সিরাজুল ইসলাম আপন, ভাঙ্গুড়া (পাবনা)

  ০২ অক্টোবর, ২০২২

প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে ভাঙ্গুরা ইউএনও নাহিদ হাসান খানের প্রচেষ্টা

বিশ্বায়নের যুগে বাড়ছে ভাষা চর্চার গুরুত্ব। ভাষাভাষীর দিক থেকে চীনা, স্পেনীয়, ইংরেজি, আরবির পরেই বাংলার স্থান। বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকেন। বিশ্ব বাজার ব্যবস্থাপনা ও কূটনীতিতে ইংরেজি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও ব্যবহৃত ভাষা। বাংলা ভাষার স্বকীয় ঐতিহ্য বিবেচনায় এর চর্চা ও ব্যবহার বহুরূপে থাকলেও প্রমিত বাংলা ভাষার চর্চা এখনও কাঙ্খিত মাত্রায় নেই। বাংলা ভাষার এই গৌরবান্বিত স্বকীয়তা বিশ্বপরিমণ্ডলে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার যে মৌলিক চর্চার বিস্তৃতি আবশ্যক সেটিও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এ কথাগুলো দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদকে বলছিলেন ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান।

তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে আরোও বলেন, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় মোট ৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। সম্প্রতি ৫৮টি বিদ্যালয় সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। এ সময় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে মত বিনিময় করেছি। মত বিনিময়কালে প্রতীয়মান মনে হয়েছে যে, শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার ও মৌলিক ইংরেজি চর্চার প্রতি অনাগ্রহের দিকটি প্রকট আকারে বিদ্যমান। এক্ষেত্রে শিক্ষকগণ আরো যত্নবান হতে পারেন। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্ব বাজারের সাথে তাল মেলাতে হলে দক্ষ যোগাযোগ স্থাপনের কোন বিকল্প নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের মৌলিক ইংরেজি এবং বাংলা ভাষায় শুদ্ধরূপে কথা বলার চর্চা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরকে প্রথমেই ইংরেজিতে কথা বলার জড়তা ভাঙানোর চেষ্টা করতে হবে। নিজ সম্পর্কে কিছু বলতে পারা, পরিবার, সমাজ, দেশ, ইতিহাস অথবা প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোকে উপস্থাপন করা শিখতে পারলেই নিশ্চিত সুফল পাওয়া যাবে। একটি দেশের ভাষার বৈচিত্র্য এক অনন্য সৌন্দর্য। ভাষায় থাকবে বহুমাত্রিকতা যেমন আঞ্চলিকতা, সাধু, চলিত রূপ কিংবা নাটকীয় ভঙ্গিমা। প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের মৌলিক ভাষা জ্ঞান আহরণের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারলে বৈচিত্র্য ধরে রাখা অনেকটাই সহজ হবে।

প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় শিক্ষার্থীদের সাথে প্রমিত বাংলার পাশাপাশি চিত্তাকর্ষকভাবে ইংরেজিতে কথোপকথনের চর্চা করা যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের যেমন জড়তা কেটে যাবে তেমনি শিক্ষার্থীরা একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে পারবে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি শুধু চর্চার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যয়ন শেষ করেও অনেকেই ইংরেজিতে মৌলিক কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারছেন না ফলে চাকরি পেতেও বেগ পেতে হচ্ছে এমনকি শিক্ষার্থীরা নিজেকে কোথাও উপস্থাপন করতেও সাহস বা আগ্রহ হারাচ্ছেন। বৈচিত্র্যময় এ ভাষার জগতে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে সমৃদ্ধ হতে পারলে সমসাময়িক পেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে থাকতে হবে না। এজন্য প্রাথমিক পর্যায় থেকেই এ চর্চা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ইংরেজি পত্রিকার পাঠ্যাভাস ভালোভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। আমি বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিয়ে দৈনিক পত্রিকা পাঠ চক্র সম্পন্ন করেছি। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করেছি। অল্প বয়স থেকেই তাদের মধ্যে ইংরেজি পত্রিকা পাঠের অভ্যাসটি গড়ে উঠলে ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে জ্ঞান পিপাসা বেড়ে যাবে।

দেশের সকল মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়েই এ কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। পত্রিকা হলো জ্ঞানভাণ্ডার। দেশীয়, আন্তর্জাতিক, রাজনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি এমন কোন বিষয় নেই যা পত্রিকায় বিধৃত হয় না। ফলে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা পত্রিকা পাঠের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে মননশীলতা, বিচক্ষণতা, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা ও নেতৃত্ব গুন গড়ে উঠবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশীয় সংস্কৃতি ও সম্ভাবনাকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা চর্চার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে দৈনিক পত্রিকা পাঠের অভ্যাস ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নাহিদ হাসান খান,ভাঙ্গুরা ইউএনও,ভাঙ্গুড়া উপজেলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close