পটুয়াখালী প্রতিনিধি

  ০৩ এপ্রিল, ২০২৪

পটুয়াখালীতে এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি ৫২৩ ডায়রিয়া রোগী

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেঝে, হাঁটার পথেও অস্থায়ী বিছানা পেতে ডায়রিয়ার রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

পটুয়াখালীতে এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন উপজেলার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি। এর মধ্যেই পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা ছাড়িয়ে মেঝে, হাঁটার পথ, বারান্দা সবখানেই অস্থায়ী বিছানা পেতে ডায়রিয়ার রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মশা-মাছি ও নোংরা পরিবেশের কারণে ভোগান্তিতে আছেন আগত রোগী এবং তাদের স্বজনরা। বাড়তি চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-সেবিকারা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, দিন যত যাচ্ছে, গরমের সঙ্গে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।

প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত এক সপ্তাহে ৫২৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়। তবে ডায়রিয়ার রোগীর চাপে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন প্রায় ঠাঁই নেই।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে জেলার কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী এলাকা থেকে শিশু সাবিহাকে নিয়ে এসেছেন তার মা। সাবিহার মা বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই পাতলা পায়খানা, বমি শুরু হলে কেমন দুর্বল হয়ে যায়। পরে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে স্যালাইন দেওয়া হয়। সেই থেকে স্যালাইন চলছে। এখন শরীর কিছুটা ভালো। তবে হাসপাতালে কোনো বেড (শয্যা) পাইনি, তাই বারান্দায় ফোম বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

একই কথা জানান হাজি খালি থেকে আসা রোগী চাঁদনী দেবনাথের সঙ্গে থাকা তার মা সুস্মিতা দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি করেছি, কিন্তু কোনো ছিট (আসন) খালি নেই, তাই হাঁটার পথে ছিট লাইচ্চা স্যালাইন দিতেছি। স্যালাইন-ওষুধ হাসপাতালই দেছে। তয় মশা মাছির কারণে টেকা দায়। চার দিকে গন্ধ আর প্রচণ্ড গরম, ভোগান্তির যেন শেষ নাই।’


  • গরম বাড়ার সঙ্গে বিগত বছরগুলোয়ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল
  • চলতি বছরে জেলায় ১ হাজার ৭৩৩ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন
  • এক সপ্তাহে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি ১৬২ জন নিউমোনিয়ার রোগী

পটুয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত দিনে জেলায় ৫২৩ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন উপজেলায় ভর্তি হয়েছেন। এরই মধ্যে ৩৫৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল) জেলার বাউফল উপজেলায় ৬ জন, দশমিনায় ১১, দুমকিতে ৭, মির্জাগঞ্জে ৯, কলাপাড়ায় ১১, গলাচিপায় ১৬ ও সদর উপজেলায় ৫৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৭৩৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে কোনো ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী মারা যাননি।

জানতে চাইলে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন এস এম কবির হাসান বলেন, ‘গরম বাড়ার সঙ্গে বিগত বছরগুলোয়ও এমনিভাবে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। এসব বিষয় মাথায় রেখে ডায়রিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সবার খাবার গ্রহণ ও পানি পানের ক্ষেত্রে এই সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পরিস্থিতি এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। খাবার স্যালাইনসহ অনান্য ওষুধেরও পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।’

এদিকে ডায়রিয়ার পাশাপাশি জেলায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে ১৬২ জন নিউমোনিয়ায় আক্রন্ত হয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন। তবে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় চলতি বছর জেলায় কোনো রোগী এখন পর্যন্ত মারা যায়নি।

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পটুয়াখালী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close