খুলনা নগরীর ডাকবাংলো মোড়ে জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন মার্কেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। কেসিসিকে না জানিয়ে তাদের জমিতে দোকান নির্মাণ হচ্ছে- এই অভিযোগ তুলে স্থাপনা সরিয়ে নিতে জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়েছে কেসিসি।

অন্যদিকে জেলা পরিষদ বলছে, ওই জমির সম্পূর্ণ মালিকানা তাদের। ওই স্থানে কেসিসির কোনো জমি নেই। বিষয়টি নিয়ে কেসিসিতে মেয়র ও চেয়ারম্যানের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

কেসিসির মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। অন্যদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ দুই নেতার দুই প্রতিষ্ঠানের বিরোধ কিভাবে নিষ্পত্তি হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

ডাকবাংলো মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পুরাতন ডাকবাংলো ভবনের ফাঁকা জায়গায় প্রবেশ ফটকে তালা ঝুলছে। ভেতরে ৩৭টি দোকান ঘর নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় কাউন্সিলরসহ কেসিসির লোকজন সেখানে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে গেছে।

তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পরদিনই কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম চিঠি দিয়ে নির্মাণাধীন স্থাপনাগুলো অপসারণের অনুরোধ জানান। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘গত ১৩ নভেম্বর সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ডাকবাংলোর মোড়ে কেসিসির দশমিক ১৮ একর জমির উত্তর পার্শ্বের ফাঁকা জায়গায় বিনা অনুমতিতে নতুন দোকান ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। গত ১৬ নভেম্বর সিটি মেয়র কেসিসির জায়গার ওপর কোনো প্রকার নির্মাণ কাজ না করার জন্য আপনাকে মোবাইলে অনুরোধ করেন। তারপরও স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। বিষয়টি অনভিপ্রেত।’

চিঠিতে নির্মাণ কাজ বন্ধসহ নির্মাণাধীন নতুন স্থাপনা জরুরি ভিত্তিতে অপসারণ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি দেওয়া হয়।

এর প্ররিপ্রেক্ষিতে ২৩ নভেম্বর কেসিসির প্রধান নির্বাহীকে পাল্টা চিঠি দেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ডাকবাংলোর মোড়ে খুলনা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন মোট ৫০ দশমিক ৪০ শতক জমি আছে। জমি সিএস, এসএ ও আরএস খতিয়ানের মাধ্যমে মালিক খুলনা জেলা পরিষদ। বর্তমানে কেসিসির ওই জমির কোনো মালিকানা স্বত্ত্ব নেই। জমির ভূমি উন্নয়ন কর ও হোল্ডিং ট্যাক্স খুলনা জেলা পরিষদ পরিশোধ করে আসছে।’

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই জমিতে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কার্যক্রম নেওয়া হলে কেসিসিকে অংশীদার হিসাবে রাখা হয়। কিন্তু প্রকল্পটি কেডিএ’র অনুমোদন লাভ করেনি। কিন্তু পাওয়ার হাউজ মোড়ের জমিতে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া গেছে। মার্কেট নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সাময়িক পুর্নবাসনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যর পরামর্শক্রমে ডাকবাংলো মার্কেটের অব্যবহৃত খালি জমিতে অস্থায়ী ইজারা প্রদানের মাধ্যমে পুর্নবাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে কেসিসি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ওই জমির রেকর্ড ভুল হয়েছিল। পরে তা সংশোধন করে কেসিসির নামে রেকর্ড করা হয়। এটি নিয়ে আগেও জটিলতা হয়েছিল। তখন স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে দুই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বসে সমাধান করা হয়। ওই সময়ও কেসিসির দশমিক ১৮ শতক ও বাকি জমির মালিকানা জেলা পরিষদের বলে বর্তমান চেয়ারম্যানসহ সবাই মেনে নেন। এখন জমির মালিকানা নিয়ে যা বলা হচ্ছে সঠিক না। কেসিসির জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, এখানে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। মেয়রের সঙ্গে কাগজপত্র নিয়ে বসে সমাধান করা হবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন সময় ডাকবাংলো মোড়ের জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে কেসিসি ও জেলা পরিষদ। কেসিসির চিঠির কারণে ওই জমিতে জেলা পরিষদের বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ আটকে যায়।

পিডিএসও/এমএ