গোলাম রসুল, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)

  ১৪ মার্চ, ২০২৩

চৌদ্দগ্রামে আ.লীগের ৭ প্রার্থী, আসন উদ্ধারে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত

পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টি

কোলাজ ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনের আগে হাতে সময় আর মাত্র ৯ মাস। এ বছর ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত সময় পার করছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা প্রতিদিন চৌদ্দগ্রামে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করছে। সমাবেশে লোকসমাগম ঘটানোর জন্য প্রত্যেক দলের নেতাকর্মীদের কাছে কেন্দ্র থেকে বারবার বার্তা আসছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কোমড় বেঁধে মাঠে নেমে চষে বেড়াচ্ছেন অন্যান্য দলের নেতারাও। চৌদ্দগ্রামে এবার এমপি প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন অনেকে।

একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলা। এখানে নারী-পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৩ হাজার ৪১৫। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ জাতীয় অর্থনীতির ট্রাম্প কার্ড হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এই উপজেলার ওপর দিয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি বিবেচনায় চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা-১১) আসনটি অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে। এই আসনে এবার এমপি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ১৩ জন। এই নেতারা হলেন সাবেক এমপি ও জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, চারবারের এমপি ও সাবেক রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুস ছোবহান ভূঁইয়া হাসান, দুবারের সাবেক পৌর মেয়র মো. মিজানুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সদস্য আলহাজ মো. তমিজ উদ্দিন ভূঁইয়া সেলিম, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মুজিবুর রহমান মিয়াজি, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. জসিম উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. কামরুল হুদা, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মহিউদ্দিন ভূঁইয়া মাসুম, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি (এরশাদ) আলহাজ মো. খায়েজ আহমেদ ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ আলমগীর কবির মজুমদার (এরশাদ), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি কাজী জহিরুল কাউয়ুমের নাতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদের ভাতিজা কাজী মো. নাহিদ।

সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এই নেতাদের নাম এখন চৌদ্দগ্রামের প্রায় সব জায়গায় রাজনৈতিক আড্ডায় ও চায়ের দোকানে ঘন ঘন শোনা যাচ্ছে। এই সম্ভাব্য প্রার্থীরা যে যখন সুযোগ পাচ্ছেন উপজেলায় আসছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

নির্বাচনী তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা মার্কায় ভোটে জয়লাভ করে সংসদ সদস্য হন বর্তমান এমপি মো. মুজিবুল হক। পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে তিনি হেরে যান। এই আসনে জয়লাভ করেন জামায়াতের সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। আগামী নির্বাচনে ভোটের ময়দানে ব্যবধান গড়ে তুলতে এই দুই সম্ভাব্য প্রার্থীই রয়েছেন একেবারে সন্মুখ কাতারে। অতীতের মতো এবারও দুজনেরই নির্বাচনী প্রস্তুতির তৎপরতা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের দুর্গখ্যাত চৌদ্দগ্রামের আসনটিতে নৌকা বিজয়ী হয়। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত টানা ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে এখানে আওয়ামী লীগের ভিত্তি ধীরে ধীরে মজবুত হয়ে উঠেছে।

মো. মুজিবুল হক এমপি হওয়ার পর এখানকার অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে বাদ পড়েনি এ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্ট সবকিছুতেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। ১৫ বছরে এখানে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। তিনি আবারও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা মনোনয়ন লাভের আসায় স্থানীয় পর্যায়ে বড় বড় শোডাউন করে কেন্দ্রকে আগাম জানিয়ে দিচ্ছেন, তাদের জনপ্রিয়তাও কম নয়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন চৌদ্দগ্রাম সদরের সাবেক চেয়ারম্যান, দুবারের সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা তমিজ উদ্দিন সেলিম ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মো. জসিম উদ্দিন।

অন্যদিকে পিছিয়ে নেই বিএনপি ও জাতীয় পার্টিও। তারাও অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ নিয়ে একাধিক কর্মসূচি ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। দল যদি নির্বাচন করতে ইচ্ছুক হয় তাহলে আমরা প্রস্তুত আছি। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় চৌদ্দগ্রামে বিএনপির ১০ হাজার নেতাকর্মীর নামে শতাধিক মামলা হয়েছে। মামলা-হামলার পরও জামায়াত মাঠে অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে রয়েছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যদি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে চৌদ্দগ্রামে ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবেন বলে আশাবাদী স্থানীয়রা।

অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রহমতুল্লাহ বাবুল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দল। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠন করার জন্য আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। মো. মুজিবুল হক এমপির নির্দেশে উপজেলা সদর থেকে শুরু করে তৃণমূলপর্যায়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে সমাবেশ প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। যারা নির্বাচনী পরিবেশকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে, তারা চৌদ্দগ্রামের নন, তারা ঢাকার নেতা।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চৌদ্দগ্রাম,আ.লীগ,বিএনপি-জামায়াত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close