মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মানিকগঞ্জে অভিযোগ

পুলিশ সুপারের নামে ‘চাঁদাবাজি’, টাকা না পেয়ে ১১ দোকান উচ্ছেদ

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

মানিকগঞ্জে পুলিশ সুপারের নামে ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি ও উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) টাকা না পেয়ে মানিকগঞ্জ বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ব্যবসায়ীদের ১১টি দোকানঘর ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্রমিকলীগের নেতা ও তার ভাগ্নের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া শ্রমিকলীগের নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডের পর পুলিশ-প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ধদিন ধরে মানিকগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পশ্চিম পাশে সড়ক বিভাগের জায়গা ও পৌর হকার্স মার্কেটের পরিত্যক্ত জায়গায় অস্থায়ীভাবে দোকান তৈরি করে ভাতের হোটেল, চা-পানের দোকান, বইঘর ও মুচির দোকানসহ অন্য ব্যবসা করে আসছেন তারা। কিন্তু গত চার দিন আগে জেলা শ্রমিকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম নবু ও মোহাম্মদ বিলাস হোসেনের নেতৃত্বে প্রায় ১০জন তাদের (ব্যবসায়ী) কাছে আসেন এবং প্রত্যেক দোকান থেকে ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে না পারায় পুলিশের নামে ভয় দেখিয়ে হুমকি দিয়ে চলে যায়।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী খোরশেদ আলী বলেন, আমরা সড়ক বিভাগের জায়গায় দোকান করেছি। বাস টার্মিনালের জায়গায় না। চাঁদা দিতে না পারায় কিছুদিন আগেও আমার দোকান ভেঙে দিয়েছিল আব্দুস সালাম নবু, বিলাস হোসেনসহ প্রায় ১০জন শ্রমিক নেতাকর্মীরা। আজকেও টাকা দিতে না পারায় আবারো দোকান ভেঙে দিল তারা।

ভুক্তভোগী আরেক ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন জানান, সড়ক বিভাগের জায়গায় পৌর হকার্স মার্কেটের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এর পর ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক উন্নতির কারণে পৌর হকার্স মার্কেট ভেঙে ফেলায় তার দুটি দোকানও ভেঙে ফেলা হয়। পরে ভেঙে ফেলা পৌর হকার্স মার্কেটের জায়গায় চা-পানের দোকান দিয়ে কোনোভাবে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। কিন্তু বুধবার সকালে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাবুল সরকারের লোকজন পুলিশের নামে চাঁদা চায়। এ সময় চাঁদা দিতে না পারায় তার চা-পানের দোকান ভেঙে দিয়েছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাবুল সরকার একজন প্রভাবশালী নেতা। প্রশাসনের সঙ্গে আতাত করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। দীর্ঘদিন ধরে নীরবে বাবুল সরকার চাঁদাবাজি করে আসছেন বলে অভিযোগ তাদের।

অভিযুক্ত বিলাশ হোসেন জানান, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মামা বাবুল সরকারের নির্দেশে যানজট মুক্ত করা হয়। কেননা মামা বাবুল সরকার বলেছেন, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ গোলাম আজাদ খান স্যার বাস টার্মিনালের প্রবেশপথ যানজট মুক্ত রাখতে বলেছেন। ‘তাই অস্থায়ী দোকানপাট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দরকার হলে দোকানঘর ভেঙে ফেলব। তাতে তাদের কোনো সমস্যা নেই।’ এ ছাড়া সাংবাদিকদের এ বিষয়ে তার মামা বাবুল সরকারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাবুল সরকার জানান, চাঁদার বিষয়টি মিথ্যা ও অসত্য। মূলত বাস টার্মিনালের প্রবেশপথ যানজট মুক্ত রাখতে অস্থায়ী দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশ সুপারের নামে চাঁদার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন তিনি।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান এ বিষয়ে বলেন, ‘উচ্ছেদের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। যদি কেউ পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মানিকগঞ্জ,চাঁদাবাজিৎ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close