শাহ আলম, খুলনা

  ২২ জানুয়ারি, ২০২৩

ধ্বংসের পথে খুলনার ৯ জুট মিলের সরঞ্জাম

অকেজো ৫ হাজারেরও বেশি তাঁত 

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বিগত আড়াই বছর ধরে নেই কোনো কোলাহল, তাঁতের খটখট শব্দ, আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মব্যস্ততা। পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। এ চিত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুট মিলের।

এদিকে, বাংলাদেশ প্রাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আঞ্চলিক কার্যালয়টিও যেন এক নিঝুম বাড়ি। কার্যালয়ের ১৪টি কক্ষের ৭টিই বন্ধ। বাকি ৭টি কক্ষে দাপ্তরিক কাজ চললেও পড়েছে ঝুলকালি। অভ্যর্থনা কক্ষটির চেয়ার, টেবিল, সোফাতেও জমেছে ধুলো-ময়লা। কবে মিলগুলো চালু হবে জানে না বিজেএমসির কেউ।

বিজেএমসি সূত্র জানায়, ক্রমাগত লোকসানের কারণে ২০২০ সালের ২৫ জুন খুলনা অঞ্চলের ৯টিসহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি জুট মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর ২০ জুলাই মিলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে দীর্ঘ আড়াই বছর বন্ধ হয়ে আছে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুট মিল। এই দীর্ঘ সময়ে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে মিলগুলোর ৫ হাজার ৮৩টি তাঁত।

বিজেএমসির সূত্রমতে, উক্ত তাঁতগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্র্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া মিলগুলোর মোট জমি রয়েছে ৫৫০ একর। এই বিশাল জমির অধিকাংশই পড়ে আছে অব্যবহৃতভাবে।

সূত্রমতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুট মিল বন্ধ থাকলেও মিলগুলোর পেছনে সরকারের প্রতি বছর ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বর্তমানে ৯টি জুটমিলে ১ হাজার ৪৩জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। ২০২০ সালের ২০ জুলাই মিলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেড় বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ৬৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ হিসেবে গত আড়াই বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ব্যয় হয়েছে প্র্রায় ১১০ কোটি টাকা। এছাড়া মিলগুলোর নিরাপত্তায় বিজেএমসির ২২৯ জন নিরাপত্তারক্ষী ও ৯৮ জন আনসার নিয়োজিত রয়েছেন; তাদের পেছনেও প্রতি বছর খরচ হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা।

এদিকে, বন্ধের পর ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেড় বছরে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এছাড়া রয়েছে, মিলগুলোর যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ। যার হিসেব বিজেএমসির খাতায় এখনো তোলা হয়নি।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের ৩ নম্বর ইউনিটের তাঁত বিভাগের স্থায়ী শ্রমিক ছিলেন মো. ইব্রাহিম। তিনি বলেন, মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অর্ধাহারে-অনাহারে আমার প্ররিবারের দিন কাটছে। পুুনরায় মিল চালু হলে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারতাম।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের আহবায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, বন্ধের সময় সরকার বলেছিল মিলগুলোর যন্ত্রপাতি সংস্কার (বিএমআরই) করে তিন মাসের মধ্যে পুনরায় চালু করা হবে। এরপর প্রায় তিন বছর হতে চললেও মিলগুলো চালু করা হয়নি। অনেক শ্রমিক এখনো তাদের রিপূর্ণ বকেয়া পাওনা পায়নি। অনেক স্থায়ী শ্রমিক এখনো তাদের ন্যায্য পাওনা পাননি। অনেক শ্রমিকের বিরুদ্ধে মিল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলাও প্রত্যাহার করা হয়নি। অনেক শ্রমিক এখনো অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। তিনি অবিলম্বের মিলগুলোর যন্ত্রপাতি সংস্কার করে প্রতিদিন নিয়মিত মজুরির ভিত্তিতে সরকারি উদ্যোগে চালু করার দাবি জানান।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মরত নাম প্র্র্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন, মিলগুলো বন্ধের আগে দৌলতপুর ও খালিশপুর জুট মিল দুটি বেসরকারি খাতে চলছিল। তখন ওই মিল দুটিতে কোনো লোকসান ছিল না। সরকার ইচ্ছে করলে বেসরকারি খাতে দিয়েও খুলনা অঞ্চলের মিলগুলো চালাতে পারে। এতে সরকারের যেমন লোকসান গুনতে হবে না, আবার শ্রমিক-কর্মচারীরাও খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারবে।

বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আঞ্চলিক সমন্বয়কারী (লিয়াজো কর্মকর্তা) গোলাম রব্বানী বলেন, বন্ধ মিলগুলো বেসরকারি খাতে পুনরায় চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লিজ (ভাড়া) দেওয়ার জন্য বেশকিছু টেন্ডারও পড়েছে। বর্তমানে সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। এ কাজগুলো শেষ হলে কয়েকটি মিল চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ধ্বংসের পথে,খুলনার জুট মিল,মিলের সরঞ্জাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close