শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ১৬ আগস্ট, ২০২২

কর্মবিরতি প্রত্যাহার প্রস্তাব চা শ্রমিকদের প্রত্যাখ্যান

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত চা শ্রমিকদের সাথে শ্রম অধিদপ্তরের আলোচনা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ আগষ্ট) সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠক হয়। শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে পরবর্তি বৈঠক পর্যন্ত কর্মবিরতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব শ্রমিকরা প্রত্যাহার করে। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) খালেদ মামুন চৌধুরী এনডিসি।

বৈঠকে অংশ নেন শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গল উপ-পরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোছাম্মৎ শাহীনা আক্তার, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. সাদিকুর রহমান, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন, সহকারী পুলিশ সুপার মো. শহিদুল হক মুন্সি (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল), শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সদ্বীপ তালুকদার, চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নৃপেন পাল, সিলেট ভ্যালি সভাপতি রাজু গোয়ালা, জুড়ি ভ্যালির সভাপতি কমল চন্দ্র বুনার্জি, বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা, চট্টগ্রাম ভ্যালির সভাপতি নিরঞ্জন নাথ প্রমুখ।

বৈঠকে শ্রমিক নেতারা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার বলেন, বর্তমান বাজারে সব ধরনের পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালানো কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়। তারা ৩শ’ টাকা মজুরি নির্ধারণের দাবি জানিয়ে বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে যাবে।

বৈঠকে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আগামী ২৩ আগষ্ট চা মালিক-শ্রমিকদের সাথে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর ত্রি-পাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে। বৈঠকে শ্রমিকদের দাবির পক্ষে তিনি কথা বলবেন। তিনি চা শিল্প ও দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আগামী ২৩ তারিখ পর্যন্ত কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব আসার পরপরই সাধারণ শ্রমিকরা বৈঠকে হট্টগোল শুরু করেন। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষনা দিয়ে বৈঠক থেকে বের আসেন। এসময় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক মুলতবি হয়ে যায়।

পরে চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে কর্মবিরতির আহবান সাধারণ শ্রমিকরা মেনে নেয়নি। ফলে আমরা আন্দোলন ও আলোচনা এক সাথে চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এদিকে, চা শ্রমিক ইউনিয়নের অপর একটি অংশ মঙ্গলবার দুপুরে চা শ্রমিক ইউনিয়ন এডহক কমিটির ব্যানারে ৫’শ টাকা মজুরীর দাবিতে শ্রীমঙ্গলে মানববন্ধন করে। পরে কমিটির সভাপতি ও রাজঘাট ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জির নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি বরাবর বিভিন্ন দাবি দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।

এসময় শ্রমিকনেতা বিজয় বুনার্জি ৩শ’ টাকা মজুরি দাবিতে আন্দোলরত শ্রমিক নেতাদের কমিটিকে মেয়াদত্তীর্ণ ও অবৈধ দাবি করে বলেন, তারা মালিক পক্ষের সাথে আতাঁত করে দুর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই শ্রমিক নেতারা চা মালিকদেও সাথে আতাঁত করে ১২০ টাকা মজুরির কাজ করে অট্টালিকার মালিক হয়ে গেছেন। বিজয় বলেন, গত ১৯ মাস থেকে শ্রমিকদের স্বার্থে কোন দাবি আদায় করতে পারেননি তারা। এখন আবার ৩শ’ টাকা মজুরীর দাবীতে আন্দোলনের নামে কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়েছে।

গত ১৩ আগষ্ট সকাল থেকে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রীমঙ্গলসহ দেশের ১৬৭ টি চা বাগানে শ্রমিকরা একযোগে কর্মবিরতি পালন করছেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কর্মবিরতি,প্রত্যাহার প্রস্তাব,চা শ্রমিক
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close