মনিরুল হক মনি, বাগেরহাট
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো..
‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনো করিলিরে বাঙালি, তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি... ’ মহান ভাষা আন্দোলনের আত্নত্যাগের মহত্ত্ব তুলে ধরে ‘রাষ্ট্রভাষা’ নামের মর্ম¯পর্শী গানটির রচয়িতা বাগেরহাটের চারণ কবি শেখ শামছুদ্দিন নানা রোগে ভুগে ১৯৭৪ সালে মারা যান। শামসুদ্দিনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বড় মেয়ে লাইলি বেগম মারা গেছেন বছর দুই আগে। ছোট ছেলে মুকুল শেখ ঢাকায় চাকরি করেন। বাড়িতে থাকেন বড় ছেলে দেলোয়ার হোসেন খোকন।
তিনি বলেন, স্থানীয় হাট-বাজারে ফেরি করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করতেন বাবা। এসব জিনিস বিক্রির সময় তিনি গান গাইতেন। আর যে গানগুলো তিনি গাইতেন, তা তিনি নিজেই রচনা করতেন এবং নিজেই সুর করতেন। তার রচিত, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করিলিরে বাঙালি, তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি’ গানটি খুবই সমাদৃত হয়।
‘ভাষা আন্দোলনে জনমত সৃষ্টিতেও এই গান অনেক ভূমিকা রেখেছে। দুঃখের বিষয় বাবা আজও রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি পাননি। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আসলে স্থানীয় লোকজন বাবার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, আর কিছুই হয় না।’
তিনি আরো জানান, সবকিছু মিলে চরম আর্থিক কষ্টে দিন কাটে আমাদের। যতদিন বেঁচে আছি, দিন কেটে যাবে। আমাদের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। তবে বাংলা ভাষা আন্দোলনে যে বাবার অবদান ছিল, সেই স্বীকৃতিটুকু আমরা পেতে চাই। শেখ শামছুদ্দিনের প্রতিবেশী আব্দুস সালাম বলেন, চরণ কবি শেখ শামসুদ্দিন ছিলেন একজন ভাষা সৈনিক। ভাষা আন্দোলনের প্রথম গানের গীতিকার ও সুরকারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান তিনি। বেমরতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন টগর বলেন, স্থানীয়ভাবে কবির সম্মানে তার বাড়ির সামনে একটি গেট, তার কবরটা বাঁধানো হয়েছে। তার নামে ইউনিয়ন পরিষদে একটি পাঠাগার নির্মাণও করেছি আমরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কবি রাষ্টীয় স্বীকৃতি পাননি। সরকারের কাছে প্রায়ত এ কবির মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানান এই জনপ্রতিনিধি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক বলেন, চারণ কবির কালজয়ী গান ও ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকার জন্য অবশ্যই স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু করা যায় তা আমরা করব। সেই সঙ্গে কবির জরাজীর্ণ বাড়িটি মেরামত করে দেওয়ার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
পিডিএস/এইচএস