জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি, নদীপাড়ে আতংক 

দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ৫২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত যা বিপদসীমার মাত্র ৩৫ সেন্টিমিটার কম

উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধির দুইদিন পরে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বন্যা কবলিত এলাকায়।

বন্যার কারণে গত তিনদিন ধরে লালমনিরহাট জেলার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ করে তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আতংক দেখা দিয়েছে নদী পাড়ের লোকজনের মধ্যে।

বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ৫২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয় যা বিপদসীমার মাত্র ৩৫ সেন্টিমিটার কম। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টায় তিস্তার পানি বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌল্লা বলেন, ভোর থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী জানান, বন্যায় জেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত মঙ্গলবার থেকে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি কমলে প্রাথমিক বিদ্যালয় যথারীতি নিয়মে চলবে।

জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাট জেলায় আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিস্তা চরাঞ্চলের ১৫ হাজার পরিবার। হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আতংক দেখা দিয়েছে নদী পাড়ের লোকজনের মাঝে। সেই সাথে সেখানকার লোকজন একটি রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন। গত দুইদিন ধরে তিস্তার ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

এদিকে কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের গজলডোবা ব্যারাজে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকায় ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে জেলা সদর, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও পাটগ্রাম উপজেলায় নদীর তীরবর্তী ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, গড্ডিমারী ইউনিয়নের ৪ ওয়ার্ডে প্রায় দুই হাজার পরিবার গত দুইদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছেন। পরিবারগুলোর তালিকা করা হয়েছে কিন্তু কোন ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়নি।

এদিকে আদিতমারী উপজেলার সলেডি স্পার-২ এলাকায় তিস্তার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা পাড়ের লোকজন অনেকেই বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই তাদের গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে গাদাগাদি করে অবস্থান করেছেন। উপজেলার কালমাটি এলাকার গত দুই দিনে প্রায় ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছেন। পরিবারগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর অবস্থায় রয়েছে।

মহিষখোচা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান মতি বলেন, হঠাৎ করে রাতেই তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা।

তিনি আরো জানান, এবারের বন্যা সবচেয়ে ভয়াবহ, এর আগে আর কখনও এমন বন্যা দেখা দেয়নি। পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে তিন হাজার প্যাকেট ত্রাণ বরাদ্দ করা হয়েছে। তা দ্রুত বিতরণ করা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তিস্তায় পানি,পানিবন্দি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close