ছোট দুভাইয়ের বিয়েতে যোগ দিতে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন মনিরুল ইসলাম মমিন (৩২)। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে তাকে আনতে মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়ে ছিলেন ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম সুমন (২৭)। কিন্তু বাড়ির ফেরার পথেই মাটিবাহী ড্রাম ট্রাকের চাপায় নিহত হন দুজন।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিয়ের সামিয়ানার (প্যান্ডেল) নিচে দুই ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে পরিবেশ। এই সামিয়ানার নিচে গায়ে হলুদ ও নববধূ নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠার কথা ছিল তাদের।

এর আগে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার নবুওসিমদ্দিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। রাজবাড়ীর আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হালিম দুর্ঘটনায় দুই ভাইয়ের নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত দুইভাই রাজবাড়ী সদর থানার খানখানাপুর ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের মোকছেদ আলী সরদারের ছেলে। এর মধ্যে বড়ভাই মনিরুল ইসলাম গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। এছাড়া বিয়ে বড় সাইফুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার সকালে মনিরুল ও সাইফুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানের এক পাশে বিয়ের অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল তৈরি করা। এর নিচেই দুটি স্টিলের খাটিয়ায় রাখা হয়েছে দুই ভাইয়ের মরদেহ।

নিহত দুজনের ভাই শামীউল কান্না জরিত কণ্ঠে জানান, গোয়ালন্দের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে নবুওসিমদ্দিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে মাটি বহনকারী ট্রাকের সঙ্গে তাদের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এতে মোটরসাইকেল থেকে দুই ভাই ছিটকে পড়লে ঘটনাস্থলেই মনিরুল মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুলকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শামীউল আরো জানান, পারিবারিকভাবে ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম ও তার (শামীউল) বিয়ে ঠিক হয়েছে। বুধবার ছিল গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। গতকাল (বৃহস্পতিবার) তার এবং আজ (শুক্রবার) সাইফুলের বিয়ের বরযাত্রার কথা ছিল। শনিবার দুই ভাইয়ের বউভাত হবে। বুধবার রাতে দুই ভাইয়ের একসঙ্গে গায়েহলুদ হয়েছে। হলুদের অনুষ্ঠান শেষে রাত ১১টার দিকে বড় ভাইকে আনতে দৌলতদিয়া ঘাটে যান সাইফুল। ফেরার পথে দুর্ঘটনায় দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।

রাজবাড়ীর আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার ওসি মো. আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমরা দুর্ঘটনায় জড়িত ট্রাকটিকে আটক করেছি, কিন্তু চালক ও হেলপার পালিয়ে যান। দুই ভাইয়ের মরদেহ পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’ এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

পিডিএস/আরডি