মো. শাহ আলম, খুলনা

  ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

খুলনার কৃষি বাঁচাতে ভরসা ২৪ নদীর পানি 

ফাইল ছবি

বর্ষকাল শেষ হয়েছে, ভাদ্র মাসও শেষের দিকে, এ পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। চৈত্র-বৈশাখের মতো কৃষি ভূমি শুকিয়ে চৌচির। বর্ষার ধান আমন, পাট, আউশ গ্রীষ্মকালীন সবজি পটল, ঝিঙ্গে, চিচিঙা, টমেটোসহ শাকসবজির খেত শুকাতে বসেছে। এজন্য জেলার কৃষি অর্থনীতি বাঁচাতে নদীর পানি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। সে ক্ষেত্রে পাইকগাছা ও কয়রার নদী বাদ দিয়ে কৃষকের একমাত্র ভরসা ২৪ নদীর পানি।

আষাঢ়-শ্রাবনে বৃষ্টির অভাবে খুলনার কৃষক আমনের আশানুরূপ বীজতলা তৈরি করতে পারেনি। এ মৌসুমে আমন আবাদে দেড় মাস পিছিয়ে পড়েছে। ফলে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে কৃষকের চিন্তা ও ঋণের ভার বেড়েছে।

জেলায় জুন-আগস্ট ৩৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গত বছর ওই তিন মাসে ১ হাজার ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। একে তো বৃষ্টি নেই, তার ওপর চৈত্র ও বৈশাখের মতো দাবদাহ চলছে। তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। স্বস্তির আবহাওয়া পেতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে। জেলার ৯৩ হাজার ১৭০ হেক্টর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আজ পর্যন্ত ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে রোপণ কাজ হয়েছে। ১ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমির পাট পচাতে গিয়ে ছোটোখাটো চৌবাচ্চা ব্যবহার করতে হচ্ছে। ৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমির আউশ মাঠে মারা যাচ্ছে। তরমুজ, কাঁচামরিচ, হলুদ, আদা, কচুরমুখি, মিষ্টিকুমড়া, চিচিঙা ও শীতকালীন অন্যান্য শাকসবজির ভূমি সতেজতা হারিয়েছে।

পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্য, ছোট চৌবাচ্চার মধ্যে পলিথিন দিয়ে ঢেকে ৪৫০ একর জমির পাট পচানো হয়েছে। পাট পচাতে এবার নদীর পানি ব্যবহার হচ্ছে। আমন রোপণের অগ্রগতি কম। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে।

কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প এর জুলাই-আগস্ট মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলার অধিকাংশ নদ-নদী, খাল, গভীর ও অগভীর নলকূপের পানি লবণাক্ততার কারণে আমন আবাদের জন্য নিরাপদ নয়। কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদসংলগ্ন উত্তর বেদকাশি, লালুয়া বাগালী, দক্ষিণ বেদকাশি, জালিরহাট, ঝিলাবাড়ি, মহেশ্বরীপুর, মদিনাবাদ, কয়রা, আমাদি, চাঁদ আলী, পাইকগাছা উপজেলা সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের বাকা বাজার, রাড়–লী, আমতলা, লস্কর, মাহমুদ কাঠি, হরিঢালী, চাঁদখালী বাজার, কপিলমুনি বাজার, ভদ্রা নদী সংলগ্ন দেলুটি, শিবসা নদী সংলগ্ন গড়–ইখালী, বেতবুনিয়া ও শোলাদানা নদীর পানি আমন চাষের উপযোগী নয়। এসব এলাকার পানি লবণাক্ততা বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার প্রকৌশলী দিপংকর বালা তথ্য দিয়েছেন, বাকি সাত উপজেলার রূপসা, আঠারোবেকি, ভৈরব, আত্রাই, চিত্রা, শোলমারি, ভদ্রা, বাগমারা, কাজিবাছা, নারায়ণখালি, ঝপঝপিয়া, গ্যাংরাইল, নলুয়া, পশুর, চুনকুড়ি, ঢাকি, শিবসা, মোংলা, খুদে, লাউডোব, চরানদী, ময়ূর, তলার খাল ও বুড়ি ডাবর খালের পানি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব উপজেলায় উল্লিখিত নদী-খালে ভাটার সময় লবণাক্ততা কমে যায়। ফলে রূপসা উপজেলার তিলক, শিয়ালী, শ্রীফলতলা, দীঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর, কোলা বাজার, তেরখাদা উপজেলার মধুপুর, শাচিয়াদাহ, আজগড়া, ছাগলাদাহ, ফুলতলা উপজেলার আটরা গিলেতলা, ডুমুরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর, শোভনা, গুটুদিয়া, বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালি, গংগারামপুর, দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা, বানিশান্তা, লাউডোব ও পানখালি এলাকার আমন ক্ষেত্রে নদীর নিরাপদ পানি দেওয়া সম্ভব হবে।

সূত্র বলেছেন, এ মৌসুমে জেলায় ২ লাখ ৭২ হাজার টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হলেও অনাবৃষ্টির কারণে উৎপাদন কমবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নদী,কৃষি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close