হিসেবেও সারজিস বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। ২০২২ সালে জাতীয় বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রোকেয়া বিতর্ক অঙ্গন, বিজয় ৭১ ডিবেটিং ক্লাব,সমাজ কল্যাণ ডেবেটিং ক্লাব, কবি জসিম উদ্দিন হল ডিবেটিং ক্লাব প্রভৃতির সাথে যুক্ত ছিলেন। আলোয়াখোয়া তফসিলী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ জনাব মো. সফিউল ইসলাম বলেন,সারজিস প্রখর মেধাবী ও ভদ্র মার্জিত ছাত্র ছিলেন। সে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী সবখানেই প্রথম স্থানের অধিকারী ছিল।

সম্প্রতি কোটা সংস্কার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারজিস সামনে থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কদের সাথে। আন্দোলনকে কিভাবে বেগবান করা যায় তা নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করেছেন। আন্দোলনের সময় ৬ সমন্বয়কারীদের সঙ্গে তাকেও ডিবি হেফাজতে নিয়ে গেলে তার পরিবার ও এলাকাবাসী দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। বিশেষ করে তার মা-বাবা ছেলের এমন পরিস্থিতিতে অনেকটাই বিমর্ষ হয়ে পড়েন। পরে ডিবি হেফাজত থেকে বেরিয়ে তিনি আবারো আন্দোলনে যোগ দেন। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশব্যাপী। ডাক দেন না অসহযোগ আন্দোলনের। শেষমেষ অসহযোগ আন্দোলনের চাপে পড়ে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জয় হয় ছাত্র জনতার।

এ জয়ে তার পরিবার,প্রতিবেশী,এলাকাবাসী বিশেষ করে তার বাবা মা সারজিসকে নিয়ে গর্ব বোধ করেন। ছেলেকে ভবিষ্যতে কি বানাবেন সাক্ষাৎকারে তার বাবা মায়ের কাছে জানতে চাইলে বলেন,সারজিস এবারে বিসিএস প্্িরলিতে পাস করেছে। ছেলে যেটা চাইবে সেটাতেই আমাদের সম্মতি আছে, ওর সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মতি দিব।

তারে এ জয়ে পরিবারের পাশাপাশি, প্রতিবেশী এলাকাবাসী, উপজেলা জেলা সহ সারাদেশের মানুষ তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসছেন অনেকে। তার হাত ধরে সুচনা হবে নতুন বাংলাদেশের। সে এখন আমাদের আটোয়ারী- পঞ্চগড়ের গর্ব তথা সারা দেশের গর্ব।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close